Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

প্রায়ই রক্তচাপ ওঠা-নামা করে : এ সব নিয়মে সুস্থ থাকুন

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ২১ জুন ২০১৯

প্রিন্ট:

প্রায়ই রক্তচাপ ওঠা-নামা করে : এ সব নিয়মে সুস্থ থাকুন

ঢাকা : রক্তচাপ ১২০/৮০–র নীচে নেমে গেলে শুরু হয় আমাদের টেনশন৷ কারণ আমরা ধরে নিই যে লো–প্রেশারে ভুগছি৷ কিন্তু রক্তচাপ ১২০/৮০–র নীচে থাকলে তা মোটেই লো–প্রেশার নয়, বরং খুব ভাল ব্যাপার৷ কারণ এ রকম রক্তচাপে হৃদযন্ত্র, বৃক্ক, মস্তিষ্ক, সব সুরক্ষিত থাকে৷

এমনকি ৯০/৬০ প্রেশার থাকা সত্ত্বেও যদি কোনও সমস্যার উদ্রেক না হয়, তার জন্য এই রক্তচাপ স্বাভাবিক৷ প্রেশার ৯০/৬০–এরও নীচে নেমে গেলে তখনই একমাত্র তাকে লো–প্রেশার বলে৷ তবে ব্যতিক্রমও আছে৷ কারও যদি আগে ১২০/৮০ প্রেশার থাকত, হঠাৎ ১০০/৬০ হয়ে গেছে এবং তার জন্য তাঁর সমস্যা হচ্ছে, তা হলে তাঁর লো–প্রেশার হয়েছে বলে ধরতে হবে বলেই মত চিকিৎসকদের৷

কিছু মানুষের এমনিই রক্তচাপ একটু কমের দিকে থাকে৷ তা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে বরং খুশি হওয়া উচিত৷ কারণ তাঁদের শরীর, বিশেষত হৃদযন্ত্র, বৃক্ক, মস্তিষ্ক সব সুরক্ষিত থাকে এর ফলে৷


সমস্যার উপসর্গ

শোওয়া থেকে বসলে বা দাঁড়ালে মাথা ঝিম ঝিম করে চোখ অন্ধকার করে আসে৷
মাথা ঘুরতে পারে৷ বাড়াবাড়ি হলে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন৷

বুক ধড়ফড়, হাত–পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ঘাম, দুর্বলতা ইত্যাদি থাকতে পারে সঙ্গে৷
সমস্যার কারণ

রক্তচাপ কমানোর ওষুধ বিশেষ করে ডাইইউরেটিক খেলে প্রেশার হঠাৎ করে কমে যেতে পারে৷

ডায়াবিটিসে ভুগছেন এমন বয়স্ক মানুষদের অনেক সময় ‘পশ্চুরাল হাইপোটেনশন’ নামে এক বিশেষ ধরনের সমস্যা হয়৷ অর্থাৎ শোওয়া থেকে উঠে বসলে বা দাঁড়ালে হঠাৎ প্রেশার বেশ খানিকটা কমে গিয়ে মাথা ঝিমঝিম করে চোখ অন্ধকার করে আসে৷ বাড়াবাড়ি হলে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন তিনি৷ প্রেশারের ওষুধের ডোজ বেশি হয়ে গেলে অন্যদেরও এই একই সমস্যা হতে পারে৷

ডায়েরিয়া, বমি বা ঘাম হয়ে শরীর থেকে প্রচুর লবণ–জল বেরিয়ে গেলে কিংবা খুব বেশি রক্তপাত হলে সমস্যা হয়৷

হার্ট অ্যাটাকের ঠিক আগে কিংবা হার্ট অ্যাটাকের অব্যবহিত পরে আচমকা প্রেশার অনেক কমে যেতে পারে৷

সেপ্টিসেমিয়া জাতীয় সংক্রমণ দেখা দিলে এমন সমসায হতেই পারে।

‘অ্যাডিসনস ডিজিজ’ নামে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির অসুখে ভুগলে রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে৷

লো–প্রেশারের ক্ষতি

বয়সের সঙ্গে প্রেশার বাড়া–কমার একটা নিজস্ব নিয়ম থাকে৷ যেমন, মানুষ যতদি ন বাঁচেন সিস্টোলিক প্রেশার বা উপরের রক্তচাপ বাড়তে থাকে৷ ডায়াস্টোলিক প্রেশার বা নীচের রক্তচাপ আবার ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত বাড়ে৷ তার পর ৬০–৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত এক জায়গায় স্থির থাকে৷ তার পর কমতে শুরু করে৷ কমতে কমতে যাতে ৬৫–র নীচে না নেমে যায়, সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার৷

