Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রস্তুতি ছাড়া লকডাউন তুলে নেয়া হবে আত্মঘাতী

রিফাত বিন আইয়ুব

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ১২ মে ২০২০

প্রিন্ট:

প্রস্তুতি ছাড়া লকডাউন তুলে নেয়া হবে আত্মঘাতী

-লেখক

পর্তুগাল থেকে: প্রতিদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ পড়ে মনে হয়, যে লক্ষ্য নিয়ে লকডাউন শুরু হয়েছিল আমরা সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারিনি। আর এই দায় কেবল সরকারের একার নয়। দেশের সাধারণ মানুষও এই ব্যর্থতার জন্য সমানভাবে দায়ী।

সরকারের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালনে উদাসীনতাই এর মূল কারণ। জনগণ যদি সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতো  তাহলে হয়তো আমাদের পক্ষে লকডাউন আরো সফল করে তোলা সম্ভব হতো। সম্প্রতি লকডাউন তুলে নিয়ে সীমিত আকারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য সরকারের যে পরিকল্পনা ছিল তা নিয়ে জনমনে অনেক মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিভাগীয় শহরসহ সারা দেশের জেলা শহরগুলোতে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত তেমনি এক প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ।

অনেকে ধারণা করেছিলেন ব্যাবসায়ী নেতৃবৃন্দের চাপের কারণেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু ব্যাবসায়ী নেতৃবৃন্দের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না খোলার সিদ্ধান্ত তেমন ইঙ্গিত বহন করে না। সুতরাং যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই লকডাউন তুলে নেয়া উচিত নয়। বরং যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া লকডাউন তুলে নিলে হিতে-বিপরীত হতে পারে। তই সরকারের উচিত হবে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে ধাপে ধাপে লকডাউন শিথিল করা।

গবেষকদের মতে নোভেল করোনা ভাইরাস এক মাস কিংবা দুমাসের মধ্যে চলে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই। খুব কম সময়ের মধ্যে প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার করা গেলেও এই টিকা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত বেশ সময় লেগে যেতে পারে। এমনকি প্রথম ধাপের সংক্রমণ শেষ হলে আবার দ্বিতীয় ধাপে নতুন করে সংক্রমণ শুরু হবার আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।

সুতরাং বলা যায়  আমাদেরকে এই রোগের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করতে হবে। কিন্তু সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে আমাদের পক্ষে দীর্ঘকাল ধরে লকডাউনে থাকা সম্ভব নয়। আবার লকডাউন উঠিয়ে দিলেও একসাথে অনেকের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে লকডাউন বাস্তবায়ন করার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্তের সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি দেশের জনগণ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এই মহামারী মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করে তোলা। যাতে করে লকডাউন পরবর্তী সময়ে সকলের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

এখনো আমাদের হাতে যে সময়টুকু আছে সেই সময়টাতে আর অন্তত ভুল না করা। সব সরকার করবে এমনটা  ভেবে না বসে থেকে নিজেরা  নিজের কাজটুকু করি। আমরা যদি প্রত্যেকে নিজেরা নিজেদের দায়িত্বটা ঠিক মতো পালন করি, এই মহামারী মোকাবেলা করা আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। অহেতুক গুজব না ছড়িয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। প্রতিদিন বিনা কারণে বাইরে বের না হয়ে যথাযথ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে।

লকডাউন পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখাসহ আমাদের নিজেদের সুরক্ষাহেতু পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে বাইরে বের হতে হবে। বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করা ছাড়াও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে হাঁচি কাশি দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই শিষ্টাচার বজায় রাখতে হবে। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে করমর্দন এবং কোলাকুলির মতো সৌজন্য গুলোকেও এড়িয়ে চলতে হবে।

আসুন নিজে সচেতন হয়ে অন্যকে সচেতন করি, একা না বেঁচে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বাঁচি।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer