Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৯ ১৪৩১, মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪

যশোরে তাবলিগ জামায়াতের তিন দিনের জোড় ইজতেমা

কাজী রকিবুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:০৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রিন্ট:

যশোরে তাবলিগ জামায়াতের তিন দিনের জোড় ইজতেমা

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

যশোর : লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির আমিন আমিন ধ্বনির মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে যশোরের তাবলিগ জামায়াতের উলামা মাশায়েখ ও পুরাতন সাথীদের তিন দিনের জোড় ইজতেমা। মোনাজাতে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও মুক্তি কামনা করা হয়। শনিবার বেলা ১১ টা ৩৮ মিনিটে লক্ষাধিক মুসল্লির উপস্থিতিতে আখেরী মোনাজাত শুরু হয়ে ১১ টা ৫৫ মিনিটে শেষ হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ভারতের মুম্বাইয়ের তাবলিগের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি মাওলানা মো. আব্দুর রহমান।

বিশ্ব ইজতেমার আদলে এবছর যশোর উপশহর ডিগ্রি কলেজ মাঠ ও তৎসংলগ্ন আশপাশের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় তাবলিগের এ জোড় ইজতেমা। ইজতেমায় দেশের ২১ জেলার উলামা ও তাবলিগের পুরাতন সাথীরা ছাড়াও হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেন। যে কারণে ইজতেমার জন্য নির্ধারিত ৬ টি মাঠ ছাপিয়ে উপশহর পার্কসহ বিভিন্ন সড়ক ও পার্শ্ববর্তী সড়কে হাজার হাজার মুসল্লি অবস্থান নেন আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে।

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের এ জোড় ইজতেমার শনিবার ছিল শেষ দিন। যে কারণে এদিন নতুন করে হাজার হাজার মুসুল্লি মোনাজাতে অংশ নিতে জড়ো হন। ফজরের নামাজের পরপরই আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে দলে দলে আসতে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। পুরুষের পাশাপাশি মোনাজাতে অংশ নিতে হাজার হাজার মহিলারও আসেন ইজতেমা ময়দানের আশেপাশের বাসা-বাড়িতে। মহিলাদের জন্য পৃথক কোন ব্যবস্থা না থাকায় তারা উপশহর এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে, রাস্তার পাশে গাছ তলায় অবস্থান নিয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। ইজতেমা মাঠের আশপাশের অধিকাংশ বাড়ির আঙিনায় ও খোলা জায়গায় কাপড় টাঙিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়। এসব স্থানে বসে মহিলারা আল্লাহর দ্বীনের কথা শোনেন।

ইজতেমার জিম্মাদার মাওলানা নাসিরুল্লাহ জানান, ইজতেমা শেষ দিনে আম বয়ান শুরু হয় ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকে। এসময় প্রথম বয়ান করেন দিল্লীর শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিদের একজন মাওলানা ইউনুস সাহেব। হিন্দি ভাষার এ বয়ান অনুবাদ করেন উপস্থাপন করেন, মাওলানা মো. মুশফিক সাহেব। ফজরের আম বয়ানের পর ইজতেমায় অংশ গ্রহনকারী সাথীদের সকালের খাবারের জন্য কিছু সময় বিরতি দেয়া হয়। এরপর সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটে হেদায়েতের মূল বয়ান শুরু করেন তাবলিগের ভারতের মোম্বাইয়ের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি মাওলানা মো. আব্দুর রহমান। বর্ষীয়াণ এ বুজর্গ ১১ টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি ও হেদায়েতের গুরুত্বের ওপর বিশেষ বয়ান করেন।

এসময় তার হিন্দি ভাষার বয়ান অনুবাদ করে উপস্থাপন করেন মাওলানা মো. আব্দুল মতিন। হেদায়েতের বয়ান শেষে ১১ টা ৩৮ মিনিটে তিনি মোনাজাত শুরু করেন। এসময় মাত্র ১৭ মিনিটের মোনাজাতে তিনি বিশ্বব্যাপি মুসলমানদের শান্তি সমৃদ্ধি মুক্তি কামনা করেন। এ সময় ইজতেমা মাঠে উপস্থিত লাখো মুসল্লির দুহাত তুলে আমিন আমিন ধ্বনি তুলে আল্লাহর কাছে পানাহ চান।

মোনাজাতের সময় বৃদ্ধ, যুবক, শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আশে-পাশের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে মহিলাদের কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। মোনাজাতের সময় প্রতিটি মানুষই অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন। এসময় উপশহর আশপাশ এলাকায় শুধু আমীন আমীন ধ্বনি উচ্চারিত হতে থাকে।

মোনাজাতের সময় ইজতেমার মূল ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের বাজার, রাস্তা, খোলা স্থান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মুসল্লিদেও উপস্থিতিতে। বিপুল এলাকার জায়গাজুড়ে জমায়েত হন মুসল্লিরা। কার্যত কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিভিন্ন সড়কে অবস্থানকারীরাও হাত তুলে মোনাজাতে অংশ নেন। মাইকের শব্দ যে পর্যন্ত পৌছে সে পর্যন্ত যে যেখানে ছিলো সেখানে দাড়িয়ে মোনাজাতে অংশ নেন।

১১ টা ৫৫ মিনিটের সময় আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই জোহরের নামাজের আজান দেয়া হয়। পরে ১২-১৫ মিনিটের সময় ইজতেমা মাঠে জামাতের সাথে জোহরের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। জোহরের নামাজ শেষে একই স্থানে একজনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার রাতে তাহাজ্জুত নামাজ পড়া অবস্থায় আব্দুল কুদ্দুস (৫০) নামে এক তাবলীগের সাথী মারা যান। তিনি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা এলাকার বাসিন্দা বলে আয়োজকরা জানান। জানাজার নামাজ পড়ান মুফতি মাওলানা মো. ইয়াহিয়া। জানাজা নামাজ শেষে জিকিরের সাথে সাথে মুসল্লিরা তাদের গন্তব্যে ফিরে যান।

ইজতেমা মাঠের জিম্মাদার মাওলানা নাসিরুল্লাহ জানান, তাবলিগের তিন দিনের এ জোড় ইজতেমা শেষে এখান থেকে ৩৪৪ টি জামাত দাওয়াতি কাজে বের হয়ে গেছেন। এর মধ্যে এক চিল্লার ২০৭ টি, বিদেশী জামাত (মাস্তÍরাত) ৪০ টি ও বিদেশী জামাত (পুরুষ) ৯৭ টি। এসব জামাত বিভিন্ন মেয়াদে রয়েছে।

এদিকে সুষ্টভাবে ইজতেমা সম্পন্ন হওয়ায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে স্বস্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ইজতেমার জিম্মাদার মাওলানা নাসিরুল্লাহ জানান, কোন বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তি শৃঙ্খলাভাবে ইজতেমা সম্পন্ন হওয়ায় আল্লাহর শোকরানা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ইজতেমার সার্বিক সহযোগিতায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মী ও উপশহর এলাকার বাসিন্দাদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তাদের একান্ত সহযোগিতায় ও আল্লাহর অশেষ রহমতে এত বড় একটি জমায়েত সম্পন্ন হয়েছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer