ঢাকা : নিচ থেকে উপর, উপর থেকে নিচে নামার জন্য আমরা অনেক ধরনের লিফটের ব্যবহার করে থাকি। সাধারণত সিঁড়ি চড়ার কষ্ট কমাতেই লিফটের ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এবার মহাকাশে ভ্রমণের জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে উঠা-নামার যন্ত্র লিফট। অবাক লাগলেও এটাও সত্যি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর এ পরিকল্পনা প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক হাতে-কলমে প্রয়োগ হয়েছে। জাপানের ওবায়াশি কর্পোরেশনের উদ্যোগে লিফটে চড়ে মহাকাশে যাওয়াটা এখন সময়সাপেক্ষ বলেও অনেকে দাবি করছেন।
কল্পবিজ্ঞানের অনেক গল্পেই মহাকাশ থেকে দড়ি ঝুলিয়ে পৃথিবীর বুকে ভিনগ্রহের জীবদের নেমে আসার কথা শুনেছি। অবশ্যই এখানে তেমন কোনও দড়ি ঝুলবে না। আপাতত যা জানা যাচ্ছে, ১০ মিটার লম্বা স্টিল কেবলে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঝোলানো হবে দুটি আল্ট্রা স্মল কিউবিক কৃত্রিম উপগ্রহ।
এই উপগ্রহগুলি তৈরি করেছে জাপানের সিজুকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এই উপগ্রহগুলিকে পাঠানো হবে। তারপরই এই পরীক্ষা শুরু হবে। দুটি উপগ্রহকে জোড়া হয়েছে ১০ মিটার লম্বার স্টিল কেবলে।
এই দুই উপগ্রহের মাঝে রাখা হয়েছে একটি এলিভেটর বা লিফট। এই এলিভেটর চালিত হবে মোটরের দ্বারা। ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় সন্ত্রাস হানার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মহাকাশে এই দুই ছোট কৃত্রিম উপগ্রহের মাঝে এলিভেটর চালায় জাপান। পুরো পরীক্ষাটা নজরবন্দি করতে দুই কৃত্রিম উপগ্রহে বসানো হয়েছে ক্যামেরা।
সিওলকোভস্কিরর ভাবনায় ছিল মহাকাশ থেকে কেবল ঝোলাতে হবে এবং পৃথিবীর দিকে থাকা কেবলের মাথা কোথাও একটা জুড়ে দিতে হবে। এরপর ওই কেবলে বিশেষভাবে তৈরি এলিভেটর ঝুলিয়ে দিলেই হল। তাতে চেপেই মানুষ নাকি পাড়ি দেবেন মহাকাশে। এতে রকেট আর লাগবে না।
ফলে অল্প অর্থ খরচ করেই মানুষ মহাকাশে পৌঁছে যেতে পারবেন। বিনা রকেটে মহাকাশে যেতে সিওলকোভস্কি এমনটাই ভাবনাই ভেবেছিলেন। জাপান এলিভেটরে চাপিয়ে মহাকাশে পাঠাতে যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে তা নিয়ে অবশ্য নানা প্রশ্ন আছে।
কারণ, এই বিশেষ এলিভেটরকে পৃথিবী থেকে মহাকাশে পাঠাতে গেলে কীভাবে তা তৈরি করা হবে তার কোনও মুহূর্তে যে এলিভেটর বানানো হয়েছে তা শুধু মহাকাশের মধ্যেই দিয়েই চলতে সক্ষম। কিন্তু, পৃথিবীর বুকে মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাটিয়ে কীভাবে এটি মহাকাশে যাবে? এ নিয়ে কিছুই জানাতে পারেনি ওবায়াশি কর্পোরেশন।
পৃথিবী থেকে মহাকাশে রকেট ছাড়া কীভাবে মানুষ পাড়ি দিতে পারে তা নিয়ে চিন্তা খেলতো রাশিয়ান বিজ্ঞানী কনস্ট্যান্টিন সিওলকোভস্কি`র। ১৮৯৫ সালে আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা চাক্ষুষ করে তখন থেকেই এ ভাবনাকে নিয়ে নাড়া-চাড়া শুরু করেন তিনি।
তার লক্ষ্য ছিল কীভাবে মহাকাশ থেকে কেবল ঝুলিয়ে পৃথিবী থেকে এলিভেটরে চাপিয়ে মানুকে পাঠানো যায়। এ ভাবনারই বশবর্তী হয়ে কাজ করছে জাপানের ওবায়াশি কর্পোরেশন। যদিও এখন পর্যন্ত এমন হাজার হাজার কিলোমিটার লম্বা কেবল আবিষ্কার হয়নি।
সংগৃহীত