Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বারোমাসি কাঁঠালের জীবনরহস্য উন্মোচন: বাণিজ্যিকীকরণে নতুন আশাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:২৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৭:২৮, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

প্রিন্ট:

বারোমাসি কাঁঠালের জীবনরহস্য উন্মোচন: বাণিজ্যিকীকরণে নতুন আশাবাদ

ছবি: গবেষক দলের সৌজন্যে প্রাপ্ত

বাংলাদেশের বারোমাসি একটি কাঁঠালের জীবন রহস্য উন্মোচন করেছেন গবেষকরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি)-এর ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইজিবিই), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি, ন্যাশনাল রিচার্স কাউন্সিল, কানাডা এবং ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া-এর বিজ্ঞানীদের যৌথ গবেষণায় এই সাফল্য আসে। 

বিশিষ্ট জীবপ্রযুক্তি বিজ্ঞানী অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে সম্পন্ন হওয়া এই গবষেণা প্রবন্ধটি উচ্চ ইমপ্যাক্ট বিশিষ্ট বিজ্ঞান সাময়িকী ফ্রন্টিয়ারস ইন প্লান্ট সায়েন্স (DOI: 10.3389/fpls.2022.104442)-এ প্রকাশিত হয়েছে।

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। বিশ্বে কাঁঠাল উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। এটি পরপরাগী বর্ষা মৌসুমের একটি যৌগিক ফল। ওই মৌসুমে বাজারে আম, লিচু, জাম এবং অন্যান্য ফল প্রচুর পাওয়া যায়, এবং কাঁঠাল অতি পচনশীল হওয়ায় উৎপাদিত ফলের এক বিরাট অংশ পচে নষ্ট হয়। জাতের মধ্যে বিশাল বৈচিত্র্য থাকায় এবং শুধুমাত্র এক মৌসুমের ফল হওয়ায় দেশে আজ পর্যন্ত কাঁঠালের কোন বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়নি।

কাঁঠাল অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং পৃথিবীর সবচাইতে বড় ফল। বারোমাসি কাঁঠালের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচিত হওয়ায়, জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে নানা স্বাদের এবং বৈশিষ্ট্যের নতুন কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে, যা দেশে কাঁঠালের বাণিজ্যিক চাষাবাদ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের বিকাশে সহায়ক হবে।

বিজ্ঞানীরা আইবিজিই-তে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত ইলুমিনা সিকোয়েন্সিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কাঁঠালের জিনোম সিকুয়েন্স সম্পন্ন করেছেন। কাঁঠালের জিনোম আকার ১.০৪ গিগাবেজ পেয়ারস। বায়োইনফরমেটিকস বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা কাঁঠালের জিনোমে ফলের বৈশিষ্ট্য এবং বারোমাস ফল উৎপাদনকারী জিন ও ডিএনএ সিকুয়েন্সের স্বাতন্ত্র্য খুঁজে পেয়েছেন, যা কাঁঠালের জিন প্রকৌশল বা মলিকুলার ব্রিডিং-এ সহায়ক হবে।

গবেষক দলের প্রধান ড. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, “আমারা পৃথিবীতে প্রথম বারোমাসি কাঁঠালের একটি জাত বারি কাঁঠাল-৩-এর পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্স সম্পন্ন করেছি। এটি প্রাকৃতিকভাবে চট্টগ্রামের রামগরের পাহাড়ে জন্মানো একটি কাঁঠালকে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে জাত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটি সেপ্টেম্বর মাস থেকে জুন পর্যন্ত ফল দেয়, যার ফলন মৌসুমি কাঁঠালের চেয়ে চারগুন বেশি। ফলের স্বাদ ও পুষ্টিমানও খুব ভালো।’

তিনি বলেন, ‘আমারা এ গবেষণায় কাঁঠাল ফলের মধ্যে বিশাল বৈচিত্র এবং বারোমাস ফল প্রদানের সাথে সম্পর্কিত জিনসমূহকে শনাক্ত করেছি। আমাদের গবেষণার ফলাফল জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে বারোমাসি কাঁঠালের নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জাত উদ্ভাবনে সহায়ক হবে। কাঁঠালের বানিজ্যিক চাষের জন্য বারোমাসি এবং ফলের নানা বৈশিষ্ট্যের জাত প্রয়োজন, যা কাঁঠাল ভিত্তিক প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের বিকাশের পূর্ব শর্ত। কাঁঠালের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্স ডাটা যা আমরা জিনব্যাংকে জমা দিয়েছি, তা ভবিষ্যৎ জীবপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণায় বিশেষভাবে কাজে লাগবে।”

কাঁঠালের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী বিজ্ঞানীদের অন্যতম ড. অ্যান্ড্রু শার্প, যিনি বাংলাদশে কৃষি গবষেণা পরিষদ - গ্লোবাল ইনস্টটিউিট ফর ফুড সিকিউরিটি - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়-এর যৌথ গবষেণায় বঙ্গবন্ধু রিসার্চ চেয়ার হিসেবে কর্মরত।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল নিয়ে খুব একটা মলিকুলার পর্যায়ে গবেষণা হয়নি। এটি পুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। এদেশে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো একটি বারোমাসি জাতের কাঁঠালের জিনোম সিকুয়েন্স এবং সম্ভাব্য জিনের সনাক্তকরণ কাঁঠালের গবেষণার এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। উন্নত স্বাদ এবং উচ্চ পুষ্টিমান বিশিষ্ট কাঁঠালের জাত উদ্ভাবনের গবেষণায় তা কাজে লাগবে। দেশে কাঁঠালভিত্তিক নতুন শিল্পের প্রসারের সম্ভাবনা তৈরি হলো। যেহেতু বাংলাদেশের কাঁঠালের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্স বিশ্ব জিনব্যাংক-এ প্রকাশিত হয়েছে, এখন তা পৃথিবীর সকল আগ্রহী বিজ্ঞানীরা গবেষণায় ব্যবহার করতে পারবেন। কাঁঠালের উৎপত্তিস্থল নির্ণয় এবং কিভাবে কাঁঠাল বন্য অবস্থা থেকে মানুষের খাবার উপযোগী হলো তাও জানা যাবে।”

উল্লেখ্য, কাঁঠালের জীবন রহস্য উন্মোচন প্রকল্পটির অর্থায়ন করেন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রাণালয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আইবিজিই-তে ইলুমিনা সিকোয়েন্সিং প্লাটফম তৈরি করে। জিনোম সিকুয়েন্স ডাটার বায়োইনফরম্যাটিকস্ বিশ্লেষণে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি ও ড. অ্যান্ড্রু শাপর্ - এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার আংশিক অর্থায়ন করেছে। ডাটা বিশ্লেষণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে স্থাপিত বিডিরেন সার্ভার ব্যবহার করা হয়েছে।

ইতিপূর্বে, ড. তোফজ্জল ইসলাম দেশে গমের মহামারী ব্লাস্ট রোগ সৃষ্টিকারী ছত্রাকের জিনোম বিশ্লেষণ করে রোগটির কৌলিক বৈশিষ্ট এবং উৎপত্তিস্থল নিরুপণে গবেষকদলের নেতৃত্ব দেন। তাঁর আবিস্কারের ফলে পরবর্তী বছরগুলোতে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হয়। তিনি অগ্রসরমান প্রযুক্তি ব্যবহারে মাত্র ৩০ মিনিটে গমের ব্লাস্ট রোগ সনাক্তকরণের জীবপ্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেন।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer