চীনের স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তাঁর ১৯ ঘণ্টার সফরে ঢাকাকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক খেলার কৌশল হলো প্রথমে সমস্যা সৃষ্টি করা; এরপর তা নিজের ভূরাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা। যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। সবার উচিত, যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে সতর্ক থাকা ও বর্জন করা।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বিবরণী থেকে এই তথ্য জানা গেছে। ওয়াং ই গত শনিবার বিকেলে ঢাকায় আসেন। পরদিন সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকা ছাড়েন। বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশ ‘এক চীন’ নীতির প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
ওয়াং ইর ঢাকা সফরে তাইওয়ান নিয়ে তাঁর বার্তা লিখিতভাবে প্রকাশ করেছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, ওয়াং ইং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিত্তিহীন যুক্তির দিকে’ ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তিনটি বড় ভুল করেছে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। চীনের বারবার পরামর্শ এবং সতর্কতা উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র তার তৃতীয় শীর্ষ ব্যক্তির তাইওয়ান সফরের আয়োজন করে।
ওয়াং ই বলেন, ‘তাইওয়ান চীনের ভূখণ্ড, মার্কিন ভূখণ্ড নয়। মার্কিন পক্ষ নিজেও এই বিষয়ে জনসমক্ষে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; কিন্তু এর পরও যুক্তরাষ্ট্র যে কাজ করেছে, তা চীনের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন। ’
‘যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ভুল’ প্রসঙ্গে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামী বাহিনীকে’ সমর্থন দিয়েছে। যেকোনো দেশ তার জাতীয় ঐক্য রক্ষা করে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে বেপরোয়া কাজ করতে দেয় না।
ওয়াং ই বলেন, তাইওয়ান অঞ্চলের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি তাদের দলীয় কর্মসূচিতে ‘স্বাধীনতার’ প্রত্যাশাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ক্রমবর্ধমান ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’ এবং ‘দুই চীনের’ বা ‘এক চীন, এক তাইওয়ান’-এর মতো মিথ্যা ধারণা তৈরি করার জন্য সম্ভাব্য সব উপায়ে চেষ্টা করেছে।
ওয়াং ই বলেছেন, ‘প্রকাশ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে মার্কিন স্পিকার নিজেকে চীনা জনগণের শত্রুতে পরিণত করেছেন। ’
‘যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় ভুল’ প্রসঙ্গে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে তাইওয়ান প্রণালিজুড়ে শান্তি নষ্ট করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের খেলার কৌশল হলো, প্রথমে একটি সমস্যা তৈরি করা এবং তারপর সেই সমস্যাটিকে তার নিজস্ব কৌশলগত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ব্যবহার করা। ’
যুক্তরাষ্ট্র তার পুরনো কৌশলের ধারাবাহিকতায় তাইওয়ানে ন্যান্সি পেলোসির সফর আয়োজন করেছে বলে চীন মনে করে। ওয়াং ই বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি জোরদারের সুযোগ নিচ্ছে। এ বিষয়ে সবার সতর্ক থাকার এবং সব পক্ষ থেকে বর্জন করা উচিত। ’
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করাই আদর্শ নিয়ম। যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে তা লঙ্ঘন করেছে। ওয়াং ই এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐকমত্যের ওপর জোর দেন।
এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে চার দেশীয় নিরাপত্তা জোট কোয়াডের ব্যাপারে চীনের উদ্বেগ আছে। কোয়াড সম্প্রসারিত হলে বাংলাদেশ যদি তাতে যোগ দেয় তাহলে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হবে বলে বেইজিং আগেই ঢাকাকে সতর্ক করেছে।