ঢাকা : স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পেলেন নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামের ১০ বীরাঙ্গনা। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি গেজেটের মাধ্যমে তাদের নাম প্রকাশ করে।
১০ বীরাঙ্গনার মধ্যে বানী রানী পাল, ক্ষান্ত রানী পাল, রেণু বালা ও সুষমা সূত্রধর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।
বাকিরা হলেন, মায়া রানী সূত্রধর, রাশমণি সূত্রধর, সন্ধ্যা রানী পাল, কালীদাসী পাল, সন্ধ্যা রানী ও গীতা রানী পাল। একাত্তরের সেই দুর্বিষহ যন্ত্রণা আর সামাজিক বঞ্চনার পাশাপাশি অভাব-অনটন ও শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেই চলছে তাদের জীবন।
রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর তীরে ছায়াঘেরা শান্ত আতাইকুলা পালপাড়া গ্রাম। ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় রাজাকার ও আলবদরদের সহযোগিতায় সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের ওপর নির্যাতন চালায়। তখন পাকবাহিনী গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ওই দিন গোবিন্দ চরণ পাল, সুরেশ্বর পাল, বিক্ষয় সূত্রধর, নিবারণ পালসহ ৫২ জন মুক্তিকামী জনতাকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এ সময় নারীরা স্বামী সন্তানকে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানিয়েও পাকিস্তানি বাহিনীর মন গলাতে পারেননি। উল্টো পাক-জান্তারা নারীদের ওপর চালায় পাশবিক নির্যাতন।
বীরাঙ্গনা কালী দাসী পাল (৭৫) বলেন, ‘ওই দিন পাকিস্তানি আর্মিরা আমার স্বামীকে ঘরের দরজা ভেঙে ধরে নিয়ে যায়। স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে আমিও সেখানে গিয়ে তার প্রাণ ভিক্ষা চাই। কিন্তু তারা কোনও কথা না শুনে আমার চোখের সামনে স্বামীসহ ৫২ জনকে হত্যা করে। পরে আমার ওপরও চালায় নানা ধরনের নির্যাতন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এক ছেলে আছে। সে দিনমজুরের কাজ করে। আমিও পেটের তাগিদে কখনও ধান কুড়িয়ে, কখনও চাতালে বা অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে কোনোরকমে বেঁচে আছি। ভেবেছিলাম বেঁচে থাকতে মনে হয় স্বীকৃতি পাবো না। অবশেষে স্বীকৃতি পেয়েছি। আমি অনেক খুশি। সরকারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’