মুক্তিযুদ্ধের শব্দসৈনিক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনের অন্যতম নেতা শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফীকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানিয়েছে সর্বসাধারণ।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মুশতারী শফীর কফিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তার কফিনে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার তার মরদেহ চট্রগ্রাম নেওয়া হবে। সেখানে আরেকদফা জানাজা শেষে গার্ড অফ অনার প্রদানের পর তাকে সমাহিত করা হবে।
এর আগে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গিয়ে জায়া বেগমের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখান থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ১৪ ডিসেম্বর আইসিইউতে নেওয়া হয়। সোমবার বিকালে সিএমএইচের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুশতারী শফীর জন্ম। তার বাবার বাড়ি ফরিদপুরে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ এপ্রিল তার স্বামী চিকিৎসক মোহাম্মদ শফী ও ছোট ভাই এহসানুল হক আনসারীকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দিন পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন বেগম মুশতারী।
নারী অধিকার আদায়ে দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন মুশতারী শফী। ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম থেকে ‘বান্ধবী’ নামে মাসিক সাময়িকী প্রকাশ করেছিলেন। এটি ছিল বাংলাদেশের নারীদের জন্য দ্বিতীয় সাময়িকী।
একাত্তর পরবর্তী সময়ে তিনি ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম সংগঠক। মুশতারী শফী ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী’, ‘চিঠি’, ‘জাহানারা ইমামকে’ এবং ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’ প্রভৃতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখায় ২০১৬ সালে শহীদজায়া মুশতারী শফীকে ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। ২০২০ সালে পান বেগম রোকেয়া পদক এই মহীয়সী নারী।