Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

যশোরে মুখ থুবড়ে পড়েছে হত দরিদ্রদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি

কাজী রকিবুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

প্রিন্ট:

যশোরে মুখ থুবড়ে পড়েছে হত দরিদ্রদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি

যশোর : যশোরে মুখ থুবড়ে পড়েছে হত দরিদ্রদের জন্য সরকারের দেয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় বিক্রি করা আটা’র ডিলারের কাছ থেকে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এখানে যোগদানের পরপরই সংশ্লিষ্ট বিভাগে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সরকারিভাবে যশোর শহরের ১১টি পয়েন্টে ভর্তুকি মূল্যে আটা বিক্রি করা হচ্ছে। যা ২০১১-২০১২ অর্থবছর থেকে চলমান রয়েছে। এ কাজের জন্য ১১ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। ডিলাররা হলেন, ৩ নং ওয়ার্ডে শহরে ঘোপ সেন্ট্রাল রোডে সাবেক এমপি আলী রেজা রাজুর মোড়ে রবিউল ইসলাম, ৪ নং ওয়ার্ডে পুরাতন কসবা ফাতিমা হাসপাতাল এলাকায় হাসান ইকবাল, ৫ নং ওয়ার্ডে ধর্মতলা এলাকায় রোকন ব্যাপারী, ১ নং ওয়ার্ডে বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় আবুল কাশেম, পৌরসভার বাইরে ঝুমঝুমপুর এলাকায় নিতাই চন্দ্র সাহা, ২ নং ওয়ার্ডে বড়বাজার আটাপট্টি এলাকায় শ্যামল কুমার সাহা, ৭ নং ওয়ার্ডে রেলগেট এলাকায় বাহাউদ্দীন, ৭ নং ওয়ার্ডে চারখাম্বা মোড়ে তোতা মিয়া, ৮ নং ওয়ার্ডে বেজপাড়া তালতলা মোড়ে গোলাম মোস্তফা, ৯ নং ওয়ার্ডে বকচর এলাকায় সালাউদ্দীন ও ৬ নং ওয়ার্ডে মুজিব সড়কে লাইজুজামান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় বিক্রি করা আটা সরকারী যে নির্দেশনা রয়েছে তা নাম ওয়াস্তে চলছে চলছে মাত্র। জেলা খাদ্য বিভাগ থেকে তদারকি কমিটি গঠন করে এগুলো দেখভাল করার কথা থাকলেও কোন প্রতিনিধির দেখা মেলে না। তবে মাস্টাররোলে স্বাক্ষর ঠিকই আছে। বিশ্বস্ত সুত্রের দাবী, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুর রহমান রেট বেঁধে এসব ডিলারের কাছ থেকে মাসিক উৎকোচ গ্রহণ করছেন। ওই কর্মকর্তার উৎকোচের চাহিদা পুরণ করতে ডিলারেরা দরিদ্র মানুষের মাঝে আটা বিক্রি করতে পারছেন না। উৎকোচ আদায়ে সার্বিক সহযোগীতায় আছেন দীর্ঘদিন একই চেয়ারে বসে থাকা কতিপয় সহকারীবৃন্দ।

ডিলার সামান্য আটা দরিদ্রদের কাছে বিক্রি করে বাকিটা কালো বাজারে বিক্রি করছেন। ফলে দরিদ্রদের সরকারের খাদ্য সহায়তা দেয়ার মহৎ উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে। করোনাকালে চালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আটা’র প্রতি নিন্ম আয়ের মানুষ ঝুঁকছে । সরকারি বরাদ্দ আছে কিন্তু নগনের ভাগ্যে সামন্যই জুটছে জেলা কর্মকর্তার দুর্নীতির কারনে।

খাদ্য বিভাগ জানায়, শহরের ১১ জন ডিলারের মধ্যে থেকে প্রতিদিন পাঁচজনকে পাঁচ মেট্রিক টন বা পাঁচ হাজার কেজি করে আটা বরাদ্দ দেয়া হয়। শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ছয়দিন চলে বিতরণ কার্যক্রম। এ হিসেবে প্রতি মাসের ছাব্বিশ দিনে ডিলাররা পেয়ে থাকেন ১৩০ মেট্রিক টন বা এক লাখ ত্রিশ হাজার কেজি আটা। যা তাদের পৌর এলাকায় গরিবদের মাঝে ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার নিয়ম রয়েছে। অভিযোগকারীরা বলেন, একজন এক সাথে পাঁচ কেজির বেশি আটা একবারে কিনতে পারবেন না। কিন্ত এ ক্ষেত্রে ডিলাররা কোন নিয়ম নীতি মানছেন না। ১১ জন ডিলারের অধিকাংশই পর্যায়ক্রমে ৯টি ওয়ার্ডে সপ্তাহে একদিন করে এ আটা বিক্রি করছেন। বাকি আটা তারা যশোর বড় বাজারের আটা পট্টির পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

তথ্যসূত্র মতে, ডিলাররা মিল থেকে বস্তায় কোন সীল ছাড়াই আটা আনছেন। এতে বহুবিধ সুবিধা। কোনটি সরকারি আর কোনটি প্রাইভেট চিহ্নিত করা যায় না। ফলে ২/১ বস্তা লাইনে বিক্রি করেই বলা হচ্ছে সরকারি আটা শেষ। একই আটা প্রাইভেট নামে একই দোকানে দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। খাদ্য অধিদপÍরের নিদের্শনা রয়েছে, সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের সীল যুক্ত বস্তায় মিল থেকে আটা আনতে হবে। এছাড়া কোন ডিলার তার দোকানে আলাদাভাবে ওই আটা রাখতে কিংবা বিক্রি করতে পারবে না। কিন্তু যশোরে তার কোনটাই মানা হচ্ছে না।

শহরের চারখাম্বা মোড়ে তোতা মিয়া সপ্তাহে একদিন এ আটা বিক্রি করেন। সোমবার নির্ধারিত দিন সকাল ৯টা থেকে বিক্রি শুরু করে দুপুর ১২টায় শেষ করে দেন। কিন্ত তার বরাদ্দকৃত এক মেট্রিক টন বা এক হাজার কেজি আটা তিন ঘণ্টায় কিভাবে শেষ হয় সেটিই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর তিনি কাউকে আটা দেন না। অবশ্য ১২টার পর থেকে তিনি একইস্থানে ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রি শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, লাইনে দাঁড়ানো মানুষের সঙ্গে তিনি খারাপ আচরণ করতেও দ্বিধা করেন না। যা নিয়ে তার বিরুদ্ধে অনেকের ক্ষোভ রয়েছে।

একই চিত্র ৬ নং ওয়ার্ডের ডিলারের দোকানের তিনি কখন শুরু করলেন আর কখন শেষ করলেন ক্রেতা সাধারন বুঝতেই পারছেন না। এ কেন্দ্র থেকে অন্য ওয়ার্ডের গ্রহীতাগণকে নিরুৎসাহীত করা হয়,আটা না দিয়ে নির্ধারিত ওয়ার্ডের ডিলারের দোকানে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। ওএমএস কার্যক্রমে এধরনের কোন নির্দেশনা কেউ দেখাতে পারে নাই। ৮ নং ওয়ার্ডের ডিলারের দোকানের চিত্র একই। ৭ নং ওয়ার্ডের অবস্থা সমপর্যাযে। ৭ নং ওয়ার্ডে ২ জন ডিলার বাহাউদ্দীন ও তোতা মিয়া। কিসের ভিত্তিতে এক ওয়ার্ডে দুইজন ডিলার তার কোন সুদুত্তর মিলছে না। অভিযোগ রয়েছে, এই ওয়ার্ডে জেলা কর্মকর্তার অনৈতিকার চাহিদাও দ্বিগুন। ফলে কোন কারণ ছাড়াই এই ওয়ার্ডে দুইজন ডিলারশিপ দেয়া হয়েছে।

একই সাথে পৌর এলাকার বাইরে ১ জন ডিলার রয়েছে। ঝুমঝুমপুর বিসিক এলাকায় যার বিক্রয় কেন্দ্র। অধিদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে ,পৌর সভার মধ্যে এ আটা বিক্রির কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। কিন্তু ঝুমঝুমপুর সদর উপজেলার মধ্যে অবস্থিত। সেক্ষেত্রে পৌর এলাকার বাইরে বিক্রয়কেন্দ্র থাকায় নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুর রহমান বলেন, এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। বস্তায় খাদ্য অধিদপ্তরের কোন সিল নেই কেন ও পৌর এলাকার বাইরে কেন আটা’র ডিলার রয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা তার কোন সুদুত্তর দিতে পারেননি।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer