বগুড়া জিলা স্কুলের সাবেক শিক্ষক ও বগুড়ার বিশিষ্ট নাট্যকার নাট্য অভিনেতা শ্যামল ভট্টাচার্য আর নেই।চিকৎসাধীন অবস্থায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বুধবার রাত ৮টায় পরলোক গমন করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
কয়েকদিন আগে বগুড়ায় নিজ বাড়িতে মাথায় রক্তক্ষরণজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়। সেখান থেকে ফিরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয় তাকে।
পরিবারে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন নাট্যকার শ্যামল ভট্টাচার্য। তিনি বেশ কিছু নাটক রচনা করেন। বগুড়া, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মঞ্চে নাটকে অভিনয়ও করেছেন।
শ্যামল ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ১০ আগস্ট বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বগুড়া জিলা স্কুলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্টস বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। এছাড়া সংস্কৃত এবং আরবি ভাষাতেও তিনি সমান দক্ষ ছিলেন। প্রায় ৩৩ বছর শিক্ষকতা শেষে ২০০০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ডিপ্লোমা প্রকৌশলী শ্যামল রঞ্জন ভট্টাচার্য শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হওয়ার আগে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ শেষে তৎকালীন গ্রেটার চিটাগাং ইলেকট্রিসিটি বোর্ডে সাব অ্যাসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।
ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি সচেতন শ্যামল ভট্টাচার্য ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় ৩০০ ছাত্রকে নিয়ে মিছিল বের করেছিলেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি নিজ মহল্লা জলেশ্বরীতলা এলাকার নিরক্ষরদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সহপাঠীদের নিয়ে নৈশ বিদ্যালয় চালু করেছিলেন। দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের জেলা কমিটির পাঠাগার সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলেন। শিক্ষা দিয়ে মানুষকে আলোকিত করার উদ্যোগটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছিলেন শ্যামল ভট্টাচার্য। তার উদ্যোগেই বগুড়ায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়।
শিক্ষার পাশাপাশি নাট্য আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন শ্যামল ভট্টাচার্য। ১৯৭২ সালে তিনি বগুড়া নাট্য গোষ্ঠী নামে একটি নাটকের দল গঠন করেন। নাট্য মঞ্চের নিয়মিত শিল্পী শ্যামল ভট্টাচার্য ১৯৮৭ সালে ‘বগুড়া নাট্য দল’ নামে নতুন আরও একটি দল গঠন করেন। নাট্য আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে নতুন মুখ তৈরিতেও কাজ করে গেছেন তিনি। এজন্য শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে বগুড়া নাট্য দলের কার্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নিতেন গুণী এ নাট্য ব্যক্তিত্ব।
সর্বশেষ ২০১৩ সালে তিনি ‘খারিজ’ নামে একটি নাটকে অভিনয় করেন। প্রবীণ এ শিক্ষাবিদ ও নাট্য ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বগুড়া থিয়েটার, কলেজ থিয়েটার, শব্দকথন সাহিত্য আসর, জাতীয় কবিতা পরিষদ বগুড়া জেলা শাখা, প্রকাশ শৈলী, ভোরহলো, বগুড়া বাউল গোষ্ঠি, আনন্দকণ্ঠ, নান্দনিক নাট্য দল, বগুড়া নাট্যগোষ্ঠি, বগুড়া নাট্যদলসহ বগুড়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠন।