Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রজন্মের দেশপ্রেম ও আমার নায়কের গল্প

রাহাত আকন্দ, ছাত্রলীগ কর্মী

প্রকাশিত: ০১:২২, ১৯ জুলাই ২০২১

প্রিন্ট:

প্রজন্মের দেশপ্রেম ও আমার নায়কের গল্প

-বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহবুদ্দিন ফকির

বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহবুদ্দিন ফকিরের মুখে শুনেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের গল্প। তিনি তাঁর মাকে না বলে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁর বয়স তখন ১৬/১৭ বছর। নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে একদিন কাওরাইদ বাজারে চায়ের ষ্টলে তিনি শুনিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প। সেই গল্প শুনে শাহাবুদ্দিন ফকিরকে কল্পনা করতাম নায়করূপে। তিনি কীভাবে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, ট্রেনিং নিয়েছিলেন, এমন প্রশ্ন ভি করতো মনে।

যুদ্ধে ট্রেনিংয়ের কষ্টে মাঝে-মধ্যে তাঁর পালিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছে করতো, কিন্তু নিজেই নিজেকে বুঝিয়েছিলেন। শত্রুদের দেশ থেকে তাড়ানোর জেদ চেপে গিয়েছিল তাঁর মনে। বলেছিলেন, পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধের গল্প। না খেয়ে, সারা দিন-রাত হেঁটে কীভাবে শত্রুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা।

শত্রুরা কীভাবে আমাদের দেশের মানুষদের অত্যাচার করত সেই গল্প। রাতের অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে গিয়ে শত্রুদের হামলা করার গল্প। অনেক গল্প করলেন, মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বেমাখা গল্প বলার সময় তিনি কেমন যেন হয়ে গেলেন। তাঁর চোখগুলো চকচক করে উঠলো। আমার ভীষণ ভালো লাগে সেই গল্পগুলো শুনতে। গর্ব হয় আমি একজন বীর যোদ্ধার কাছ থেকে গল্প গুলো শুনতে পেয়েছি ।

সবচেয়ে ভালো লাগতো যুদ্ধ জয় করে তাঁরা যখন ফিরেছিলেন, সেই উল্লাসের গল্পগুলো। আকাশে স্টেনগানের গুলি ছুড়ে বিজয় উল্লাস করতে করতে তাঁরা নিজের শহর গাজীপুরে ফিরেছিলেন। মাঝেমধ্যে মনে হয়, ইশ্ আমি যদি সেই সময় থাকতাম...। যুদ্ধে তাঁর শহীদ হওয়া বন্ধুদের কথা মনে করে প্রায়ই তিনি কাঁদেন তিনি, আমার কাছে তিনি একজন ভীষণ সাহসী এবং নির্ভীক যোদ্ধা। একজন নায়ক। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা একেকজন নায়ক। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা একেক জন বীর। 

বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহবুদ্দিন ফকির বলেন, আমার পিতা মৃত আবদুল আলী ফকির মাতা মৃত আমেনা খাতুন, গ্রাম পোস্ট কাওরাইদ উপজেলা শ্রীপুর জেলা গাজীপুর। আমি প্রথমে বাসা থেকে পালিয়ে ভারতে ট্রেনিং করি ১১ বেঙ্গল রেজিমেন্টে পরবর্তীতে ভারতেই দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টে স্থানান্তর করা হয়। তারপর আমি যুদ্ধ শুরু করে সিলেট দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করি।

তখন যুদ্ধকালীন অবস্থান সিলেট গোয়াইনঘাট আমাদের যুদ্ধে একদিনের ও অধিক সময় লাগে। সেখানে আমাদের অনেক সৈনিক মারা যায় এবং হানাদার পাক আর্মির ও অনেক সৈনিক মারা যায় এবং গ্রামবাসীও ওদের ধরে ধরে আমাদের হাতে তোলে দেয়। বৃষ্টির মত দুই পক্ষের গুলাগুলি চলছিল তখন ভাবছিলাম এই হয়তো মারা যাচ্ছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে এখনো বেঁচে আছি।

স্বাধীনতাহীন জীবন কোনো জীবন নয়। আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছি। সেই স্বাধীন-সুন্দর রাষ্ট্রটি আমাদের বাংলাদেশ। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্যসন্তান। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নসারথি হয়ে এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। করেছিলেন বলেই আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, যারা এই স্বাধীন রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছি। আমি সেই সৌভাগ্যবানদের অন্যতম।

কেননা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধাদের দেখতে পারবে না। ছুঁয়ে দেখতে পারবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নসারথিদের একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দীন ফকির। যিনি দেশকে রক্ষা করার জন্য প্রাণের মায়া ত্যাগ ক করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতে ট্রেনিংরত অবস্থায় উদ্বুদ্ধ করেছেন অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের। ছিলেন পলিটিক্যাল মটিভেটর। যাঁকে আমি দেখতে পেরেছি মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে পেরেছি। এ যে কত বড় সৌভাগ্যের, কত বড় গর্বের তা কেবল অনুমেয়। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া এই যে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে গল্প করতে পেরেছি। যাঁর ত্যাগ আমাদের আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রাখে।

স্বাধীনতা অর্জনের বহু বছর হলো। উনার মতো অনেক মুক্তিযোদ্ধা হারিয়ে যাবেন। চির অম্লান হয়ে থেকে যাবে তাঁদের কীর্তি। আমরা অনেকেই হয়তো তাঁদের সান্নিধ্য লাভের জন্য ব্যাকুল হই না। দেশকে ভালোবাসার জন্য, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য আমাদের সবার একবারের জন্য হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সান্নিধ্য লাভ করা উচিত। তাঁদের গল্প শোনা উচিত। তাঁদের ছুঁয়ে দেখা উচিত। কে জানে এই সৌভাগ্য সবার হবে কি না?

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer