ছবি: সংগৃহিত
ঢাকা: রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি জেএমবির শীর্ষ নেতা মো. শরিফুল ইসলাম খালিদ ওরফে রাহাত ওরফে সাইফুল্লাহ ওরফে নাহিদ ওরফে আবু সোলাইমান (২৭) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রফেসর রেজাউল করিমকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
জেএমবির আমিরের নির্দেশে তিনি অধ্যাপক রেজাউলকে হত্যা করেছেন বলে তিনি র্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন। শরিফুল রাবি প্রফেসর রেজাউল করিম হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাকে শুক্রবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল থেকে র্যাব অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে।
কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার দুপুরে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুল ইসলাম। তিনি রেজাউল করিমকে হত্যার এক মাস আগ থেকে তার ওপর নজর রেখেছিলেন। জেএমবির আমির ও সংগঠনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অধ্যাপক রেজাউলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্থানীয় জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে রেকি ও তথ্য উপাত্ত যেমন ঠিকানা, ফোন নম্বর সংগ্রহ, অবস্থান গতিবিধি ইত্যাদি নজরদারি করা হয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন শরিফুল ইসলাম।
মুফতি মাহমুদ বলেন, শরিফুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, স্থানীয় জঙ্গি রিপন আলী ওরফে রকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকদের ক্লাসের রুটিন মোবাইলে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে শরিফুলকে দিয়েছিলেন। রেজাউল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল সংগ্রহ করে জঙ্গি ওসমান মিলু ও মাসকাওয়াত ওরফে আব্দুল্লাহ।
মুফতি মাহমুদ আরও জানান, অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেএমবির শীর্ষ নেতা শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ড হয়। হত্যাকাণ্ডের পরদিন সকালে শরিফুল ঢাকায় চলে আসেন এবং আমিরের নির্দেশে ভারতে পালিয়ে যান।
শরিফুল ইসলাম রাজশাহীর বাগমারায় ১৯৯১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে এসএসসি এবং রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ প্লাস গ্রেডিং পেয়েছেন। এরপর ২০১০-২০১১ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শরিফুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নকালীন আহসান হাবিব ওরফে শোভনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে যুক্ত হন।
তিনি জানান, শরিফুল ইসলাম ছিলেন গুলশান হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারীদের একজন। তিনি পরিকল্পনা ছাড়াও প্রত্যক্ষভাবে অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ কাজে জড়িত ছিলেন।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণের পর আত্মগোপনে চলে যান।
এসময় তার সঙ্গে অপর জঙ্গি নেতা মাম্নুর রশিদ রিপনও তার সঙ্গে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তারা ৩৯ লাখ টাকা হলি আর্টিজান হামলায় প্রেরণ করেন।
শরিফুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হলেও অধ্যাপক রেজাউলের সঙ্গে তার কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল না, শুধুমাত্র আমির ও সাংগঠনিকভাবে টার্গেট কিলিংয়ের অংশ হিসেবে তাকে হত্যা করা হয়।
২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকায় অধ্যাপক রেজাউল করিমকে নিজের বাড়ির পাশে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়।