প্রেশার হঠাৎ অনেকটা কমে গেলে বা ক্রমাগত কমে যেতে থাকলে তাকে হালকা ভাবে নেবেন না৷ কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা কিন্তু গুরুতর অসুখের পূর্বাভাস৷ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে প্রাণ চলে যেতে পারে৷

প্রেশার একটু কমের দিকে থাকা ভাল হলেও বেশি বয়সে ডায়াস্টোলিক প্রেশার অর্থাৎ নীচের রক্তচাপ ৬৫–র নীচে নেমে গেলে হার্টের নিজস্ব ধমনীগুলির (করোনারি আর্টারি) মধ্যে রক্ত সঞ্চালন কমে গিয়ে হার্টের সুস্থতা ব্যাহত হতে পারে৷

আরও পড়ুন: ফ্যাটি লিভার, সিরোসিসকে ভয়? কেবল খাদ্যাভ্যাসে বদল যথেষ্ট নয়, মানতে হবে এ সবও

চিকিৎসা

হাইপ্রেশারের রোগীর প্রেশার হঠাৎ কমে গেলে তার মূলে রক্তচাপ কমানোর ওষুধের হাত থাকে অধিকাংশ সময়৷ ওষুধ পাল্টে দিয়ে বা ওষুধের মাত্রা বদলে দিয়ে নিয়মিত মনিটরিং করে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে হয়৷

হার্ট অ্যাটাক, রক্তপাত, সেপ্টিসেমিয়া ইত্যাদি কারণে প্রেশার প্রচুর কমে গেলে রক্তচাপ বাড়ানোর ওষুধ শিরার মাধ্যমে ধীর গতিতে দিয়ে প্রেশার বাড়ানো হয়৷ এই চিকিৎসা হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রেখে করতে হয়৷

প্রেশার কম থাকছে কিন্তু তার জন্য কোনও কষ্ট হচ্ছে না, এমন হলে খুব একটা কিছু করার নেই৷

অ্যাডিসন্স ডিজিজের জন্য রক্তচাপ কম হলে হরমোন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে সল্ট রিটেনিং হরমোন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়৷

সমাধান

হঠাৎ মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করলে পায়ের নীচে বালিশ দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন৷ লবন–পানি খান৷ দু’-চার মিনিটে কষ্ট না কমলে রক্তচাপ মাপতে হবে৷ রক্তচাপ যদি কমতে থাকে ও নাড়ির গতি বেড়ে যায়, ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে দ্রুত৷

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপায়

লো–প্রেশারের সঙ্গে আবার অপুষ্টি এসে যুক্ত হলে সমস্যা বাড়তে পারে৷ কাজেই সুষম খাবার খেয়ে শরীরের পুষ্টি বজায় রাখুন৷

অতিরিক্ত মাছ–মাংস–ডিম–দুধ খাওয়ার দরকার নেই৷ স্বাভাবিক ঘরোয়া খাবার পেট ভরে খেলেই হবে৷ ওজন ঠিক থাকলে এক–আধটু হাই ক্যালোরি খাবার খেতে পারেন৷

কম রক্তচাপের মানুষের যদি লুজ মোশন, বমি, বা অতিরিক্ত ঘাম হয়ে প্রেশার আরও কমে যায়, বিপদের আশঙ্কা আছে৷ এ রকম হতে পারে বলে মনে হলে আগে থেকে ওআরএস মজুত রাখুন৷ সমস্যার শুরু হলে পত্রপাঠ ওআরএস বা নুন–চিনির শরবত খেয়ে শরীরে নুন–জলের ভারসাম্য বজায় রাখুন৷

প্রেশার কম থাকলে জিম শুরু করার আগে বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন৷ কতটুকু ধকল আপনি নিতে পারবেন তা জেনে নেওয়া দরকার৷ শুরুতে প্রচুর ব্যায়াম করবেন না৷ শরীরকে আস্তে আস্তে সইয়ে নিন৷ প্রচুর ঘাম হলে মাঝেমাঝে ওআরএস খান৷ মাথা ঘুরতে শুরু করলে বিশ্রাম নিন৷

পশ্চুরাল হাইপোটেনশনের ধাত থাকলে শোওয়া–বসা থেকে ওঠার সময় তাড়াহুড়ো করলে বিপদ৷ কাজেই ধীরেসুস্থে উঠুন৷ লুজ মোশন বা বমি হলে, কিংবা গরমে ঘেমে–নেয়ে গেলে আরও সাবধান হতে হবে৷

প্রচুর ঘাম হয়ে মাথা ঘুরতে শুরু করলে নুন, নোনতা খাবার, শরবত বা ডাবের জল, যা পাবেন হাতের কাছে, খেয়ে নিন৷

আনন্দবাজার পত্রিকা 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer