ছবি- বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত সড়কে গাড়ি চাপায় মারা যাচ্ছে অসংখ্য বন্যপ্রাণি। ছয় মাসের ব্যবধানে বিরল প্রজাতির চশমা পরা দু’টি হনুমানের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার বিকাল ৩টায় উদ্যানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ড এলাকায় দ্রুতগামী গাড়ির চাপায় একটি হনুমানের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৃত হনুমানকে উদ্ধার করে মাটি চাপা দিয়েছেন।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকাল ৩টায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মাগুরছড়া গ্যাস ফিল্ড এলাকায় দ্রুতগামী গাড়ির চাপায় একটি বড় চশমাপরা হনুমান ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। খবর পেয়ে স্থানীয় খাসিয়া সদস্য ও বনকর্মীরা মারা যাওয়া হনুমানটিকে উদ্ধার করেন। পরে উর্ধ্বতন কর্র্তপক্ষকে অবহিত করে মৃত হনুমানটিকে ঘটনাস্থলের কাছে মাটি চাপা দেয়া হয়। হনুমান গুলোকে সচরাচর সবস্থানে দেখা যায় না। এগুলো এখন বিরল প্রজাতির। এর পাঁচ মাস আগেও জাতীয় উদ্যানের ভেতরের ওই সড়কে আরও একটি বিরল প্রজাতির হনুমান গাড়ি চাপায় মারা যায়।
অন্যদিকে উদ্যানের ভেতর দিয়ে সড়কপথ ছাড়াও সিলেটের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম রেলপথ ও কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনও প্রবাহিত রয়েছে। ফলে প্রতি বছর রেলপথ, সড়কপথে গাড়ি ও ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে এবং বিদ্যুৎ লাইনে পৃষ্ট হয়ে বানর, সাপ, হনুমানসহ নানা ধরণের প্রাণির মৃত্যু হচ্ছে। কোন কোন সময়ে বনের গভীরে থাকলে সেগুলো সহজে নজরে আসে না। এসব কারণে লাউয়াছড়ায় বন্যপ্রাণির জন্য হুমকির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
লাউয়াছড়া উদ্যানে সাপ নিয়ে গবেষণা করতে আসা শাহরিয়ার সিজার জানান, কয়েক বছর আগে এই বনে দীর্ঘদিন সাপ নিয়ে গবেষণা করেন। তখন বিভিন্ন স্থানে মারা যাওয়া সাপসহ বন্যপ্রাণীর বেশকিছু মৃতদেহ পাওয়া যায়। লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খাসি স্টুডেন্ড ওয়েল ফেয়ার সদস্য সাজু মারছিয়াং বলেন, বনের মধ্যদিয়ে সড়ক ও রেলপথ থাকায় নানা সময়ে প্রাণির মৃত্যু ঘটে। শনিবার বিরল প্রজাতির হনুমানটি গাড়ি চাপায় মারা যাওয়ার খবর পেয়ে বনবিট কর্মকর্তার সাথে এসে মৃত হনুমানটিকে উদ্ধার করে তা সৎকারে মাটি চাপা দিতে সহায়তা করি।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, মৃত হনুমানটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। তবে চাপা দেওয়া গাড়ি সনাক্ত করা যায়নি। এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সংবাদটি খুবই দু:খজনক। এ সড়কের সকল চালকদের বারবার সচেতন করা হয়েছে পাহাড়ি এলাকায় ধীর গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। তারপরও তারা এ সতর্কতা মানছেন না। যে কারণে হনুমানটি গাড়ি চাপায় মারা যায়। তিনি আরও বলেন, গত ছয় মাসে এনিয়ে দু’টি বিরল প্রজাতির চশমাপরা হনুমানের মৃত্যু হয়েছে।
বহুমাত্রিক.কম