ঢাকা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন এমন নির্বাচনের মুখোমুখি আর হয়নি বলে বলা হচ্ছে। এর কারণ আজ বৃহস্পতিবারের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের ওপর দেশটির ভবিষ্যতের অনেক কিছু নির্ভর করছে।
ব্রেক্সিট অর্থাৎ ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগের প্রশ্নে প্রায় তিন বছর ধরে পার্লামেন্টে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে গত দু`বছরের মধ্যে এটি দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কনসারভেটিভ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকারে ফিরবে বলে আশা করছে, অন্যদিকে জেরেমি করবিনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ব্রেক্সিটের পরিবর্তে তাদের নানা ধরণের রাষ্ট্রীয় কল্যাণমূলক কর্মসূচিকেই তাদের প্রচারণায় প্রাধান্য দিচ্ছে।
ব্রিটেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ২০১৬-এর গণভোটে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে রায় দেয়। তার আগের কয়েক দশক ধরে ব্রিটেন এবং ইইউর অর্থনীতি এবং বাণিজ্য অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত ছিল।
তাই গণভোটের পরই কথা ওঠে যে ইইউ ত্যাগ করার ফলে যাতে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কোন ক্ষতি না হয়, দু-অংশের জনগণ চাকরিবাকরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা ভোগ করতেন সেগুলোতে কোন ছেদ যেন না পড়ে - তাই ব্রেক্সিট কীভাবে হবে তা আগে থেকেই একটা চুক্তির ভিত্তিতে স্থির করে নিতে হবে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং তার আগে প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে এরকম চুক্তি করে এসেছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে । কিন্তু তা তারা পার্লামেন্টে পাস করাতে পারেন নি। কারণ কনসারভেটিভ পার্টির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না, তাদের কোয়ালিশন অংশীদার ওই চুক্তিকে সমর্থন করে নি, এবং চুক্তিটি যে লেবার পার্টি সহ অন্য বিরোধীদলগুলোর সমর্থন পাবে - তাও হয়নি।
ফলে টেরিজা মে তিন বার এবং বরিস জনসন একবার পার্লামেন্টে তুলেও তাদের ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করাতে পারেননি। পার্লামেন্টে সৃষ্টি হয় ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন তিক্ততা ও বিভক্তি, এবং অচলাবস্থা। ব্রেক্সিট হবে কি হবে না - এই অনিশ্চয়তায় ব্যবসাবাণিজ্যে তৈরি হয়েছে স্থবিরতা ।
অনেকে বলছেন, ব্রিটেনে রাজনীতিবিদদের ওপর জনগণের আস্থাই কমে যাচ্ছে। কনসারভেটিভ এবং লেবার দু দলই ব্রেক্সিট চাইছে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ।এ অবস্থার সমাধানের জন্যই নতুন এই নির্বাচন দেয়া হয়েছে - যাতে কোন একটি দল সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এসে ব্যাপারটাকে সামনে এগিয়ে নিতে পারে।
কেন এ নির্বাচনকে `দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ` বলা হচ্ছে?
এর একটি কারণ ব্রেক্সিট, অপরটি হলো এ নির্বাচনের পটভূমি - যে নজিরবিহীন তিক্ততা, বৈরিতা এবং বিভক্তির প্রেক্ষাপটে এ নির্বাচন হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, ব্রেক্সিট হবে কিনা বা কীভাবে হবে তা নির্ধারিত হবে এ নির্বাচনে। ব্রেক্সিট যদি হয়, তাহলে তা ব্রিটেনের সমাজ ও অর্থনীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে ।
কিন্তু যারা ব্রেক্সিটের বিরোধী তারা বলছেন, এর পরিণতিতে যুক্তরাজ্য ভেঙে যেতে পারে - কারণ স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে জোর জনমত আছে। অন্য দিকে ব্রেক্সিটের প্রতিক্রিয়া পড়বে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ওপরও - অনেকের মতে ইইউর ঐক্যও হুমকির মুখে পড়তে পারে। এক কথায় গোটা ইউরোপেই অনেক সুদূর প্রসারী পরিবর্তন আসতে পারে, এবং এগুলো সবই ঘটতে পারে ব্রেক্সিটের কারণে ।
আর এ নির্বাচনের পরিণতিতে ব্রেক্সিট যদি না হয় - তাহলে অনেকের মতে ব্রিটেনে এক গভীর রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে।জনগণের একাংশের মধ্যে গুরুতর বিভক্তি ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হবে, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনীতিবিদদের প্রতি সৃষ্টি হবে জনগণের গভীর অনাস্থা। অনেকে সামাজিক সংঘাতের আশংকাও প্রকাশ করছেন।তাই বলা হচ্ছে এটা যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন।