Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

যশোরে ছেলেধরা গুজবে আতঙ্ক: বিপাকে মানসিক প্রতিবন্ধীরা

কাজী রকিবুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ১৬ মে ২০১৯

প্রিন্ট:

যশোরে ছেলেধরা গুজবে আতঙ্ক: বিপাকে মানসিক প্রতিবন্ধীরা

যশোর : যশোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ছেলেধরা’ গুজবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গুজব উঠেছে, যশোরের ঝিকরগাছা ও শার্শা, বাঘারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গারা শিশুদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা এলাকায় অপরিচিত লোক দেখলেই ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করছে।

এ পর্যন্ত জেলায় ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে অন্তত ১০ জন মানসিক প্রতিবন্ধি গণপিটুনীর শিকার হয়েছেন। যদিও পুলিশ বলছে, ছেলেধরা নিছক গুজব। মানসিক প্রতিবন্ধী, অপরিচিত লোকজনের এলাকায় এলোমেলো চলাফেরা দেখলেই গণধোলাই দেয়া হচ্ছে। যা দুঃখজনক।

জানা যায়, শুক্রবার সকালে বেনাপোল মাছ বাজার এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে এক নারীকে মারপিট করে এলাকাবাসী। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। একই দিন ঝিকরগাছার জননী সুপার মার্কেট এলাকায় এক যুবককে গণধোলাই দেয় স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার দুপুরে পারবাজার এলাকায় অপর এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে মারপিট করা হয়। বুধবার রাতে শ্রীরামপুর গ্রামে ও নওয়াপাড়া গ্রামে দুই মহিলাকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। এছাড়াও মঙ্গলবার বিকেলে বেজিয়াতলা গ্রামে এক ব্যক্তিকে গণধোলাই দেয় স্থানীয়রা। ছেলেধরা ও রোহিঙ্গা অপহরণকারী গুজবে এলাকায় এইসব অপরিচিত লোকদের এলোমেলো চলাফেরা করতে দেখে গণধোলাই দিয়েছে। অভয়নগরের
বিভিন্ন এলাকায় ছিন্নমূল, বাস্তুহারা, পাগল বা পাগল প্রকৃতির মানুষ দেখলেই তাদের উপর চড়াও হয়ে ব্যাপক মারপিট শুরু করছে স্থানীয় কিছু মানুষ। এমনও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে রোহিঙ্গা বা পাগল ধোয়াতুলে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক আক্রোশে প্রতিপক্ষের উপর জনতা লেলিয়ে দিচ্ছে। উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নসহ পৌরসাভার কয়েকটি ওয়ার্ডে ইতোমধ্যে এ ধরনের ধটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাতে বাক প্রতিবন্ধী এক বৃদ্ধাকে সুন্দলী বাজারে রোহিঙ্গা ও ছেলেধরা সন্দেহে মারপিট করে আহত অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়। পরে সুন্দলী ইউনিয়নের একজন ইউপি সদস্য রাতেই আহত ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন।
মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই বাক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধাকে পাওয়া যায়নি। ভোরে সে হাসপাতাল থেকে চলে যায় বলে জানায় সেখানকার সেবিকারা। এসময় চিকিৎসা নিতে আসা বুইকারা গ্রমের বৃদ্ধ আলতাফ হোসেন ক্ষোভের সুরে বলেন, নোংরা পোশাক পরা বা পাগল প্রকৃতির মানুষ মত দেখলেই তাদের বিপদ। আমি নিজেও একজন বৃদ্ধ এবং গ্রামের সাধারণ কৃষক। আমার পোশাক তেমন ভালো না। আমি নিজেই এখন রোহিঙ্গা ও ছেলেধরা আতঙ্কে ভুগছি। যানিনা আমাদের মত মানুষের কপালে কি আছে। গত শুক্রবার ও শনিবার নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪ ও ৬নং ওয়ার্ডে পাগল পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে।

অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, অভয়নগর উপজেলা ও পৌর এলাকায় রোহিঙ্গা বা ছেলেধরা বলে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে অতি উৎসাহী এক ধরণের মানুষ এ ধরণের অপরাধমুলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে। গত ১৩ মে সোমবার সদর উপজেলার খাজুরার লেবুতলা গ্রামে রোহিঙ্গা বলে দুই নারীকে আটক করে স্থানীয়রা।

লেবুতলা ইউপি চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলন জানান, সোমবার সন্ধ্যায় লেবুতলা গ্রামের উত্তরপাড়ার আমলগীরের বাড়ি থেকে সন্দেহভাজন ২বয়স্ক মহিলাকে আটক করা হয়েছে। তারা আলমগীরের ছেলে সাদ (২) ও মেয়ে সোয়াদ (৮) কে ডেকে খেজুর, বিস্কুট ও আঙ্ধসঢ়;গুর ফল খেতে দেওয়ার সময় বাড়ির লোক এবং প্রতিবেশীরা তাদের ধরে ফেলে। পরে পুলিশ তাদের আটক করে। গত ১২ মে সন্ধ্যায় খাজুরা
বাজারের মথুরাপুর নয়নের চাঁতাল সংলগ্ন রাস্তায় পাগল প্রকৃতির দুইজনকে ধাওয়া করে
স্থানীয়রা। তবে রোহিঙ্গা বা ছেলেধরা বলে কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি।

এদিকে, গুজবে কান না দিয়ে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুর রাজ্জাক। ঝিকরগাছা থানার অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে বৃহস্পতিবার জনসচেতনতামূলক পোস্ট দিয়েছেন ওসি। তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কতিপয় লোক শিশু পাচারকারী/রোহিঙ্গা বলে অভিহিত করে মানষিক ভারসম্যহীন অজ্ঞাতনামাদের মারপিট করে এলাকায় গুজব সৃষ্টি করছে। এতে সাধারণের জনমনে ভীতি প্রদান করছে। কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব সৃষ্টি করে অহেতুক জনমনে ভীতি সৃষ্টি করছে।

যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আনছার উদ্দিন বলেন, কিছু মানুষসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে। এলাকার লোকজন অপরিচিত ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের দেখলেই ‘ছেলেধরা’ গুজবে গণধোলাই দিচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন সত্যতা মেলেনি। এবিষয়ে সচেতনতার জন্য ঝিকরগাছার ওসিকে মাইকিং করতে বলেছি। ছেলেধরা বা রোহিঙ্গা গুজবে সবচেয়ে বেশি বিপদের মধ্যে রয়েছে চারপাশে ঘুরেবেড়ানো মানসিক প্রতিবন্ধীরা। তাদের কোন নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই। এক স্থানে তারা বেশিদিন অবস্থানও করে না। রাষ্ট্রীয় সীমারেখা তাদের আটকাতে পারে না। প্রতিদিন নিত্য নতুন স্থানে ছুটেচলা পাগলরা গণধোলাইয়ের শিকার হচ্ছে। নিরীহ আগুন্তকরাও বাদপড়ছে না গুজব বিশ্বাসীদের আক্রশ থেকে। ফলে এখনো ঘটছে সহিংস ঘটনা।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer