ঢাকা: বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া করোনাভাইরাস প্রশমিত করতে যথেষ্ট জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আক্রান্তের ঘটনা ঘটলে আমরা তা প্রতিরোধে সক্ষম। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ মিলনায়তনে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় এই মতামত তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ ও বাংলাদেশ সোসাইটি অফ মাইক্রোবায়োলজিস্ট যৌথভাবে এই কর্মশালা আয়োজন করে।
আইসিডিডিআর,বি-র ভাইরোলজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডাঃ সাইফ উদ্দিন মুনশী কর্মশালায় সাম্প্রতিক সময়ে চীন থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মোকাবেলার নানাদিক নিয়ে আলোচনা করেন। রাজধানীর বিভিন্ন চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা এতে অংশ নেন।
সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোন এন-করোনা ভাইরাস (Novel Coronavirus) সংক্রমিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। তথাপি, যেহেতু এই ভাইরাসটি অত্যন্ত স্বল্প সময়ে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে; তাই এই ভাইরাস সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
ডাঃ সাইফ উদ্দিন মুনশী ভাইরাসটিকে ‘সুপার স্প্রেডার’ আখ্যায়িত করে একে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে সাধারণ স্বাস্থ্যগত অভ্যাস অনুসরণ করতে সকলকে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাস সংক্রমণের অধিক আশঙ্কা রয়েছে কম বয়সী শিশু, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি, ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগী ও অন্যান্য অসুখের কারণে দূর্বল হয়ে যাওয়া মানুষ।’
বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, ‘রোগের লক্ষণবিহীন বাহকরা (Asymptomatic carrier) হলো এ রোগের অন্যতম উৎস, তাই এই রোগটি ছোঁয়াচে। জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট এ রোগের উপসর্গ। এগুলো লক্ষণ দেখা দিলেই তৎক্ষনাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।’
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভাইরাসটি দেশের অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত ভাইরাস অপেক্ষা কম মারাত্মক। বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া এ রোগ প্রশমিত করতে যথেষ্ট। যদি কারও করোনাভাইরাস আক্রান্তের ঘটনা ঘটে তবে তার প্রতিরোধে আমরা সক্ষম।’
যদিও ডাঃ সাইফ উদ্দিন মুনশি ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের এতটা আশাবাদী হওয়া উচিত নয়, বরং সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। তিনি প্রত্যেককে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সচেতন ভাবে চলাফেরা ও জীবনযাপনের পরামর্শ দেন।’
এই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ-বাথরুমে যাওয়ার পর, খাবার আগে, নাক ঝাড়ার পরে, কাশি বা হাচি দিলে কমপক্ষে বিশ সেকেন্ড সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, সাবান না থাকলে এ্যালকোহল সম্বৃদ্ধ জীবানুনাষক হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়া, হাত নোংরা দেখলেই তা পরিস্কার করা, চোখ, নাক এবং মুখ আধোয়া হাতে না ধরা, অসুস্থ ব্যক্তি থেকে দুরে থাকা, নিজে অসুস্থ হলে বাসায় থাকা, রুমাল বা টিস্যু চেপে কাশি দেয়া এবং রুমালটি ময়লার বাক্সে ফেলে দেয়া; ঘরের আসবাব ও ব্যবহৃত জিনিস ক্লিনিক স্প্রে দিয়ে জীবানুমুক্ত রাখা। ডাঃ সাইফের এই সমস্ত নির্দেশনা মেনে চললে করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব বলে তিনি মত দেন।
বহুমাত্রিক.কম