Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে আত্মহত্যা নিয়ে কিছু কথা

শামীনা নাসরিন চৌধুরী মম

প্রকাশিত: ১১:২৬, ১০ অক্টোবর ২০১৯

প্রিন্ট:

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে আত্মহত্যা নিয়ে কিছু কথা

১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয় যার মূল লক্ষ্য হল পৃথিবীর সকলের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষা এবং সচেতনতা সৃষ্টি করা। এ বছর ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথ (ডাব্লুএফএমএইচ) বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের মূল প্রতিপাদ্য "আত্মহত্যা প্রতিরোধ" করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মতে প্রত্যেক বছর ৮০০,০০০ এর বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে যার মানে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একটি করে জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে।১৫-২৯ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে আত্মহত্যা মৃত্যুর দ্বিতীয় বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার মাত্রা দিনদিন বাড়ছে।এমনকি সব দেশেই সকল বয়সের মানুষের উপর এই প্রভাব পড়ছে।

মানবসভ্যতার শুরু থেকেই আত্মহত্যার প্রবনতা লক্ষ্য করা গেলেও বর্তমানে কয়েক দশকে এর মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছে যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কোন বড় পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি আত্মহত্যা প্রতিরোধে। এটা বেশিরভাগ সময় ধরে নেওয়া হয় শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্করাই আত্মহত্যা করে থাকে কিন্তু বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শিশু এবং তরুণসমাজ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে একই কাজ করছে যার কয়েকটি কারনের মধ্যে রয়েছে একাকীত্ব, মাত্রাতিরিক্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ পড়াশোনার চাপ,নেশায় আসক্তি , সহিংসতা, যৌন নির্যাতন, হুমকি, সাইবার বুলিং ইত্যাদি।

আজকাল ছোট বাচ্চারা সময়ের প্রয়োজনেই অনেক প্রতিযোগিতাপূ্র্ন পড়াশোনা করে থাকে যার ফলে একটু আশানুরূপ ফলাফল না পেলেই মন খারাপ করে,একটা সময় সবকিছু মিলিয়ে বড় হওয়ার সাথে সাথে খারাপ লাগা গুলো বাড়তে থাকে এবং নিজের কথা কাউকে বুঝানোর না পেয়ে একাকীত্বে ভোগে,এমনকি অনেক বাবা মা আজকাল চাকরি করেন যার ফলে একান্নবর্তী পরিবারের বাচ্চারা একা একাই বড় হয় যার ফলে হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আসক্ত হয়ে পড়ে অনেক সহজেই এই আশায় যেন একাকীত্ব মেটানো যায় ,তরুণদের অনেকেই বিষন্নতায় ভোগে চাকরি নিয়ে আবার অনেকেই সম্পর্কের টানাপোড়েনে।

এছাড়াও বর্তমানে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে সহিংস কার্যকলাপ এবং যৌন নির্যাতন বেড়েই চলছে আর অনেক ক্ষেত্রেই নির্যাতিতরা সামাজিকভাবে অনেক হেনস্তার শিকার হয় এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ।আর এই সকল কারনে মানসিকভাবে দূর্বলতা ও একাকীত্বের সময়ে বেশিরভাগ মানুষ পরিবার এবং আশেপাশে কোথাও থেকে কোন মানসিক শক্তি পায় না যার ফলে অনেকেই আত্মহত্যা প্রবন হয়ে পড়ে। যেহেতু মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করার মতো পর্যাপ্ত মাধ্যম এখনো নেই এবং অনেকের মাঝেই এই বিষয়টিকে সামাজিকভাবে এক ধরনের ট্যাবু ধরে নেওয়ার প্রবনতা রয়েছে তার ফলে আত্মহত্যাপ্রবন মানুষ চিহ্নিত করাটা একটি কঠিন কাজ হয়ে দাড়িয়েছে।

যদি এই অবস্থার পরিবর্তন করা না হয় তাহলে আত্মহত্যার মাত্রা কোনভাবেই কমানো যাবে না। দিন দিন যদি এই কারনগুলো বড় আকার নিতে থাকে তাহলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রত্যেক স্থানে সচেতনতা দরকার যার ব্যাপ্তির শুরুটা পরিবার, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন,শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কর্মরত সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং দেশের সরকার পর্যন্ত।

আর হ্যা নিজের নিজের জায়গা থেকেও প্রত্যেকের উচিত নিজের খেয়াল রাখা এবং যখনি কিছু ভাল খারাপ লাগবে তা নিয়ে প্রথমেই আপনজনদের সাথে কথা বলা হতে পারে সে বাবা মা ভাই বোন বন্ধু বা অন্য যে কেউ। বিষন্নতা এমন কিছুনা যে তা নিয়ে আলোচনা করা যাবে না বা আমি বিষন্নতায় ভুগছি তা জানলে সবাই ভেবে নিবে আমি দুর্বল। বরং এমনটাও তো ভাবতে পারে যে আমার মধ্যে অনেক মানসিক শক্তি আছে বিধায় এখনো টিকে আছি আর রোজ বিষন্নতা কাটানোর চেষ্টার লড়াই করছি।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, মাজেদা ফাউন্ডেশন

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer