Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

যে কারণে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:০৬, ১১ অক্টোবর ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

যে কারণে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে

ঢাকা : পৃথিবীর দুই অংশের মানুষ এখন তিনটি বড় ধরণের ঝড়ের মোকাবেলা করছে।ভারতের উডিষ্যা রাজ্যে বৃহস্পতিবার ভোরে আঘাত করেছে ঘূর্ণিঝড় তিতলি।

ভারতের ঠিক অন্যপাশের উপকূলে, আরব সাগরের তীরে আঘাত করতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন লুবান। প্রায় ৪০ বছর পর ভারতের একই অংশে একই সঙ্গে দুইটি সাইক্লোন আঘাত করতে যাচ্ছে।

তবে বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৃষ্টিপাত হলেও বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় তিতলির আসার সম্ভাবনা অনেক কম। সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর আর নদীবন্দরগুলোকে দেখাতে বলা হয়েছে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত।

অনেকটা একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছড়ে পড়তে শুরু করেছে হ্যারিকেন মাইকেল।

সবমিলিয়ে এ বছরের দশ মাসেই বিশ্বের দেশগুলোয় ছোট বড় মিলিয়ে ৫০টির বেশি ঝড়ের তৈরি হয়েছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে হ্যারিকেন ফ্লোরেন্স, হার্ভে, পুয়ের্তো রিকোয় মারিয়া, ফিলিপাইনে সুপার টাইফুন ম্যাঙ্গখুট, হাওয়াই দ্বীপে ঝড় লেন, যুক্তরাষ্ট্রে ঝড় আলবার্তো,সলোমন দ্বীপে লিলুয়া সাইক্লোন, ফিজিতে সাইক্লোন জোসি ছাড়াও অনেকগুলো ভূমিকম্প, বনের আগুন, ভূমি ধসে এবং বন্যার ঘটনা ঘটেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরের বাকি সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতেই সাত থেকে ১১টি সাইক্লোনের তৈরি হতে পারে, যার মধ্যে তিন থেকে চারটি হবে বড় ধরণের।

কিন্তু কেন এত বেশি ঝড়ের তৈরি হচ্ছে?
একই সময়ে এতো বেশি ঝড়ের জন্য বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা।আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ঝড় বেশি হচ্ছে। এমনকি একই সময়ে বিশ্বে একাধিক ঝড়েরও তৈরি হচ্ছে।

বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং এল নিনোর নিরপেক্ষতার কারণে সাগরের পরিবেশগুলোও অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। যেমন ভারত মহাসাগরে স্বাভাবিকের তুলনায় তাপমাত্রা একদুই ডিগ্রি বেশি উষ্ণ ছিল।

এসব কারণে এখানে দ্রুত ঝড়গুলো দ্রুত তৈরি হচ্ছে। তার অনেকগুলো পরবর্তীতে বড় হয়ে যাচ্ছে, অনেকগুলো আর বাড়ছে না।তিনি বলছেন, যতদিন পর্যন্ত এসব সাগরের উষ্ণতা যথেষ্ট মাত্রায় নীচে নেমে না আসবে,ততদিন এসব ঝড়ের দেখা পাওয়া যাবে।

``সাইক্লোনের পরিবেশ তৈরির একটি বড় কারণ সাগরের ওপরের তাপমাত্রা ২৬.৫ বা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকা। এখন বিশ্বের অনেক এলাকার সমুদ্রেই এমনটা দেখা যাচ্ছে। ``

তবে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, নভেম্বর মাস থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে দুর্বল এল নিনোর তৈরি হতে পারে। এল নিনো তৈরির জন্য তারা ৭৫ শতাংশ সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন।

মি. মান্নান বলছেন, এল নিনো তৈরি হলে বিশ্বের অন্যান্য এলাকায় সাগরের উষ্ণতা কমে যাবে। তখন এসব সাগরে ঝড়ের প্রবণতাও কমবে। তবে সেটি বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধিকে আবার প্রভাবিত করবে।

``গত বছর ঝড় কম হয়েছে। এবার আবার বেশি হচ্ছে। এভাবে আবার একটি মৌসুম আসবে, যখন দেখা যাবে ঝড়ের প্রবণতা অনেক কমে যাবে।।"

"বিশেষ করে এল নিনো (পেরুর উপকূলে সমুদ্রের উপরের পানি গরম হয়ে যাওয়া, যা সেখানে মেঘ সৃষ্টি আর প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়, দুই বা সাত বছর পরপর তৈরি হয়) তৈরি হলে সেটি বিশ্বের অন্যান্য এলাকায় একযোগে ঝড়ের প্রবণতা অনেক কমে যাবে,`` তিনি বলছেন।

কিভাবে ঝড় তৈরি হয়?
সমুদ্রের উষ্ণ পানির কারণে বায়ু উত্তপ্ত হঠাৎ করে এসব ঝড়ের তৈরি হয়।

তখন তুলনামূলক উষ্ণ বাতাস হালকা হয়ে যাওয়ার কারণে ওপরে উঠে যায়, আর ওপরের বাসা ঠাণ্ডা বাতাস নীচে নেমে আসে। এসে নীচের বায়ুমণ্ডলের বায়ুর চাপ কমে যায়। তখন আশেপাশের এলাকার বাতাসে তারতম্য তৈরি হয়।

সেখানকার বাতাসের চাপ সমান করতে আশেপাশের এলাকা থেকে প্রবল বেগে বাতাস ছুটে আসে। আর এ কারণেই তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়ের।

এরফলে প্রবল বাতাস ও স্রোতের তৈরি হয়। যখন এসব এই বাতাসের ভেসে ঝড়টি ভূমিতে চলে আসে, তখন বন্যা, ভূমিধ্বস বা জলোচ্ছ্বাসের তৈরি করে।

ঝড়ের নামকরণ কিভাবে হয়?
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে।যেমন ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার আটটি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান।

এসব দেশের প্রস্তাব অনুসারে একটি তালিকা থেকে একটির পর একটি ঝড়ের নামকরণ করা হয়।

যেমন তিতলির নামকরণ করেছে পাকিস্তান। এর পরের ঝড়টির নাম হবে গাজা, থাইল্যান্ডের প্রস্তাব অনুসারে।

বিবিসি বাংলা 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer