Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

লাউড় রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন রক্ষার উদ্যোগ

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:৩৪, ৮ জুলাই ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

লাউড় রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন রক্ষার উদ্যোগ

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

সুনামগঞ্জ : সংবাদমাধ্যমে একাধিক বার ‘লাউড় রাজ্যের রাজ বাড়ির প্রাচীন নিদর্শন দিন দিন বিলুপ্তি পথে’ এমন খবর প্রকাশিত হওয়ায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের লাউড় রাজ্যের রাজ বাড়ির প্রাচীন নিদর্শন রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সেই রাজ বাড়ির শেষ নির্দশনের দেখতে জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম শনিবার নিজেই হলহলিয়া গ্রামে গিয়ে এলাকার সবার সাথে কথা বলে রাজ বাড়ির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং সীমানা চিহ্নিত করে লালা পতাকা টানিয়ে দিয়েছেন। এসময় জেলা প্রশাসকের কার্য্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, সাংবাদিক ও স্থানীয় এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তঘেঁষা উত্তর বড়দল ও দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান একতা বাজার সংলগ্ন অবস্থিত প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী যা বর্তমানে হলহলিয়া নামে পরিচিত। প্রায় ১২০০বছর পূর্বে স্থাপিত নিদর্শন রাজা বিজয় সিংহের রাজ বাড়ি এটি। প্রায় ৩০ একর জমির উপর প্রতিষ্টিত রাজ বাড়িটিতে ছিল বন্দীশালা, সিংহদ্বার, নাচঘর, দরবার হল, পুকুর ও সীমানা প্রাচীর এর কিছু অংশ এখনও বর্তমানে আছে।

উপজেলার অসৎ ভূমি অফিসার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় প্রথমে নামমাত্র মূল্যে লিজ নিয়ে ভবন গুলো ভেঙ্গে বিক্রি করে দেয়। এত দিন দখল করছিল স্থানীয় জনসাধারণ ও প্রভাবশালীরা।

বিভিন্ন সূত্রে আরো জানা যায়, লাউড় রাজ্যের পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বে জৈন্তায়া, উত্তরে কামরুপ সীমান্ত ও দক্ষিণে বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত ছিল লাউড় রাজ্যের সীমানা। এ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেশব মিত্র নামে এক বাহ্মণ।

সম্রাট আকবরের শাসনামলে লাউড় রাজ্যের পাশে খাসিয়াদের আক্রমণের শিকার হলে কিছু দিনের জন্য এর রাজধানী বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে স্থানান্তারিত হয়েছিল। পরে লাউড় রাজ্যের গোবিন্দ সিংহ তা পুনুরুদ্বার করে আবার রাজধানী স্বস্থানে পুনঃস্থাপন করেন। ঐতিহাসিক হান্টারের মতে, ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মোগল অধিকারের পর লাউড় প্রথম বারের মতো তার স্বাধীনতা হারায় এবং মোগলদের বশ্যতা শিকার করে নিয়ে বসবাস করে।

এই বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ একাধিকবার প্রকাশিত হলে গত বছরের ২০ ও ২১ নভেম্বর ২০১৭ সালে মাঠ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেন অধ্যাপাক ডঃ অসিত বরণ পালের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ।

তখন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপাক ডঃ অসিত বরণ পাল বলেছিলেন, এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কথা বলে সামনের দিকে অগ্রসর হবো। এটি সংরক্ষণ করা হলে কালের স্বাক্ষী প্রাচীন নিদর্শনটুকু রক্ষা হবে সেই সাথে নতুন প্রজন্ম লাউড় রাজ্যের আরও ইতিহাস জানতে পারবে।

সমাজ সেবক মাসুক মিয়া বলেন, অযত্ন-অবহেলা, রক্ষানাবেক্ষণ ও সংস্কার না করার ফলে ঐতিহাসিক লাউড় রাজ্যের শেষ নির্দশন রাজ বাড়ির শেষ নির্দশন টুকুু বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে ছিল। রক্ষা করা খুবেই প্রয়োজন ছিল। জেলা প্রশাসক এসছেন তাই এর একটা সুষ্ট সমাধান হবে। লাউড় রাজ্যের রাজধানী হলহলিয়া টাংগুয়ার হাওর, বারেকটিলা, যাদুকাটাসহ অন্যান্য দৃষ্টি নন্দন স্থানের মত একটি আকর্ষনীয় পযটন কেন্দ্র হিসাবে প্রকাশ পাবে।

উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, ইনকনের লোকজন আমাকে বলেছিল তারা সংস্কার করবে তারা সহযোগীতা করার জন্য আমাকে বলেছিল। আমিও সর্বাত্মক সহযোগীতা করব বলেছিলাম। তারাও আর যোগাযোগ করে নি এভাবেই ছিল। জেলা প্রশাসক এসেছেন এবার এই এলাকা ও রাজবাড়ির শেষ নির্দশন রক্ষা হবে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূনেন্দ্র দেব জানান, লাউড় রাজ্যের হলহলিয়ায় স্থাপিত রাজ বাড়ির শেষ নির্দশন টুকু রক্ষানাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, এমনিতেই অনেক লোকজন এখানে আসে রাজ বাড়ি শেষ অংশটুকু দেখার জন্য। হলহলিয়া লাউড় রাজ্যের রাজ বাড়িটির শেষ নির্দশন টুকু রক্ষনাবেক্ষণ ও সংস্কার করা হলে তাহিরপুরে আরেকটি পর্যটন স্পট সৃষ্টি হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম বলেন, লাউড় রাজ্যের রাজ বাড়ির প্রাচীন শেষ কিছু নিদর্শন এখনও রয়েছে তা রক্ষনাবেক্ষণের জন্য সব রখম চেষ্টা করা হবে। কোন বসতি উচ্ছেদ করা হবে না। যাদের বসত ভিটা নেই ভূমিহীন তারা (খাস জমি) আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer