Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

রায়পুরায় আধিপত্য নিয়ে পৃথক সংঘর্ষে নিহত ৩

নরসিংদী সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২২:১৩, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

আপডেট: ০০:০৩, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

প্রিন্ট:

রায়পুরায় আধিপত্য নিয়ে পৃথক সংঘর্ষে নিহত ৩

নিহতদের স্বজনদের আহাজারি

নরসিংদী : নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পৃথক সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী গ্রামে এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একই উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পৃথক সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ৫০জন আহত হয়েছেন।

নিহতরা হলো, বাঁশগাড়ী বালুয়াকান্দি এলাকার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ছেলে তোফায়েল হোসেন (১৮), নিলক্ষা ইউনিয়নের বীরগাঁও এলাকার উসমান মিয়ার ছেলে সোহরাব হোসেন (৩০) ও গোপীনাথপুর এলাকার মৃত সোবহান মিয়ার ছেলে মো. স্বপন মিয়া (২৫)।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল হক ও সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শাহেদ সরকারের সমর্থকদের বিরোধ চলে আসছিলো। এ বিরোধের জের ধরে গত ৩ মে মাসে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক। সিরাজুল হকের হত্যার পর থেকে প্রতিপক্ষের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় শাহেদ সরকার সমর্থকরা।

দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর শুক্রবার সকালে শাহেদ সমর্থকরা এলাকায় ফিরলে প্রতিপক্ষ সিরাজুল হকের সমর্থকরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুইপক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। এরমধ্যে ৪ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তোফায়েল হোসেন নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। তোফায়েল সম্প্রতি বাঁশগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচনী পরীক্ষা শেষে ফরম পূরণ করেছিল। সে শাহেদ সরকারের সমর্থক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এছাড়া গুরুতর আহতাবস্থায় সুমন মিয়া (২৬), মামুন মিয়া (২৫) ও সুমন মিয়া (২৬) নামের ৩ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে একই উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নেও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তাদের সমর্থকরা আবার বাঁশগাড়ি এলাকায় বিভিন্ন পক্ষকে সমর্থন দিয়ে সংঘর্ষে অংশ নিয়ে থাকে। এরমধ্যে নিলক্ষা এলাকার তাজুল ইসলামের সমর্থকরা বাঁশগাড়ী এলাকার সিরাজুল হক সমর্থক এবং আবদুল হকের লোকজন শাহেদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থকরা বাঁশগাড়ীর সংঘর্ষের ঘটনায় অংশ নেওয়ার পর নিজ এলাকায় ফিরে প্রতিপক্ষ আবদুল হকের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে প্রতিপক্ষের লোকজন প্রতিহত করতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

সংঘর্ষটি দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রথমে তাজুল ইসলামের সমর্থক সোহরাব হোসেন ও পরে আবদুল হক সরকারের সমর্থক স্বপন মিয়া নামের দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হয় কমপক্ষে ৫০ জন। এরমধ্যে ১৫/১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।

এ ব্যাপারে নিলক্ষা ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘একপক্ষ অতর্কিতে তাদের প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করে। পরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে উভয়পক্ষের একজন করে মোট দুজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫০ জন।’

নিলক্ষা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘নিহতদের লাশ রায়পুরা থানা হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ময়না তদন্তের জন্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। বাঁশগাড়ীর সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরেই তাজুল চেয়ারম্যানের সমর্থকরা আবদুল হক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তবে আজকের সংঘর্ষটি পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না। হঠাৎ করেই বাঁধে এই সংঘর্ষ।’

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer