Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বন যতদিন থাকবে, ততদিন গাছ চুরি হবে: বন কর্মকর্তা

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:১৭, ২২ অক্টোবর ২০২০

প্রিন্ট:

বন যতদিন থাকবে, ততদিন গাছ চুরি হবে: বন কর্মকর্তা

কেটে নেওয়া গাছের গুড়ি

মৌলভীবাজার: লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেছেন, বন যতদিন থাকবে, ততদিন গাছ চুরি হবে। লাউয়াছড়ায় গাছ চুরি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ বিষয়ে সাংবাদিকদেরও প্রতি বিষোদগার করে এই বন কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বল্প জনবল দিয়ে ১২৫০ হেক্টরের লাউয়াছড়া বিশাল বন রক্ষা করা খুবই কঠিন।’ ক্রমাগত বনের বৃক্ষ নিধনের বিষয়ে এই প্রতিবেদক মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে এসব কথা বলেন মোনায়েম হোসেন।

মৌলভীবাজারের এক টুকরো বন লাউয়াছড়াকে ১৯৯৬ সনে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। জাতীয় এই উদ্যানটিতে বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণির আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। তবে এই বনের টিলা থেকে রাতের আঁধারে গাছ চুরি অব্যাহত আছেই। সম্প্রতি বনের দু’টি টিলা ঘুরে কেটে নেয়া ৬টি গাছের তাজা গুড়ি পাওয়া যায়। এতে বন্যপ্রাণির জন্য বাড়ছে হুমকি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, লাউয়াছড়া উদ্যানের বাঘমারা বন ক্যাম্প সংলগ্ন মন্ত্রিরটিলা থেকে অতি সম্প্রতি মেহগনি ও চিকরাশি প্রজাতির ছয়টি গাছ চুরি হয়েছে। কালের স্বাক্ষী হয়ে পড়ে আছে এসব গাছের গুড়ি। এগুলোতে কোন মার্কিং করা হয়নি। বাঘমারা ক্যাম্পের সম্মুখে ও মুজিবের উঠনি টিলার কিছু অংশে গত আগষ্ট মাসের শেষে কেটে নেয়া চারটি গাছের গোড়া পরিত্যক্ত পাওয়া যায়। তবে এসব বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কিংবা সহকারী বন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয় না বা ঘুরে দেখানোও হয় না। কেটে নেয়া গাছের গুড়ি মাটি ও পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।

রেলপথ, সড়কপথ ও বিদ্যুত লাইনের ঝুঁকির মধ্যে থাকা লাউয়াছড়া উদ্যানের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের জন্য প্রতিকুল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নানা সময়ে সড়কপথ, রেলপথ ও বৈদ্যুতিক তারে পৃষ্ট হয়ে বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। তার উপর গাছ চুরি বনের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। স্বল্প জনবলের কারণে বনের বিশাল এলাকা দেখভাল করা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে বন্যপ্রাণি বিভাগ দাবি করছে।

উদ্যানের লাউয়াছড়া, কালাছড়া ও চাউতলী তিনটি বনবিটের মধ্যে বিট কর্মকর্তাসহ আছেন মাত্র ১২ জন লোক। এদের সাথে দেখাশুনায় কিছু কো-ম্যানেজমেন্ট থাকলেও বর্তমানে তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এসব কো-ম্যানেজমেন্টের কিছু অসাধু লোকও গাছ চুরির সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দু’একদিন পর পরই গভীর রাতে কেটে নেয়া হয় গাছ। বনের মধ্যে সময় নিয়ে ঘুরে বেড়ালে এমন অসংখ্য গাছের গুড়ি পাওয়া যাবে। চোখে না পড়ার জন্য অনেক গাছে গুড়ি লতাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। কো-ম্যানেজমেন্টের কিছু সদস্যসহ স্থানীয় পর্যায়েও কিছু কর্মকর্তারা জড়িত আছেন। এসব বিষয়ে কিছু বলতে গেলেই রেঞ্জ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ক্ষোব্দ হয়ে উঠেন।

মূল্যবান গাছ গাছালি চুরি হওয়ায় বনের গভীরতা হ্রাস ও ফাঁকা হচ্ছে টিলাভূমি। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘ দিন ধরে রাতে বনের ভেতর থেকে বৃহদাকার গাছ গাছালি কেটে পাচার করছে। কেটে নেয়া এসব গাছের খন্ডাংশ পিকআপ ও ঠেলাগাড়ি যোগে দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়। ফলে হুমকির মুখে লাউয়াছড়া উদ্যানের জীববৈচিত্র্য।

এসব বিষয়ে লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন মোবাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন যতদিন থাকবে, ততদিন গাছ চুরি হবে। স্বল্প জনবল দিয়ে ১২৫০ হেক্টরের লাউয়াছড়া বিশাল বন রক্ষা করা খুবই কঠিন। তাছাড়া সাংবাদিকেরা এসব বিষয় নিয়ে বেশি লেখালেখি করে। বর্তমানে কোন গাছ চুরি হচ্ছে না এবং গাছের গুড়িগুলো পূর্বের বলে তিনি দাবি করেন।

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী জাতীয় উদ্যান রক্ষায় সকলের সহযোগিতা দাবি করে বলেন, স্বল্প জনবল হলেও বন রক্ষায় আমাদের যথারীতি দায়িত্ব রয়েছে। এখানে একটি গাছও যাতে চুরি না হয় সে বিষয়ে আমরা তৎপর রয়েছি। গাছ চুরি হওয়ার কোন সংবাদ নেই। তারপরও অভিযোগের বিষয়ে গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer