Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

ভাসমান পেয়ারার হাটে ভ্রমণ পিপাসুদের সরব উপস্থিতি

মোঃ আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ১৯ আগস্ট ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ভাসমান পেয়ারার হাটে ভ্রমণ পিপাসুদের সরব উপস্থিতি

ছবি : সংগৃহীত

ঝালকাঠি : মৌসুম শেষে ঝালকাঠি সদর উপজেলার পেয়ারা গ্রামগুলোতে এখন পেয়ারা চাষিদের মুখে হাসি। দীর্ঘ ১ যুগ পর এবার একটু বেশি লাভ হয়েছে তাদের। আরও ১৫ দিন ভাসমান হাট জমবে।

এ অঞ্চলের ভীমরুলির ভাসমান পেয়ারার হাটে প্রতিদিন ক্রেতা বিক্রেতার সমাগমে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুখরিত থাকেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দেশি বিদেশী ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সরব উপস্থিতি।

খুব সকালে চাষিরা বাগান থেকে পেয়ারা তুলে নৌকায় করে বাজারে নিয়ে আসে। ভাসমান হাটে নৌকায় কেনা বেচা হয়। এবছর শুরুতে মনপ্রতি ৫০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয় এই পেয়ারা। এমন দাম গত কয়েক বছরে পায়নি এ অঞ্চলের পেয়ারা চাষিরা।

পেয়ারা বাগান ঘুরে জানা গেছে, পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, আদমকাঠী, ধলহার, কঠুরাকাঠি, আন্দাকুল, জিন্দাকাঠি, ব্রাহ্মণকাঠি, আতা, জামুয়া, মাদ্রা, ঝালকাঠি, শশীদ, পূর্ব জলাবাড়ী, আদাবাড়ি ও জৌসার গ্রাম এবং ঝালকাঠি ও বরিশালের বানারীপাড়ার মোট ৩৬টি গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষাবাদ হয়। কয়েক হাজার পেয়ারা বাগানে হাজার হাজার চাষী এ পেয়ারা চাষাবাদ করে আসছে। আর পেয়ারার চাষাবাদ ও বিপণন ব্যবস্থার সাথে ওই সমস্ত এলাকার প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার শ্রমজীবী মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

ঝালকাঠির কাঁচাবালিয়া গ্রামের পেয়ারা চাষি জাহিদ মিয়া জানান, আমাদের ভাগ্য ভালো খড়ার কারণে ফলন ভালো না হওয়ার ভয় ছিলো। উপরওয়ালা সহায় থাকায় পেয়ারার ফলন এবার ভালই হয়েছে। এইবার মৌসুমের শুরুতেই ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে প্রতি মন পেয়ারা ৮শ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পেয়ারার দাম কমে গেছে। প্রতি মণ ২ শ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

প্রতিবছর পেয়ারার মৌসূমে বিভিন্ন স্থান থেকে নৌ পথে পেয়ারা বাগানে আসে পর্যটকরা। পেয়ারা বাগানে এসে দেখে মুগ্ধ হয়ে এখান থেকে পেয়ারা কিনেও নিচ্ছেন পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য। বছরের পর বছর ধরে পেয়ারা উৎপাদিত এসব এলাকার চাষিদের একমাত্র সমস্যা হিমাগার ও সড়ক পথে যোগাযোগের যথোপযোগী ব্যবস্থা না থাকা।

পেয়ারা চাষিরা জানিয়েছে, এ অঞ্চলের সাথে সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে পেয়ারা দ্রুত বাজারজাত করা যেত। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা হলে পেয়ারা চাষিদের বাগান থেকে সরাসরি ট্রাক যোগে প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতেই ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেয়ারা পৌঁছে
দেয়া এবং পচন রোধ করা সম্ভব হত।

আড়তদার লিটন হালদার বলেন, ভিমরুলী দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পেয়ারার মোকাম। মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মন পেয়ারা বিক্রি হয়। তবে বাউকাঠি থেকে ভিমরুলী হয়ে কীর্তিপাশা পর্যন্ত সড়ক পথ হলে দ্রুত প্রতি দিনের পেয়ারা প্রতিদিন বিভিন্ন জেলায় পৌঁছানো সম্ভব হতো। ভিমরুলী মোকাম থেকে নৌ পথে খুলনা, ফেনী, ঢাকা, সিলেট, পটুয়াখালি, ভোলা, মাদারিপুর, নাটোর, বরিশাল হাজার হাজার মন পেয়ারা যাচ্ছে। কিন্তু সড়ক পথের যোগাযোগ থাকলে তাৎক্ষনিকভাবে এসব জেলায় পেয়ারা নেয়ার জন্য পাইকাররা চাষিদের আরো বেশি দাম দিয়ে পেয়ারা কিনত।

চাষিরা বলছে, ভীমরুলি বাজারের সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হওয়ায় বর্তমানে এখানকার পেয়ারা ঢাকা, খুলনা, বরিশাল সহ দ্রুত বিপণন হচ্ছে। এ কারণেই এবছর ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে। এতে কৃষক সমাজ বেশ খুশি।

কৃষি বিভাগ দাবি করেছে, এবছর স্বাভাবিক ফলন হয়েছে। বাজারেও ভাল দাম পচ্ছেন চাষি। ঝালকাঠি জেলার ১২টি গ্রামে ৫০০ হেক্টরে পেয়ারার চাষ হয়েছে। আর এ থেকে এ বছর আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা আয় হবে।

এদিকে জেলা প্রশাসন জানায়, এখানে পর্যাটকদের জন্য এখানে ওয়ারশরুম ও রেষ্ট হাউজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer