ছবি : বহুমাত্রিক.কম
বগুড়া: জেলার শাজাহানপুর উপজেলার শৈলধুকরী কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে টিকা, পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে না নারী ও শিশুরা। ক্লিনিকটির স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর দায়িত্বে অবহেলার কারনে গর্ভবতী নারী, শিশু ও জনসাধারনের ভোগান্তি চরম আকার ধারন করেছে। তথাপি যথাযথ ব্যাবস্থা নিচ্ছেন না স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
সরেজমিনে এলাকাটিতে গেলে সেখানকার ভুক্তভোগী নারী পুরুষ ও সাধারন জনগন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তারা জানান, ক্লিনিকটির স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী মাসে এক থেকে দুই দিন আসে। এসব কারনে এলাকার নারী ও পুরুষরা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা ঠিকমত পাননা। এমন অবস্থা হওয়ায় গর্ভবতী নারী এবং শিশুরা সময়মত টিকা ও পরামর্শ পাচ্ছেন না।
বাধ্য হয়ে এসব সেবা, সর্দিজ্বর ও পাতলা পায়খানা হলেও ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়। এতে করে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আবার অনেক সময় দরিদ্র পরিবারের লোকজন টাকার অভাবে এতোদুর যেতে না পারায় গ্রামের কবিরাজের বাড়ীতে ভীড় জমান। আক্রান্ত হচ্ছে অনাকাংখিত রোগে।
এসব তখ্যের ভিত্তিতে ক্লিনিকটিতে পরপর কয়েক দিন গেলেও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী (এফ ডব্লিউ) কোহিনুর বেগম এবং স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) কে পাওয়া যায়নি। ফলে বেশ কয়েকজন গর্ভবতী নারী ও অনেক মা তাদের শিশু সন্তানকে টিকা দেয়ার জন্য নিয়ে এলেও ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করার পর সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাড়ী ফিরে যেতে দেখাগেছে।
এ প্রসংগে শৈলধুকরী গ্রামের মনোয়ারুলের গর্ভবতী স্ত্রী, মিলনের গর্ভবতী স্ত্রী ও ১০ মাসের শিশু সন্তান মেহজাবিন আকতার (রাহা) এর মা রেশমা খাতুন, আরেক শিশুর মা রোজিনা বেগম জানান, পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য সেবার জন্য বেশ কয়েক দিন এসে ফেরত চলে গেছেন। তাই আজ আবার কষ্ট করে আসতে হয়েছে। জানিনা টিকা পাবো কিনা। না পেলে বগুড়া যাবো। তারা আরও জানান, এ গ্রামে পরিবার পরিকল্পনা পরামর্শ দিতে কেউ আসেনা। ফলে জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়ি, কনডম এসব সামগ্রী ও সেবা না পাওয়ায় শৈলধুকরী গ্রামে অনেক নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েছে। অনেক মা তাদের শিশুদের সময়মত টিকা দিতে না পারায় জেলা ও উপজেলা সদরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কমিউনিটি ক্লিনিকটির সিএইচসিপি মোঃ রাশেদুল ইসলাম জানান, পরিবার পরিকল্পনা সহকারী কোহিনুর বেগম এবং স্বাস্থ্য সহকারী উজ্জল হোসেন মাসে দু-এক দিন এসে শুধু সারা মাসের হাজিরা রেজিষ্টারে স্বাক্ষর করে যায়। আর হাজিরা খাতা দেখেও অনুপস্থিতির প্রমান পাওয়া যায়। দেখাযায়, জুলাই এবং আগষ্ট - ২০১৯ ইং মাসের হাজিরা খাতায় তাদের কোন স্বাক্ষর নেই। ক্লিনিকটির সভাপতি ও আমরুল ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম জানান, এবিষয়ে কর্মকর্তাকে বলা হলেও কোন লাভ হয়না।
গত ৯ আগষ্ট শিশু ও গর্ভবতী নারীদের টিকা দেয়ার নির্ধারিত দিনেও ক্লিনিকটিতে গিয়ে স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারীকে পাওয়া যায়নি। ক্লিনিকটির বারান্দায় বসে থাকা কয়েকজন গর্ভবতী নারী জানান, বেশ কয়েকদিন ক্লিনিকটতে এসে তারা সেবা না পেয়ে ফিরে চলে গেছেন। একই ধরনের অভিযোগ করেন অনেক শিশুর বাবা ও অভিভাবক। তাই তারা প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।
এবিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা সহকারী কোহিনুর বেগম এবং স্বাস্থ্য সহকারী আমিনুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তারা বলেন, কর্মকর্তাদের জানিয়েই তারা কমিউনিটি ক্লিনিকে আসেন না। আর কর্মকর্তা ঠিক থাকলে সব ঠিক।
ক্লিনিকটির এই বেহাল অবস্থার কারন জানতে চাইলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শামীমা আকতার বলেন, এবিষয়ে কিছু জানা নেই, তবে অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। আর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরির্কপনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মোতারব হোসেন বলেন ঘটনাটি জেনেছি। তবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। এদিকে জনস্বার্থ বিবেচনায় রেখে দ্রুত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকার সাধারন জনগণ।
বহুমাত্রিক.কম