Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

বিপ্লব ও ঐতিহ্যের রাজসিক নাড়াজোল

অনিন্দ্য দাস, নাড়াজোল (মেদিনীপুর) ঘুরে এসে

প্রকাশিত: ০২:৩৫, ১৩ জুলাই ২০১৮

আপডেট: ০২:৩৮, ১৩ জুলাই ২০১৮

প্রিন্ট:

বিপ্লব ও ঐতিহ্যের রাজসিক নাড়াজোল

ছবি : লেখক

নাড়াজোল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মেদিনীপুর জেলার উত্তরপূর্ব এবং ঘাটাল মহকুমার দক্ষিণপশ্চিম কোণে অবস্থিত। বর্তমানে নাড়াজোল ঘাটাল মহকুমার অন্তর্গত। নাড়াজোলের উত্তর দিকে ঘাটাল থানা, দক্ষিণ দিকে ডেবরা থানা, ও পশ্চিমে কেশপুর থানা। পূর্ব দিকের দাসপুর থানার মধ্যেই নাড়াজোল অবস্থিত। নদী নাড়াজোলের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। কারণ নদীগুলিই নাড়াজোলের সীমা নির্দিষ্ট করে। উত্তরে শিলাবতী, দক্ষিণে কংসাবতী, পশ্চিমে পারাং ও পূর্বে কাঁকি নদির মধ্যবর্তী ভূমিখণ্ডই বর্তমানের নাড়াজোল।

নাড়াজোল শুধুমাত্র একটি গ্রাম নয়। অখণ্ড মেদিনীপুরের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। অসমীয়া ভাষায় “জোলা” কথার অর্থ জল। নাড়া বোলতে আমরা বুঝি ধানের শিষ সহ খড় কেটে নেওয়ার পর ধান ঘাছের যে অংশ জমিতে থাকে সেই গোড়া বা অবশিষ্ট অংশ। মিলিত অর্থ নাড়া + জোল = নাড়াজোল।

পরগনা হিসেবে নাড়াজোল নামটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ সিরাজ উদ দৌলাকে পরাজিত ইস্টঈণ্ডীয়া কোম্পানি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে। মীরজাফরের কাছ থেকে তারা পায় ২৪ পরগনার জমিদারি। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে মীরজাফরকে গদিচ্যুত করে ইংরেজরা তার জামাই মিরকাশিমকে নবাব পদে বসান। বিনিময়ে মিরকাশিম ইংরেজদের উপহার দিলেন মেদিনীপুর, বর্ধমান, ও চট্টগ্রামের জমিদারি।ওই বছরের ১৫ অক্টোবর এক সনদ প্রদান করেন এবং এর সাথেই মেদিনীপুরের সঙ্গে নাড়াজোলের স্বাধীনসত্তার অবলুপ্তি ঘটে। বঙ্গদেশে এটি ছিল ইংরেজদের প্রথম দলিল। পূর্বতন মেদিনীপুর জেলার ৫৪ টি পরগনার মধ্যে নাড়াজোল একটি উল্লেখযোগ্য পরগনা হিসেবে পরিচিত ছিল।

নাড়াজোল একটি প্রাচীন জনপদ। এই জনপদের রাজকীয় গরিমা মেদিনীপুরের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে আছে। সাক্ষী আছে ভগ্ন মন্দির, রাজবাড়ি, গড় দুর্গ ও পরিখার খাত। আজ থেকে ৫শ’ ৯৩ বছর আগে অরণ্যাবৃত এই ভুমিখণ্ডের অধিপতি ছিলেন বর্ধমান নিবাসী উদয়নারায়ন ঘোষ। উদয়নারায়নের আগমনকে কেন্দ্র করে খুব প্রাচীন একটি কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। উদয়নারায়ন শিকারের খোঁজে এই অঞ্চলে প্রবেশ করেন এবং শিকার করতে করতে গভীর জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেন। সন্ধ্যালগ্নে তিনি প্রত্যক্ষ করেন এক অলৌকিক দৃশ্য। একটি বক বাজপাখিকে আক্রমণ করেছে এবং সেই স্থানটি অনির্বচনীয় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। রাত্রে উদয়নারায়্ন দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান এবং সেই স্থান থেকেই দেবী জয়দুর্গার সোনার মূর্তি ও প্রচুর ধনসম্পদ লাভ করেন। সেই জয়দুর্গা আজও রাজবাড়িতে পূজিত হচ্ছেন। এই দেবী মূর্তি বহুবার চুরি গেছে কিন্তু প্রত্যেক বারই আশ্চর্যজনক ভাবে দেবী আপন স্থানে ফিরে এসেছেন।

