ছবি : বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজার : গত এক মাস ধরে পোষা ছয় হাতির অবাধ বিচরণ ও তান্ডবে কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের উদ্ভিদ, লতাগুল্ম, বাঁশ ও গাছ গাছালির চারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ভিতর নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে দিনের বেলা সামাজিক বনায়নের নিলামের গাছ হাতি দিয়ে টানা হলেও রাতের বেলা হাতিগুলোকে বনে ছেড়ে দেয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে ছয় হাতির অবাধ বিচরণে বনের ক্ষতি সাধিত হলেও বন্যপ্রাণি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা নির্বিকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ উদ্যানের কালাছড়া বনবিট এলাকার সামাজিক বনায়নের (বাফার্স জোন)-এর গাছ গাছালি নিলাম দেওয়া হয়। জুড়ি উপজেলার একজন মহালদার এ নিলাম নিয়ে নিলামের গাছগুলি কেটে স্থানীয় এক মহালদারের পোষা ৬টি হাতি দিয়ে কাটা গাছগুলি টানানো হচ্ছে। জাতীয় উদ্যানের ইকো পর্যটন ব্যবস্থাপনাধীন সংরক্ষিত বনে কোন প্রকার পোষা হাতি প্রবেশ করার নিয়ম না থাকলেও স্থানীয় মহালদার গত এক মাস ধরে পোষা ৬টি হাতি দিয়ে কাটা গাছ টানাচ্ছেন। ফলে জাতীয় উদ্যানের সংরক্ষিত বনের লাউয়াছড়া বাঁশ বাগান এলাকার নানা ধরনের উদ্ভিদ, লতাগুল্ম, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিকভাবে জন্মা চারা গাছ, কচি বাঁশ এমনকি ইকো পর্যটন ব্যবস্থাপনারও ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা শুরু থেকে বিষয়টি অবগত থাকলেও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়ভাবে কর্মরত বন্য প্রাণী সহ ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
পরিবেশবাদী ও সমাজসেবামূলক সংগঠন পাহাড় রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির শ্রীমঙ্গলস্থ চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আহমদ ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির বাসিন্দারা জানান, প্রায় মাস খানেক ধরে ৬টি পোষা হাতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন স্থানে অবাধে বিচরণ করছে। দিনে হাতি দিয়ে কাটা গাছ টানানো হলেও রাতে এসব হাতি বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে রাতে উন্মুক্ত হাতিগুলো পুরো বন এলাকা ঘুরে বেড়ায়। তারা আরও জানান, একটি হাতির দৈনিক খাবার খরচ লাগে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা। আর এ খরচ কমাতে সংশ্লিষ্ট বন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাহুতরা এ কাজটি করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লাউয়াছড়া বন পাহারাদার দলের(সিপিজি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই সদস্য বলেন, লাউয়াছড়ার এক বনবিট কর্মকর্তার সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে বিধি বহির্ভূতভাবেই পোষা হাতি জাতীয় উদ্যানে অবাদ বিচরণ করাচ্ছেন মহালদারের লোকজন।
এ ব্যাপারে জানতে লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলামের মোবাইলে শনিবার সকাল থেকে কয়েক দফা ফোন দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। লাউয়াছড়া বাঁশ বাগানে বাচ্চাসহ তিনটি হাতির উপস্থিতি বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আনিসুর রহমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে লোক পাঠানো হচ্ছে। তবে শনিবার কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক আবু মোসা শামসুল মোহিত বলেন, এ বিষয়ে হাতি ফিরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বহুমাত্রিক.কম