ছবি: বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজার :রবীন্দ্রনাথ ও মনিপুরী সংস্কৃতির শতবর্ষের সেতুবন্ধনে স্মরনোৎসব করল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মনিপুরী সম্প্রদায়। বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরনোৎসবে ৬ নভেম্বরকে ‘মনিপুরী নৃত্য দিবস’ ঘোষণা করেছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা সদরে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় মাধবপুরস্থ ললিতকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়।
মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতি, মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি, মণিপুরী যুবকল্যান সমিতি, মনিপুরী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ও মণিপুরী থিয়েটারের যৌথ আয়োজনে আলোচনা সভায় মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতি ৬ নভেম্বরকে ‘মনিপুরী নৃত্য দিবস’ ঘোষনা করেন। র্যালীতে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক ও জেলা পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. হেলাল উদ্দিন অংশগ্রহণ করেন।
মণিপুরী সমাজ কল্যান সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ মোহন সিংহের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক কমলাকান্ত সিংহের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, লেখক ও গবেষক ড. রঞ্জিত সিংহ, আহমদ সিরাজ, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্র কুমার সিংহ, ললিতকলা একাডেমির গবেষণা কর্মকর্তা প্রভাষ সিংহ, নাট্য নির্দেশক শুভাশিষ সমির ও সাংবাদিক পিন্টু দেবনাথ প্রমূখ। সভা শেষে মণিপুরী ললিতকলার শিল্পীরা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্মরণে রবীন্দ্রসংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
সভায় আলোচকরা বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৯ খ্রীঃ এর নভেম্বর মাসে সিলেটে বেড়াতে এলে প্রথমে মণিপুরী হস্তশিল্প ও এর কারুকাজ দেখে অভিভূত হন। পরে তিনি জানতে পারেন যে, এই হস্তশিল্পের কাপড় মণিপুরীদের তৈরী। তিনি সিলেটের মণিপুরীপাড়ার মাছিমপুরে গিয়ে মণিপুরী রাখালনৃত্য দর্শন করে মুগ্ধ হয়ে রাসলীলা নৃত্য দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কবিগুরু মণিপুরী রাসনৃত্যর সাজসজ্জা, সাবলীল ছন্দ ও সৌন্দর্যে বিমোহিত হন এবং কলকাতার শান্তিনিকেতনে ছেলেমেয়েদের নৃত্য শেখানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। পরবর্তীতে কলকাতার শান্তিনিকেতনে প্রথমবারের মতো মণিপুরী নৃত্য ব্যবহার করে মঞ্চস্থ হয় "নটীর পুজা" ও "ঋতুরাজ"।
পরে কবিগুরুর আমন্ত্রণে যোগ দেন মণিপুরী রাসনৃত্যের গুরু মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের নীলেশ্বর মুখার্জ্জী। রবীন্দ্রসংগীতের গভীরতা ও কাব্যময়তার সাথে মণিপুরী নৃত্যের সাবলীল গতি ও বিশুদ্ধ নান্দনিকতার মধ্যে বিশেষ সামঞ্জস্য থাকায় শান্তিনিকেতনে উচ্চাঙ্গ নৃত্যধারার মধ্যে মণিপুরী নৃত্য সর্বাপেক্ষা সমাদৃত হয়। এরপর বাংলাদেশে এবং সারা ভারতে মণিপুরী নৃত্যের প্রচার ও প্রসার ঘটে। কবিগুরুর ছোঁয়ায় মণিপুরী নৃত্য সারাবিশ্বে পরিচিত লাভ করে।
বহুমাত্রিক.কম