ছবি- সংগৃহীত
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণকে পুঁজি করে চিকিৎসক কর্মচারীরা ইচ্ছামতো দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা না থাকার কারণে চিকিৎসায় অনিয়ম বেড়েই চলেছে।
গত ৯ দিনে সরকারি এই হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসকের ভুলে মারা গেছে ৮ বছরের এক শিশু। এরমধ্যে একটি ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদাহ গ্রামের আনারুল হকের ছেলে আলমগীর কবির কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। সেখান থেকে ১০ এপ্রিল দেশে ফেরেন।
বেনাপোলে পৌঁছানোর পর করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠান। বৃহস্পতিবার ভোরে আলমগীর করিবের মৃত্যু হয়। কবিরের স্ত্রী সানজিদা আক্তার জানান, তার স্বামী শুধু কিডনি রোগে আক্রান্ত। করোনা ভাইরাসে নন। তবুও মেলেনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা। সানজিদার অভিযোগ, ‘বিনা চিকিৎসায় আমার স্বামী মারা গেছেন। কবিরের অবস্থা বেশ খারাপ বুঝতে পেরে ডা. উবায়দুল কাদির উজ্জলকে ৫০ বারেরও বেশি কল করেছি। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। দিনের বেলায়ও রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে আইসোলেশন ওয়ার্ডে আসেননি ওই চিকিৎসক।’
এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার কাষ্টভাঙ্গার ইয়ার আলীর ছেলে মাহফুজকে (৮) যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে ভ্যান থেকে পড়ে গিয়ে ডান পায়ে আঘাত পেয়েছিলো। শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা রোগী দেখে তাকে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন বলে স্বজনদের জানান।
বুধবার তাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেয়া হয়। মৃতের মা মরিয়ম বেগমের অভিযোগ, চিকিৎসকের ভুল অস্ত্রোপচারে তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর মাহফুজের জ্ঞান পর্যন্ত ফেরেনি। গত ৯ এপ্রিল যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয় নড়াইলের নড়াগাতি থানার নারী ওসি রোকসানা খাতুনের স্বামী আহসানুল ইসলামকে। বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট হলে তাকে এখানে ভর্তি করা হয়। করোনা ভাইরাসের অজুহাতে কোন চিকিৎসক তার চিকিৎসা দিতে আসেননি বলে অভিযোগ স্বজনদের। এমনকি অক্সিজেন দিতেও আসেননি ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকা ও কর্মচারিরা। ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পরও বিনাচিকিৎসায় মারা যান আহসানুল ইসলাম ।
এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১২ এপ্রিল ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান করা হয় কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. জয়ন্ত কুমার পোদ্দারকে। অন্য দুইজন হলেন সদস্য সচিব হাসপাতালের আরএমও ডা. আরিফ আহমেদ ও সদস্য মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মধুসূদন পাল। ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপর প্রশ্নে তিনি জানান, আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর চিকিৎসা প্রদান করেছে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক দেবাশীষ দত্ত। ডা. উবায়দুল কাদেরের দায়িত্ব না থাকায় তিনি ওয়ার্ডে যাননি। বিনাচিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে এ অভিযোগ সঠিক না। মূলত সঠিক সময়ে কিডনি ডায়ালাইসিস দিতে না পারায় আলমগীর কবির মারা গেছেন। তিনি আরো জানান, শিশু মাহফুজের মৃত্যুর বিষয়ে জানার জন্য কয়েকজন চিকিৎসককে ডেকেছিলাম। তারা কয়েকটি কারণ উলেক্ষ করেছে। তবে অপারেশনের আগে ওই শিশু সুস্থ ছিলো।
ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বহুমাত্রিক.কম