Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

বিপ্লবতীর্থ হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্প বিল্ডিং

অনিন্দ্য দাশ

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ১৩ মে ২০২২

আপডেট: ১৬:০১, ১৩ মে ২০২২

প্রিন্ট:

বিপ্লবতীর্থ হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্প বিল্ডিং

-লেখক

স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবীদের রাখার জন্য ব্রিটিশদের দ্বারা নির্মিত দুটি বন্দী শিবিরের একটি ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের খড়গপুর শহরের হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্প বিল্ডিং, অন্যটি ছিল বক্সায়। ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলায় বিপ্লবী তৎপরতা তুঙ্গে পৌঁছেছিল। 

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার অভিযান থেকে রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ পর্যন্ত একের পর এক সশস্ত্র অভিযান তৎকালীন ব্রিটিশ শাসককুলের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। দেশের এই অংশে বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিরোধ তীব্র হয় এবং এই ভবনটি রাজনৈতিক বন্দীদের জন্য একটি বন্দিশিবিরে রূপান্তরিত হয়।

বর্তমানে এই বন্দিশিবিরটির নামকরণ হিজলি শহীদ ভবন নামে করা হয়েছে। এটি একটি মনোমুগ্ধকর ভবন, যা বাইজেন্টাইন স্থাপত্য শৈলীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। শ্রুতি অনুসারে, এই ভবনটি একটি প্রস্তাবিত জেলা হিজলির জেলা সদর দফতরের জন্য নির্মিত হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে বাস্তবায়িত হয়নি।

তৎকালীন স্পর্শকাতর মামলাগুলির সাথে যুক্ত বিচারাধীন আসামীদের কারাগারে রাখার জন্য কয়েকটি সেল তৈরি করা হয়েছিল। যেহেতু এটি একটি আটক কেন্দ্র ছিল, তাই বন্দীদের খেলা এবং নাটকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তারা বন্দিশিবিরের মধ্যে অবাধে চলাফেরা করতে পারত। রাতে তাদের ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হত।

উল্লেখ্য, সে দিনের অধিকাংশ বন্দী ছিল তরুণ বুদ্ধিজীবী, স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে জড়িত। বন্দিশিবির কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তার প্ররোচনায় রক্ষীদের দ্বারা বন্দীদের উপর গুলি চালানোর ঘটনাটি জাতির চেতনাকে নাড়া দেয়।

এই ঘটনাটি, যা পরবর্তীতে "হিজলি ফায়ারিং" নামে পরিচিত,১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয়েছিল, যখন নিরস্ত্র বন্দীদের উপর ২৯ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছিল। এই ঘটনায় সন্তোষ কুমার মিত্র এবং তারকেশ্বর সেনগুপ্ত প্রাণ হারান এবং আরও কয়েকজন আহত হন।

আঞ্চলিক কংগ্রেস কমিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এবং যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত পরেরদিন হিজলিতে এসে উপস্থিত হন। মৃতদেহ দু`টি সঙ্গে করে নিয়ে যান কোলকাতায়। তারা শ্মশানে যাওয়ার পথে কলকাতায় একটি বড় মিছিলের আয়োজন করেন। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তখন ৭০ বছর বয়সী এবং অসুস্থ, ২৬শে সেপ্টেম্বর (১৯৩১) কলকাতায় "স্মৃতিস্তম্ভ" (বর্তমানে শহীদ মিনারের) পাদদেশে বহু জনতার একটি শোক সভায় ভাষণ দেন। কিছুকাল পরে, তিনি এই পর্বের উপর ভিত্তি করে বিখ্যাত কবিতা "প্রশ্ন" রচনা করেন।

বন্দিশিবিরটি ১৯৩৭ সালে বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯৪০ সালে পুনরায় চালু করা হয়। ১৯৪২ সালে এটি চূড়ান্ত সময়ের জন্য বন্ধ করা হয় এবং বন্দীদের অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি মার্কিন বিমান বাহিনীর দখলে ছিল।

ভারতবর্ষের প্রথম আইআইটি ১৯৫০ সালে হিজলি ক্যাম্পে স্থাপন করা হয়েছিল যা বর্তমানে আইআইটি-খড়গপুর নামে সমগ্র ভারত তথা বিশ্বের মানচিত্রে প্রযুক্তি শিক্ষার অতি পরিচিত প্রতিষ্ঠান। ২১ এপ্রিল, ১৯৫৬ সালে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করেছিলেন। বর্তমানে পুরানো ভবনটি এখন হিজলি শহীদ ভবন নামে পরিচিত এবং এখানে নেহেরু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর রয়েছে।

তথ্য ঋণ: আই আই টি খড়গপুর ও নেহেরু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer