ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন (মসিক) এলাকায় এবার কুরবানির পশুর হাট বসছে ৭টি। এবারের পশুর হাটে করোনা ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকার জন্য মসিক বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা যাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি সম্পূর্ণভাবে মানতে পারে তার জন্য ইজারাদারসহ আইনশৃংখলা বাহিনী ও মসিক টিম বিশেষ নজরদারি করবে বলে জানিয়েছেন সমিক মেয়র ইকরামুল হক টিটু। কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে পশু খামারিদের দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ না কমায় তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। খামারিরা পশু বাজারে নিতে পারবেন কিনা, বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা, ক্রেতা মিললেও দাম সঠিক পাবেন কিনা এসব নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন।
মসিক এলাকায় শম্ভুগঞ্জ বাজারে রয়েছে স্থায়ী গরুর হাট। এছাড়াও অস্থায়ী কুরবানির পশুর হাট বসবে নগরীরর সার্কিট হ্উাজ সংলগ্ন আবুল মনসুর সড়ক, খাগডহর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠ, জয়বাংলা বাজার সংলগ্ন (ছাইতান কান্দা মাঠ ), সুতিয়াখালী স্কুল মাঠ (জিতেন্দ্রগঞ্জ বাজার ), শিকারীকান্দা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জিটিআই) মাঠ।
আসন্ন ঈদুল আযহা’র পশুরহাটে ও পশু কুরবানীতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার্থে ইত্তেফাকুল ওলামা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইমাম সমিতি, কসাই সমিতির নেতৃবৃন্দেও সাথে গত ৫জুলাই এক মতবিনিময় সভায় ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের (মসিক) মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু ঈদুল আজহার কুরবানির পশুরহাটে বয়স্ক ও শিশুসহ একটি পশু ক্রয়ে দুইতিন জনের অধিক মানুষ হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন।
সভায় মেয়র টিটু বলেন, যিনি কোরবানী পশুজবাই করবেন তিনি যেন প্রতিবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধৌত করেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জবাই করার মাধ্যমে তিনি ওসংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করতে পারেন। মাংস প্রস্তুত করার কাজে যার জড়িত থাকেন তারা সুস্থ কিনা সে বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন। মাংস প্রস্তুতকারী কারো মাঝে জ্বর-কাশি বা করোনার কোন উপসর্গ থাকলে তাকে কোন বাসায় মাংস প্রস্তুতে না পাঠাতে কসাই সমিতির নেতৃবৃন্দকে তিনি অনুরোধ করেন মসিক মেয়র। পবিত্র ঈদ উল আজহায় স্বাস্থ্য বিধি মানার বিষয়ে সচেতন করতে ইমাম ও ওলামাদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ইমাম-ওলামাদের উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকার প্রশংসা করেন মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু।
মসিক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রাজীব কামুার সরকার জানান, পশুর হাটের দরপত্রে এবার ইজাদাররা ধূর-দূরান্ত থেকে আগত পাইকারদেও জান-মালের নিরাপত্তাসহ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা বাধ্যতামূল করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাজারে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদেও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পর্যপ্ত ব্যবস্থা রাখবে হবে এবং নিজ খরচে পশুর হাটে বিদ্যুৎ, পানি, স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ময়মনসিংহ অঞ্চলে অসংখ্য গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার খামার গড়ে উঠেছে। গ্রামের একজন বিধবা মহিলা বা সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে লাখ লাখ মানুষ গরু, ছাগল, ভেড়া পালন করেন। এখন অনেক শিক্ষিত যুবক ডেইরি ফার্ম ও গরু মোটা তাজাকরণকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যে কারণে প্রত্যন্ত এরাকায় বড় বড় গরু, ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে। সারাবছর কসাইদের কাছে বিক্রির পাশাপাশি কিছু কিছু স্পেশাল গরু তৈরি করা হয় কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা নিয়ে তারা এখনো দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারেননি। মূলত কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে সারাবছর গরু লালন-পালনে তারা বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন। তাই এখন পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন দেশের খামারিরা।
ভালুকার খামারি মোশাররফ হোসেন বলেন, এবার তিনি খামারের ২৫টি গরু মোটাতাজা করেছেন কুরবানির হাটে বিক্রির করার জন্য। এত টাকা বিনিয়োগ করে যদি কুরবানির ঈদে দাম ভালো না পাই তাহলে আমাদের মতো খামারিদের দুঃখের কোনো সীমা থাকবে না। গরু পালন করতে গিয়ে অনেক ঋণ হয়েছে। ধার-দেনা করে কুরবানির আশায় গরু পালন করেছি। করোনার বর্তমান অবস্থায় এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি।
ধোবাউড়ার সীমান্তবর্তী বিধবা আইমন নেছা জানান, স্বামী সন্তান কিছুই নেই। অনেক ধারদেনা করে একটি ষাড় গরু গত দুই বছর ধরে সস্তানের মত লালন পালন করেছেন । বাজার ঠিক থাকলে গরুটি লক্ষাধিক টাকা বিক্রি হবে। যদি করোনার কারণে বাজারে উপযুক্ত দাম না পাই তাহলে আমার মরণ ছাড়া গতি নেই। কুরবানির হাট ছাড়া কসাইদের কাছে গরুটি বিক্রি করলে লোকসান গুণতে হবে।
বহুমাত্রিক.কম