ঢাকা : সকল পাবলিক পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে তিন মাসের মধ্যে বিধি প্রণয়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিক্ষা ও সমাজ কল্যাণ সচিব, শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এ এফ এম মোস্তফা মাসুদের দুটি বিষয়ের খাতা সাবধানতার সঙ্গে পূনঃমূল্যায়ন করে যথাযথ নম্বর দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মোস্তফা মাসুদের রেজাল্ট সিট তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে এ নির্দেশ দেন। হাইকোর্ট গত ২২ আগস্ট রায় দেন। সোমবার এই রায়ের কপি সাংবাদিকদের হাতে এসেছে।
সেরিব্রাল পালসি প্রতিবন্ধী এ এফ এম মোস্তফা মাসুদের পিতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমানের করা এক রিট মামলায় এ রায় দেন আদালত। রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জুলহাস উদ্দিন আহম্মদ।
এই রায়কে ঐতিহাসিক হিসেবে উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, এই রায়ের ফলে সরকার দ্রুত একটি যথাযথ বিধি তৈরি করবে বলে আশা করি। আর ওই বিধি করার পর সুবিধাভোগী হবে দেশে আমার ছেলের মতো থাকা অসংখ্য শিক্ষার্থী। যাদেরকে আমাদের সমাজ একটি বোঝা মনে করে। তিনি বলেন, একটু সহানুভূতি পেলেই যে এসব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা সমাজের সম্পদ হতে পারে।
রায়ে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালা রয়েছে। তেমনি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেরও একটি নীতিমালা আছে। কিন্তু সেই নীতিমালায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র কিভাবে মূল্যায়ন করতে হবে তার উল্লেখ নেই। তাই শিক্ষার্থী কোন ধরণের প্রতিবন্ধী তা বিবেচনা করে সেভাবেই উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা উচিত।
রায়ে বলা হয়, দেশে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের যত্ন ও সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন। সে অনুযায়ী স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওইসব সুবিধা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
রায়ে বলা হয়, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু পরীক্ষার পর পরীক্ষক যাতে সতর্কতার সঙ্গে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। এ নিয়ে নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। কারণ তারা (প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী) সমাজের অপরাপর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো নয়।
রায়ে বলা হয়, দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এর ১৬(১) ও (২) ধারায় শিক্ষার সকল স্তরে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা ব্যক্তি কোনোভাবেই বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, সেরিব্রাল পালসি প্রতিবন্ধী এ এফ এম মোস্তফা মাসুদ ২০১৬ সালে মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষায় দুটি বিষয়ে পাস নম্বর না পাওয়ায় তার খাতা পূনঃমূল্যায়নের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন মোস্তফা মাসুদের পিতা অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু তার আবেদন শিক্ষা বোর্ড বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমলে না নেওয়ায় ২০১৭ সালে রিট আবেদন করেন মোস্তাফিজুর রহমান। এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করেন।