ছবি- বহুমাত্রিক.কম
মহান বিজয় দিবসে শ্রদ্ধা ভালবাসা আর অবনত শিরে পুরো জাতি স্মরণ করলো বাঙালীর বীর সন্তানদের। দিবসটি উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের পূস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা-ভালবাসায় সিক্ত হয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
দিনের শুরুতে ভোর ৬টা ৩৪মিনিটে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুন সুর। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করে সশস্ত্র বাহিনী। এরপর জন সাধারনের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটক। আর জাতির বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের জনসাধারণের ঢল নামে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামিম উজ জামান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতির বীর শহীদদের প্রতি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, ‘আমাদের আজকের শপথ, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা, সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবৃক্ষ ডালপালা বিস্তার করেছে, তা সমূলে উৎপাটিত করা। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, স্বাধীনতার আদর্শে কোনো আপস করব না।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে একদিকে সাম্প্রদায়িকতা, আরেক দিকে অসাম্প্রদায়িকতার দুটি ধারা চলছে। একদিকে সাতচল্লিশের চেতনা, অন্যদিকে একাত্তরের চেতনা। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখব।’
সকাল ১০টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে আসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, "আমাদের বাক স্বাধীনতা নেই, মৌলিক স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছে। অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। আজকে আমরা বিজয় দিবসে সেজন্য শপথ গ্রহণ করেছি, স্মৃতিসৌধে আমাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য, অবশ্যই এদেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখব। অবশ্যই আমরা বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হব।
বিজয় পেয়েছি, মুক্তি কি মিলেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, `না, মুক্তি আমাদের মেলেনি, সেই মুক্তির জন্যই আমারা সংগ্রাম করফছি।’’ মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্তির জন্য সংগ্রাম করতে হবে। যুদ্ধ করে বিজয় পেয়েছি কিন্তু মুক্তি এখনও মেলেনি।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমূখ। সেই ঢাকা জেলা ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের ব্যানারে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীও শ্রদ্ধা জানান।
মহান বিজয় দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফঝলে নূর তাপস। তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, সব সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রত্যয় নিতে হবে।
মেয়র বলেন, ‘বিজয়ের এই দিনে সব সাম্প্রদায়িক শক্তিকে জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করতে আমাদের নতুন করে প্রত্যয় নিতে হবে। দেশ থেকে সব সাম্প্রদায়িক শক্তি, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন না করা পযন্ত আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারন সম্পাদক মাঈনুল ইসলাম খান নিখিল, ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর সকল অংগসংগঠন, বাংলাদেশ জাতীয়দাবাদী দল বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, গণসংহতি আন্দোলন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, কেন্দ্রীয় যুব কমান্ড, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন, বাংলাদেশ ছাত্র, যুব, শ্রমিক অধিকার পরিষদ-ঢাকা জেলা শাখা, বাংলাদেশ পাট শিল্প কর্মকর্তা সমিতি, আশুলিয়া প্রেস ক্লাব, ঢাকা প্রেস্ ক্লাব, কারিতাস বাংলাদেশ, পাবনা সমিতি ঢাকা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, সাভার উপজেলা পরিষদ ও সাভার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান এমপি, সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নীপা।
শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নব গঠিত আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ফারুক হাসান তুহিন, যুগ্ম-আহবায়ক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, আশুলিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শহীদুল্লাহ্ মুন্সী, সাধারণ সম্পাদক মোঃ খালেক মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সোহরাফ হোসাইন প্রমূখ, আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহবায়ক মো: কবির হোসেন সরকার, যুগ্ম-আহবায়ক মঈনুল ইসলাম ভুইয়া প্রমূখ।
এবছর বিজয় দিবস নির্বিঘেœ পালন করার জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক’শ সামরিক ও বেসামরিক নিরাপত্তাকর্মী। এবার জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই জীবাণুনাশক ট্যানেল ব্যবহার করে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কোন অবস্থাতেই কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে এবারের মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভিআইপিদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সীমিত আকারে জনসাধারণের প্রবেশ খোলে দেয়া হয় বীর শহীদদের রক্তে গাঁথা স্মৃতিস্তম্ভ।
বহুমাত্রিক.কম