Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ২ ১৪৩১, মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪

শতবর্ষী দবিরুল চৌধুরী পেলেন ব্রিটেনের রানি স্বীকৃতি

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১০ অক্টোবর ২০২০

প্রিন্ট:

শতবর্ষী দবিরুল চৌধুরী পেলেন ব্রিটেনের রানি স্বীকৃতি

ব্রিটেনের এক শতবর্ষী বাঙালি যিনি রোজার মাসে পায়ে হেঁটে করোনাভাইরাস তহবিলের জন্য প্রায় সাড়ে চার লক্ষ পাউন্ড চাঁদা তুলেছেন তাকে রানির সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।পূর্ব লন্ডনের বো এলাকার বাসিন্দা দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে অর্ডার অফ দ্যা ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) পদক দেয়া হয়েছে।

"এই দুর্লভ সম্মান পেয়ে আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান বলে মনে করছি," মি. চৌধুরী বলেন, "আমার অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে সবার প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।" রানি এলিজাবেথের জন্মদিন উপলক্ষে ব্রিটেনের সমাজ-জীবনে যারা বিশেষ ভূমিকা রাখেন প্রতিবছর তাদের সম্মান জানানোর রীতি রয়েছে।

চলতি বছর জুন মাসে এই সম্মাননা ঘোষণার পরিকল্পনা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারির সময় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী, অর্থদাতা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তা স্থগিত করা হয়।

গত রমজান মাসের পুরোটা সময় দবিরুল ইসলাম চৌধুরী রোজা রেখে প্রতিদিন তার বাড়ির পেছনের ৮০ মিটার বাগানে পায়ে হেঁটে মোট ৯৭০ বার চক্কর দিয়েছেন।

তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ, ব্রিটেন এবং আরো কিছু দেশের করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত মানুষের সহায়তার জন্য অর্থসাহায্য সংগ্রহ করা।

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন টম মুর তার বাড়ির বাগানে পায়ে হেঁটে স্বাস্থ্য-কর্মীদের জন্য যেভাবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি পাউন্ড চাঁদা তুলেছিলেন তা দেখে উৎসাহিত হয়েছিলেন মি. চৌধুরী।

রোজার মাসের পুরোটা সময় তিনি একইভাবে পায়ে হেঁটে মোট চার লক্ষ ২০ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে এক লক্ষ ১৬,০০০ পাউন্ড দেয়া হয় স্বাস্থ্য বিভাগ এনএইচএস-কে।বাকি অর্থ ৫২টি দেশের ৩০টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করা হয়।

মি. চৌধুরীর এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বিরোধীদল লেবার পার্টির প্রধান স্যার কিয়ার স্টার্মার বলেছেন, "আমাদের সবার কাছে তিনি প্রেরণার এক উৎস।"

বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে দবিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তিনি ব্রিটেনের বাঙালি সমাজ, বয়স্ক সমাজ এবং অভিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে এই ওবিই পদক গ্রহণ করছেন। তিনি জানান, সপ্তাহ দু`য়েক আগে রানির দফতর থেকে ওবিই পদক প্রাপ্তির চিঠি পেয়ে তিনি বেশ অবাকই হয়েছিলেন।

"আমরা যখন কোন একটা ভাল কাজ করি তখন বিশেষ কোন প্রাপ্তির কথা মাথায় রাখি না," বলছিলেন তিনি, "তবু এই স্বীকৃতির জন্য আমি খুবই আনন্দিত।"

আর এই পদক তার জীবনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ কোন পরিবর্তন আনবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে তার কাজ যদি অন্য কাউকে উৎসাহিত করে তবেই তিনি খুশি হবেন বলে জানালেন।

রানির পদক পাওয়ার পর তিনি যেসব দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত সেগুলোর প্রতি মানুষের সমর্থন আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন। তার ছেলে আতিক চৌধুরী বলেন, দবিরুল ইসলাম চৌধুরী তার জন্মস্থান সিলেটের দিরাইয়ে বাংলা ফিমেল অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি চ্যারিটির সাথে যুক্ত।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দরিদ্র, অসহায় ও অনাথ মেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ভরণপোষণ ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে মোট ৩২০ জন মেয়ে রয়েছে। এদের উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে বলে তিনি জানান।

রানির পদক পাওয়ার পরও চৌধুরী পরিবার এনিয়ে কোন আনন্দ-উল্লাস করার সুযোগ পায়নি। আতিক চৌধুরী জানালেন, তার বাবা বয়োবৃদ্ধ বলে মহামারির সময়ে `সেলফ আইসোলেশন`-এ রয়েছেন। ফলে একমাত্র তিনি এবং একজন সেবাকর্মী ছাড়া কারও সাথে তিনি দেখা করতে পারছেন না।

"সিলেব্রশন বলাতে যা করেছি তা হলো ফ্যামিলির যে যেখানে আছে সেখান থেকে সবাই মিলে টেলিফোনে তার সাথে কথা বলেছি, তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি।"

দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম ১৯২০ সালে সিলেটের দিরাইতে। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষার আশায় ১৯৫৭ সালে তিনি বিলেতের পথে পাড়ি জমান। এরপর তিনি সেন্ট অলবান্স শহরে বসবাস করেন এবং সেখানে একজন কমিউনিটি লিডার হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। উনিশশো একাত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়েও তিনি অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করেছিলেন।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer