ছবি- সংগৃহীত
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছায় শতবর্ষী ৩০ টি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুগাছ এলাকার মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে। যেকোন সময় শুকনো গাছগুলোর ডালপালা ভেঙ্গে বড় ধরনের দুঘর্টনার কারণ হতে পারে বলে এলাকাবাসী আশংকা করছে।
জানা যায়, ১৮৩০-৪০ দশক শতাব্দীতে জমিদার কালীবাবু তার মাকে নড়াইল থেকে কলিকাতায় পাঠিয়েছিলেন। তিনি কলিকাতা থেকে ফিরে ছেলেকে বলেছিলেন, রোদের তাপে আমার খুব কষ্ট হয়েছে।
তখন কালিবাবু ছায়াঘেরা সড়কের জন্য কলিকাতা পর্যন্ত বৃক্ষরোপন করেছিলেন। পরে এই সড়কটিকে অনেকেই কালিবাবুর সড়ক নামেও আখ্যায়িত করেছিল। সেই থেকে আজ অবধি প্রায় দুইশ বছর ধরে কলিকাতা পর্যন্ত এই বৃক্ষঘেরা ছায়াপথের সুবিধা নিয়ে আসছে বাংলার মানুষ। সূত্র মতে, যশোর থেকে বেনাপোল সীমানা পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার গাছ ছিল। পরে এক জরিপে ২৩৫০ টি গাছ পাওয়া যায়। বর্তমানে ৬২০ টি গাছ আছে। তারমধ্যে ৭৫ টি গাছ মৃত রয়েছে। অর্ধমৃত ও ঝুকিপূর্ণ গাছ রয়েছে প্রায় দুইশ টি। এর মধ্যে ৭/৮ টি গাছ রাস্তার দুইধারে পড়ে আছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা উপজেলা মোড় হতে নাভারন পুরাতন বাজার পর্যন্ত ৩০টি শিশু গাছ পুরো শুকিয়ে গেছে। প্রায় দুইশত বছরের পুরোনো এই গাছগুলোর কারণে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে পথচারীসহ সকল প্রকার যানবাহন চলাচল ঝুকিপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। এর মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলা মোড়, বাসষ্ট্যান্ড, হাজিরালী মহিলা কলেজ মোড়, বালিখোলা, বেনেয়ালী, গদখালী বাজার, শরীফপুর মোড়, নবীননগর, কলাগাছি ও নাভারন কলোনীপাড়ায় মরে শুকিয়ে যাওয়া এসব গাছের কারণে এলাকার মানুষ দূর্ঘটনার আশংকায় থাকে। ইতোমধ্যে এসব মরা গাছের ডালপালা ভেঙ্গে কয়েকজন মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন, মারা গেছে গবাদি পশু ও ক্ষতিসাধন হয়েছে বেশ কিছু যানবাহনের। কয়েক বছর ধরে এলাকার মানুষ এ শুকনো গাছগুলো অপসরণের জন্য বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ এবং স্থানীয়রা মানববন্ধন করেছেন গাছ অপসরণের দাবীতে। কিন্তু কোন কিছুতেই কোন ফল হয়। গাছ থেকে গেছে, গাছের জায়গায়। জীবনের ঝুকি থেকে গেছে এলাকার মানুষের।
গদখালী ইউপির সাবেক সদস্য ফয়েজ আহমেদ জানান, গদখালী বাজারেই আছে ৪ টি শুকনা গাছ। এই গাছগুলো অপসরণের দাবিতে আমরা দরখস্ত, মানববন্ধন সব কিছু করেছি। সরকারি লোক এসে দেখে যায় কিন্তু কোন ফল পায়নি।
এ ব্যাপারে ঝিকরগাছার সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেবা’ এর সভাপতি আশরাফুজ্জামান বাবু জানান, ঝিকরগাছা বাসষ্ট্যান্ডে মরে শুকিয়ে যাওয়া গাছটির নিচে বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা দাড়িয়ে থাকেন। এই মরা গাছের পাশেই এস.কে সুপার মার্কটের প্রবেশদ্বার ও নিকটে জামে মসজিদ। ফলে যেকোন মূহুর্তে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য মরা শুকনো গাছ কাটার দাবীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। একই দাবীতে উপজেলা মোড় এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম শহীদও বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন।
বহুমাত্রিক.কম