ছবি- বহুমাত্রিক.কম
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের অধীনস্থ মৌলভীবাজারের বর্ষিজোড়া ইকোপার্কের বনে ফেলা হচ্ছে শহরের ময়লা-আবর্জনা ও ব্যবহৃত বোতলজাত প্লাস্টিক বর্জ্য। বনের ওই এলাকায় মৌলভীবাজার স্টেডিয়াম সংলগ্ন টিলা কেটে অবৈধ রাস্তা নির্মাণেরও কাজ চলমান রয়েছে। এসব বিষয়ে বনবিভাগ পৌর মেয়রের কাছে কার্যক্রম বন্ধ রাখার লিখিত আপত্তি জানালেও তা বন্ধ হয়নি। ফলে পরিবেশ দুষণ ও জনসাধারণের জীবন যাপনে ক্ষতি এবং বন্যপ্রাণির মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৌলভীবাজার শহরের স্টেডিয়াম সংলগ্ন বর্ষিজোড়া পার্কের বনাঞ্চলে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জন ও বোতলজাত প্লাস্টিক বর্জ্য। বেশ কিছুদিন ধরে শহরের এসব ময়লা-আবর্জনা ও ব্যবহৃত প্লাস্টিক ফেলার কারনে বনের পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। ময়লা ফেলার জন্য ওই স্থান দিয়ে বনের টিলা কেটেও অবৈধভাবে রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। এসকেবেটরের মাধ্যমে টিলার পার্শ্ববর্তী লাল মাটি কেটে রাস্তা প্রশস্ত করা হচ্ছে। এতে বনাঞ্চল ও এলাকার পরিবেশ দুষিত, মশা-মাছির উপদ্রব বেড়ে যাবে ও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পশুপাখি ও বন্যপ্রাণির জন্য ব্যবহৃত এসব বোতলজাত প্লাস্টিক খুবই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বন্যপ্রাণী বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯১৬ সনের ১৭ নভেম্বর সরকারি প্রজ্ঞাপনে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার অন্তর্গত বর্ষিজোড়া সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি মৌলভীবাজার স্টেডিয়াম সংলগ্ন সংরক্ষিত এই বনের জায়গায় শহরের ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য পদার্থ ফেলার কারনে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে ফেলা প্লাস্টিক, পলিথিন ও পচনশীল দ্রব্য না হওয়ায় বন্যপ্রাণির মারাত্মক ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বনাঞ্চলে নানা রকম বন্যপ্রাণি ও পাখির বিচরণ রয়েছে। এতে শহরের বর্জ্য-আবর্জনার স্তুপ ও দুর্গন্ধ প্রকৃতি ও পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। স্তুপিকৃত ময়লা-আবর্জনার বর্জ্য খেয়ে বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংরক্ষিত বনের জায়গায় গাড়ি চলাচলের জন্য মাটি কেটে রাস্তা তৈরির ঘটনা অবৈধ ও জবর-দখলের হীন স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। বনের টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণ তা মোটেও সঠিক হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্ষিজোড়া ইকো পার্কে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন। বনের প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে শহরের নারী ও শিশুদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তবে বনের টিলায় শহরের ময়লা ফেলে পরিবেশকে বিনষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার গন্ধে স্থানীয় পরিবেশকেও বিনষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। এখানে জেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ থাকার পরও এধরণের কার্যক্রম মোটেও বোধগম্য নয় বলে তারা মন্তব্য করেন।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বিষয়টি খুবই দু:খজনক দাবি করে বলেন, এই জমিটুকু আমাদের বর্ষিজোড়া ইকো-পার্ক তথা বনবিভাগের। এখানে শহরের ময়লা ও ব্যবহৃত বোতলজাত আবর্জনা ফেলা মোটেও ঠিক হয়নি। তাছাড়া বনের টিলা কেটে অবৈধভাবে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এবিষয়ে মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র সাহেবকে ময়লা ফেলা বন্ধ ও রাস্তা নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।
এব্যাপারে মৌলভীবাজার পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, আসলে পরিত্যক্ত জমি থাকায় সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জমি জেনে তাদের সাথে কথা বলে এখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। তবে বনবিভাগের কাছ থেকে এবিষয়ে আপত্তি পাওয়া গেছে। আমাদের ডাম্পিং স্টেশন হয়ে গেলে ময়লা ফেলার কোন অসুবিধা হবে না। অন্যদিকে বনের টিলা কেটে অবৈধ কোন রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।
বহুমাত্রিক.কম