উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের জানাজা মঙ্গলবার বাদ জোহর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হবে। এর আগে বেলা ১২টা থেকে তার মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে।
জানাজা ও দাফনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসান আজিজুল হকের ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান।
এর আগে সোমবার রাত সোয়া ৯টয় রাজশাহী শহরের বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটিতে (বিহাস) অবস্থিত নিজ বাসভবন ‘উজান’-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর হাসান আজিজুল হক।
দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তার মৃত্যুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার গভীর শোক প্রকাশ করেন। উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী এম জাকারিয়া ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলামও পৃথক শোকবার্তা দিয়েছেন।
এক শোকবার্তায় উপাচার্য বলেন, হাসান আজিজুল হকের চলে যাওয়া এক বিশাল নক্ষত্রের পতন। তার চলে যাওয়াতে বাংলা শিল্প-সাহিত্য এক বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল। তবে তিনি তার অবদানের জন্য বাঙালির হৃদয়ে চিরজাগরূক থাকবেন। জাতি তার অবদান চিরকাল স্মরণ করবে।
প্রফেসর হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালে ভারতের বর্ধমান জেলার যব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক এবং ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০৪ সালে প্রফেসর হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেবার পূর্বে ১৯৬০ সাল থেকে তিনি কয়েকটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ হিসেবে যোগদান করেন।
প্রফেসর হাসান আজিজুল হক তার অসাধারণ সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে একুশে পদক ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এর পাশাপাশি তিনি লেখক শিবির পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করেন।
সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ২০১৮ সালে “সাহিত্যরত্ন” উপাধি লাভ করেন। ২০১২ সালে ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সন্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করে।
তার রচিত জনপ্রিয় গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য, আত্মজা ও একটি করবী গাছ, জীবন ঘষে আগুন, নামহীন গোত্রহীন, পাতালে হাসপাতালে, আমরা অপেক্ষা করছি, রোদে যাবো, রাঢ়বঙ্গের গল্প ইত্যাদি। আগুনপাখি ও শামুক যথাক্রমে তার রচিত প্রথম ও শেষ উপন্যাস। তাঁর লেখা গল্পসমূহ হিন্দি, উর্দু, রাশিয়ান ও জাপানিজ ইত্যাদি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
তিনি মৃত্যুর সময় তিন কন্যা এবং এক পুত্র রেখে গেছেন। তার সহধর্মিনী শামসুন নাহার ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইন্তেকাল করেন।