উদয়নারায়ন নদী-নালা কেন্দ্রিক এই ভূখণ্ডে ৫৫ ঘর নিন্মজনজাতির অধীশ্বর হয়ে বসতি স্থাপন করেন। পরে উদয়নারায়ন তার স্বজাতীয় কিছু পরিবারকে বর্ধমান থেকে নিয়ে এসে বসবাসের ব্যবস্থা করেন। এই ভাবেই নাড়াজোল বনভুমি থেকে বাসভুমিতে পরিনত হয়ে ওঠে। উদয়নারায়নের পর প্রতাপনারায়ন এই অঞ্চলের অধিপতি হন। পরবর্তীতে উত্তরাধিকারসুত্রে যোগেন্দ্রনারায়ন, ভরতনারায়ন ও কার্ত্তিকরাম ঘোষ এই অঞ্চলের অধিপতি হন। প্রসঙ্গত এই কার্ত্তিকরাম বাংলার অধীশ্বর সোলেমান করবানির কাছ থেকে ঘোষ ‘রায়’ উপাধি লাভ করেন।

 

সেই থেকে নাড়াজোলের জমিদাররা রায় পদবি গ্রহন করেন। কার্ত্তিকরামের পর জয়মনি রায় ও শ্যামসিংহ রায় এই অঞ্চলকে জনপদে পরিনত করেন এবং শ্যামসিংহ ‘রায়’ এই অঞ্চলের সীমানা গ্রামে ‘ফতেগড়’ নামে একটি গড় নির্মাণ করেন। শাসন বাবস্থার সুবিধার জন্য মহামতি আকবর তার সাম্রাজ্যকে অনেকগুলি সুবা ও প্রদেশে বিভক্ত করেছিলেন। সুবার প্রধান শাসনকর্তা ছিলেন সুবাদার বা নাজিম, ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দে বলবন্ত রায় তদানীন্তন বাংলার নাজিমের কাছ থেকে খান উপাধি লাভ করেন। সেই থেকে নাড়াজোলের জমিদাররা খান পদবি গ্রহণ করেন। বলবন্তের পর গুণবন্ত খান এবং কালক্রমে অভিরাম খান, যদুরাম খান, মতিরাম খান, সীতারাম খান, ও আনন্দলাল এই অঞ্চলের অধিপতি হন।

এরপর অধিপতি হন মোহনলাল খান। মোহনলাল খানের সময়কাল থেকেই নাড়াজোলের স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাস শুরু। তার আমলে তৈরি স্থাপত্য কীর্তি গুলিতে ইন্দো-ইউরোপীয় শিল্প রীতির এক অপূর্ব সমন্বয় দেখা যায়। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে নাড়াজোলের খুব কাছেই লংকাগড়ে সাড়ে ষাট বিঘা জমিতে পুকুর খনন করে গৃহ নির্মাণ করেছিলেন, বর্তমানে এটি ‘জলহরি’ নামে পরিচিত। সেই সময় জলহরি নির্মাণ করতে খরচ হয়েছিল ৮০ হাজার টাকা। এছাড়াও রাজবাড়ির অন্তরগড়ে দেবালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অযোধ্যা থেকে মন্দিরের পাথর ও দেবমূর্তি এনে দেবালয় প্রতিষ্ঠা করতে খরচ হয়েছিল ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ১২৩৫ বঙ্গাব্দে ইংরেজি ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সামাট গ্রামে মোহনলাল একটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। এই মঠ তৈরি করতে তিনি ব্যয় করেছিলেন ১ লক্ষ টাকা।

১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ১২৩৭ সালের ফাল্গুন মাসে শ্মোহনলাল খান পরলোকগমন করেন। এরপর সুদীর্ঘ সময় ধরে আমরা দেখতে পাই নাড়াজোল রাজ পরিবারের উত্তরাধিকার প্রাপ্তির শরিকি অন্তরদ্বন্দ্ব ও আইনি লড়াই। যার পরিসমাপ্তি ঘটে মহেন্দ্রলাল খানের নাড়াজোল অধিপতি প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারত সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়ার জুবিলি উৎসব উপলক্ষে ইংরেজ সরকার মহেন্দ্রলাল খানকে ‘রাজা’ উপাধি প্রদান করেন। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার ১২৯৯ বঙ্গাব্দে ১ মাঘ শুক্রবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মহেন্দ্রলাল কোলকাতার বাসভবনে পরলোকগমন করেন। পিতার মৃত্যুর পর নরেন্দ্রলাল খান নাড়াজোলের অধীশ্বর হন। জমিদারির অধিকার পাওয়ার পর তিনি জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। নানা জনহিতকর কাজের জন্য ইংরেজ সরকার নরেন্দ্রলালকে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে ২৯ নভেম্বর ‘রাজা’ উপাধি প্রদান করেন।

বাংলার স্বদেশী আন্দোলনের ইতিহাসে নরেন্দ্রলাল খান এক স্মরণীয় নাম। পরাধীন ভারতবর্ষের শৃঙ্খল মোচনের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিলেন। একদা মেদিনীপুর গুপ্ত সমিতির কার্যকলাপ সারা বাংলায় বিস্তৃত হয়েছিলো। এই সমিতির জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু, হেমচন্দ্র কানুনগো, অরবিন্দ ঘোষ ও নরেন্দ্রলাল খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ১৬ অক্টোবর মেদিনীপুর, নাড়াজোল, ক্ষীরপাই পভৃতি অঞ্চলে অশৌচ দিবস পালন করে। তাই নরেন্দ্রলালের প্রতি ইংরেজ সরকারের দৃষ্টি সজাগ ছিল। ১৯০৮ সালের ২৮ শে আগস্ট নরেন্দ্রলালের গোপ প্রাসাদে পুলিশ তল্লাশি চালায় এবং মেদিনীপুর বোমা মামলায় নরেন্দ্রলালকে গ্রেপ্তার করে কনডেমড সেলে রাখা হয়। কিন্তু উপযুক্ত প্রমানের অভাবে নরেন্দ্রলালকে মুক্তি দিতে হয়। নরেন্দ্রলাল খান পরলোকগমন করেন ১৯২১ সালে।

এরপর দেবেন্দ্রলাল খান নাড়াজোলের অধিপতি হন। দেবেন্দ্রলাল জন্মগ্রহণ করেন বাংলার ১৩০০ সালের ২৪ শে ফাল্গুন। দেবেন্দ্রলাল খান ১৯২৬ সালে মেদিনীপুর জেলা বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৩৮ সালের ১০ ই এপ্রিল বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির কাযসমিতি গঠিত হলে সুভাষচন্দ্র বসু ঐ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯২৮ সালে কোলকাতায় মতিলাল নেহরুর সভাপতিত্বে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন বসে কোলকাতায়। মতিলাল নেহরু দেবেন্দ্রলালের বাসভবন থেকে এই অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। অধিবেশনে নেহরু রিপোর্ট নিয়ে প্রবল বাদানুবাদ হয়। একপর্যায়ে দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসু পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তোলেন। ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি সারা দেশের সঙ্গে নাড়াজোল রাজবাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তলন করেন দেবেন্দ্রলাল। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত এই দশ বছর দেবেন্দ্রলাল সরাসরি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি এই সময়ে গোটা মেদিনীপুর জেলা জুড়ে বিভিন্ন জনসভা করেন। তার ভাষণ ভীষণভাবে উদ্দীপ্ত করে মেদিনীপুরের গুপ্তসমিতির সদস্যদের। এরই ফলস্বরুপ তৎকালীন মেদিনীপুর জেলার তিন কুখ্যাত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বারজ, পেডি, ডগলাশকে তারা হত্যা করে।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে নাড়াজোলের রাজবাড়ির প্রথমদিকে পরোক্ষ ও পরবর্তী সময়ে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছিল, প্রসঙ্গত বলেরাখা দরকার যে শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর বাবা ত্রৈলোক্যনাথ বসু নাড়াজোল রাজবাড়ির অধীনে তহশিলদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সুত্রে কিশোর ক্ষুদিরাম অচিরেই নাড়াজোল রাজবাড়ির সংস্পর্শ লাভ করেন। নাড়াজোল রাজবাড়ির অন্দরে ছিল বিপ্লবীদের গোপন আস্তানা। সেখানে বিপ্লবীরা আত্মপগোপন করে থাকতেন। এই গোপন আস্তানায় চলতো অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও বোমা তৈরী করার কর্মকাণ্ড। যার প্রধান ছিলেন স্বয়ং হেমচন্দ্র কানুনগো। এ ছাড়া অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্র কুমার ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত সহ বহু গুপ্ত সমিতির সদস্যরাও এই গোপন আস্তানা থেকে গোপন সভা সংগঠিত করতেন। রাজপরিবারের সাথে এনাদের এক অটুট বন্ধনের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

১৯৩৮ সালের ১৭ ই মে সুভাষচন্দ্র বসু মেদিনীপুর শহরে আসেন। ১৮ ই মে ঘাটাল মহকুমাকে কেন্দ্র করে তিনটি জনসভা করেন। সভাশেষে তিনি নাড়াজোল রাজবাড়িতে পদার্পণ করেন। নাড়াজোল রাজবাড়ির সিংহ দরজার কাছে দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসুকে আপামর নাড়াজোলবাসী শাঁখ বাজিয়ে ফুল ছড়িয়ে অভ্যর্থনা জানায়। এখানে সুভাষচন্দ্র বলেছিলেন, আপনারা প্রস্তুত থাকুন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা প্রাপ্তি খুব শিগগির ঘটবে।

এরপর নেতাজি সুভাষচন্দ্র মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন জনসভায় বহুবার এসে উপস্থিত হন এবং এই প্রতিটি জনসভায় মুখ্য বক্তা ছিলেন দেবেন্দ্রালাল খান। এছাড়া গান্ধীজী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ সহ বহু বিশিষ্টজনেরা বিভিন্ন সময়ে নাড়াজোল রাজবাড়িতে পদার্পণ করেন। গান্ধীজী ১৯২৫ সালের ৭ জুলাই নাড়াজোল রাজবাড়িতে অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেন। ১৯২৯ সালে কাজী নজরুল ইসলাম নাড়াজোল রাজবাড়িতে পদার্পণ করেন। সময়টা ছিল এপ্রিল মাস। এই সময় তিনি সন্ধ্যায় রাজবাড়ির কাছারিতে জলসা চলাকালীন তাঁর বিখ্যাত গান “বাগিচায় বুলবুলি তুই” পরিবেশন করেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথেও ছিল দেবেন্দ্রালাল খানের এক নিবিড় সম্পর্ক। ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার তাঁকে দেশভক্ত সন্মান প্রদান করে। স্বাধীনতার পর দেবেন্দ্রালাল খান পরলোকগমন করেন।

এর পর থেকেই নাড়াজোল রাজপরিবার ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকে। নাড়াজোল রাজপরিবারের সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য নাম হল রানি অঞ্জলি খান। তিনি স্বাধীন ভারতবর্ষের মেদিনীপুর বিধানসভার পাঁচ বারের নির্বাচিত কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন। তিনি নারী শিক্ষার প্রসারে মেদিনীপুরের গোপ রাজবাড়ি ও নাড়াজোল রাজবাড়ি কলেজ প্রতিস্থাপন করার জন্য দান করেন। যা বর্তমানে মহিলা (গোপ) কলেজ এবং নাড়াজোল রাজ কলেজ নামে পরিচিত। রানি অঞ্জলি খান ২০০৫ সালেয় কলকাতাস্থিত বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং এরই সাথে সম্পাতি ঘটে নাড়াজোল রাজপরিবারের এক অনন্য ইতিহাসের কাহিনী।

বর্তমানে নাড়াজোল রাজপরিবারের ভগ্ন প্রাসাদ এবং তাকে কেন্দ্র করে প্রাচীন স্থাপত্য ও মন্দির গুলির যথাযথ সংরক্ষণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। বিশিষ্ট লেখক দেবাশীষ ভট্টাচার্য ও রাজপরিবারের বর্তমান বংশধর সন্দীপ খান সহ বহু বিশিষ্টজনেরা মিলে গঠিত করে নাড়াজোল পুরাতত্ত্ব সংরক্ষণ কমিটি। এই কমিটি রাজ্য হেরিটেজ কমিশন, জেলা প্রশাসন সহ রাজ্য প্রশাসনের কাছে দরবার করে সমস্ত পুরাকীর্তি গুলি কে সংরক্ষণ করার। তাদের এই দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলস্বরুপ ২০০৮ সালে নাড়াজোল রাজবাড়ি ও কিছু নির্দিষ্ট পুরাকীর্তি কেরাজ্য হেরিটেজ কমিশন হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমানে এই কমিটি জাতীয় স্বীকৃতির তকমা ও সম্ভবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নাড়াজোল সহ সমগ্র রাজবাড়িকে ঘোষণা করার সমস্ত রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তথ্য ঋণ
নাড়াজোলঃ এক অনন্য জনপদ
দেবাশীষ ভট্টাচার্য
সন্দীপ খান

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer