Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

বাক-বিতণ্ডায় শেষ হলো ট্রাম্প-বাইডেন বিতর্ক

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ২৩ অক্টোবর ২০২০

প্রিন্ট:

বাক-বিতণ্ডায় শেষ হলো ট্রাম্প-বাইডেন বিতর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের শেষ বিতর্ক করোনাভাইরাস, বর্ণবাদ নিয়ে বাক-বিতণ্ডা এবং একে অপরকে দুর্নীতির অভিযোগ দেয়ার মাধ্যমে শেষ হয়েছে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে আরো লকডাউনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বাইডেন। অন্যদিকে ট্রাম্প মনে করেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত বিবিধ নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে সবকিছু উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত।

বাইডেন তার ছেলের ব্যবসায়িক কার্যক্রম থেকে সরাসরি সুবিধা পেয়েছেন, অসমর্থিত সূত্র উদ্ধৃত করে এরকম অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প। জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর দেয়ার ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার বিষয়টি উল্লেখ করে পাল্টা অভিযোগ তোলেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ১১ দিন আগে হওয়া বিতর্ক শেষে মনে করা হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় মি. বাইডেন বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবসময় বেশি সংখ্যক ভোট পেলেই যে জয়ী হওয়া সম্ভব, সেরকম নয়। আর কিছু রাজ্যে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হতে পারে খুবই কম ভোটের ব্যবধানে। সে সব রাজ্যের ফলাফল নির্বাচনের সার্বিক ফল বদলে দিতে পারে।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ভোট ব্যহত হওয়ায় এরই মধ্যে চার কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষ তাদের ভোট দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রায় ২৩ কোটি ভোটার রয়েছে। গত ২৯শে সেপ্টেম্বর প্রথম বিতর্কে দুই প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে যেভাবে অপমানসূচক মন্তব্য করেছিলেন, সেই তুলনায় বৃহস্পতিবার রাতে টেনেসির ন্যাশভিলে হওয়া বিতর্কটি ছিল অপেক্ষাকৃত কম আকস্মিক এবং সংক্ষিপ্ত।

আগের বারের বিতর্কে হওয়া রাজনৈতিক বচসার বিষয়টি মাথায় রেখে আয়োজকরা এবার কোনো একটি বিষয়ে একজন প্রার্থীর উদ্বোধনী বক্তব্যের সময় অন্য প্রার্থীর মাইক্রোফোন বন্ধ করে রেখেছিলেন যেন প্রার্থীদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা সীমিত রাখা সম্ভব হয়।

কিন্তু তা সত্ত্বেও এনবিসি`র সঞ্চালক ক্রিস্টেন ওয়াকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ৯০ মিনিটের বিতর্কে বেশ কয়েকবার দুই প্রার্থীই একে অপরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। নিজেদের সমাপনী বক্তব্যে দুই প্রার্থীই যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিপরীতমুখী বক্তব্য দিয়েছেন। বিতর্কের যে কোনো বিষয়ের চেয়ে করোনাভাইরাস ইস্যুতে দুই প্রার্থীর বক্তব্যের ধারা ছিল সবচেয়ে বিপরীতমুখী।

ডেমোক্র্যাট বাইডেনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, বিজ্ঞানীরা যদি আবারো লকডাউন আরোপ করার সুপারিশ করে তাহলে তিনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন। জো বাইডেন লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। কিন্তু ট্রাম্প এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, যে সংক্রমণ থেকে অধিকাংশ মানুষই সেরে ওঠে, সেরকম একটি সংক্রমণের কারণে পুরো অর্থনীতির ক্ষতি করার মত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, "আমেরিকা বৃহৎ একটি দেশ এবং একটি বড় অর্থনীতি। মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, আত্মহত্যা করছে। মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা ভর করছে, এরকম পরিস্থিতি এখানে আগে কখনো দেখা যায়নি।"

চুয়াত্তর-বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেন যে করোন ভাইরাস `চলে যাচ্ছে` এবং এই বছরের শেষের দিকে ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যাবে। অন্যদিকে, বাইডেন আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে জাতি পশ্চাৎপদবর্তী হয়ে `অন্ধকারাচ্ছন্ন শীতকালের` দিকে ধাবিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ এ দুই লাখ ২০ হাজারের বেশি আমেরিকানের মৃত্যুর দায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর চাপিয়েছেন তিনি।

বাইডেন বলেছেন, "এই সংখ্যায় মৃত্যুর জন্য দায়ী কোনো ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা উচিত না।" বিতর্কে বর্ণবাদ নিয়ে কথা হওয়ার সময় ট্রাম্প একপর্যায়ে বলেন: "এই রুমে সবচেয়ে কম বর্ণবাদী মানুষ আমি।"

বর্ণবাদ ইস্যুতে বাইডেনকে আঘাত করার সময় ট্রাম্প ১৯৯৪ সালের অপরাধ আইনের বিষয়টি তুলে ধরেন, যেই আইনটির খসড়া তৈরিতে জো বাইডেনের ভূমিকা ছিল। `ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার` আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্তরা আফ্রিকান-আমেরিকানদের বিপুল সংখ্যায় হত্যা করার নেপথ্যের কারণ হিসেবে এই আইনটিকে দায়ী করে।

কিন্তু বাইডেন বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প আধুনিক ইতিহাসে `আমাদের সবচেয়ে বর্ণবাদী প্রেসিডেন্টদের একজন।` "বর্ণবাদকে উস্কে দেয়া প্রত্যেকটি ঘটনায় তিনি ঘি ঢেলেছেন।"

চীনের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকার ইস্যুতেও দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী একে অন্যকে দোষারোপ করেন। চীনের সাথে বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকার বিষয় নিয়ে মেইল ফাঁস হওয়ার ঘটনাটি বিতর্কে তুলে আনেন ট্রাম্প। তবে ঐ ব্যবসায় বাইডেনের অংশীদারিত্ব আছে বলে ট্রাম্প অভিযোগ তুললে তা অস্বীকার করেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী।

ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেন: "আমার মনে হয় আপনার কাছ থেকে এই বিষয়ের ব্যাখ্যা আমেরিকার মানুষের প্রাপ্য।" জবাবে বাইডেন বলেন: "আমি কোনো দেশ থেকে একটি পেনিও নেইনি। কখনোই না।"

জলবায়ু পরিবর্তনকে বাইডেন `মানব জাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি` হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং দূষণকারীদের ওপর থেকে কর কমানোর দায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর দোষ চাপান। বাইডেন বলেন, "আরো চার বছরের জন্য যদি জলবায়ু পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের তৈরি করা সব নিয়মকানুন এই ব্যক্তি বাতিল করতে থাকে ... তাহলে আমরা এমন অবস্থায় পৌঁছবো যেখানে আমরা বড় ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হব।"

ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহারের স্বপক্ষে যুক্তি দেন যে, তিনি জলবায়ু চুক্তির জন্য `কোটি কোটি চাকরি, হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান`র ক্ষতি করবেন না। প্রত্যাশিতভাবেই, দুই প্রার্থীই দায়িত্বে থাকাকালীন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারার অভিযোগ তুলেছেন একে অপরের দিকে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেকদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা তৈরি করার পরিকল্পনার কথা জানালেও `কখনোই কোনো পরিকল্পনা তৈরি করেননি` বলে অভিযোগ তোলেন বাইডেন।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জো বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, "জো, আমি নির্বাচন করেছি তোমার জন্য, কারণ তুমি ও বারাক ওবামা দায়িত্বে থাকার সময় কোনো কাজ করনি।" বিবিসি বাংলা 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer