Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ২ ১৪৩১, মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪

পোল্ট্রি শিল্পে নতুন আশা, কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা

এস এম মুকুল

প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ১৯ জুলাই ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

পোল্ট্রি শিল্পে নতুন আশা, কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা

ঢাকা : পোল্ট্রি শিল্প বড় হচ্ছে নীরবে নিভৃতে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট মাংসের চাহিদার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশই এ শিল্প থেকে আসছে। বর্তমান বাজারে যে পরিমাণ ডিম, মুরগি, বাচ্চা এবং ফিডের প্রয়োজন তার শতভাগ এখন দেশীয়ভাবেই উৎপাদিত হচ্ছে।

সারাদেশে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোট-বড় খামার রয়েছে। এছাড়াও আছে ব্রিডার ফার্ম, হ্যাচারি, মুরগির খাবার তৈরির কারখানা। পোল্ট্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে লিংকেজ শিল্প, কাঁচামাল ও ওষুধ প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান। জাতীয় অর্থনীতিতে পোল্ট্রি শিল্পের অবদান প্রায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ।

দেশে বর্তমানে মুরগির মাংসের দৈনিক উৎপাদন প্রায় ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। প্রতিদিন ডিম উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় দুই থেকে সোয়া দুই কোটি। একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার সাপ্তাহিক উৎপাদন প্রায় এক কোটি। পোল্ট্রি ফিডের বার্ষিক উৎপাদন ২৭ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ফিড মিলে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ২৫ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন এবং লোকাল উৎপাদন প্রায় ১ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন। মুরগির বিষ্টা দিয়ে এখন বায়োগ্যাস ছাড়াও তৈরি হচ্ছে জৈব সার।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়- জাপানের মানুষ বছরে ডিম খায় গড়ে প্রায় ৬০০টি। বাংলাদেশের মানুষ খায় মাত্র ৪৫ থেকে ৫০টি ডিম। আমরা জানি উন্নত বিশ্বে ডিম গ্রহণের পরিমান বছরে প্রায় ৩৬০টি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর মতে, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিটি মানুষকে বছরে অন্তত: ১০৪টি ডিম খাওয়া দরকার। মাংস খাওয়া উচিত নূন্যতম ১৮ থেকে ২০ কেজি। আমাদের দেশের মানুষ মুরগির মাংস খায় বছরে গড়ে মাত্র তিন দশমিক ৬৫ কেজি। অথচ আমেরিকায় মানুষ খায় বছরে গড়ে প্রায় ৫০ কেজি।

বর্তমান সরকার ২০২১ সাল নাগাদ জনপ্রতি বার্ষিক ডিম খাওয়ার গড় পরিমাণ ১০৪টিতে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে সরকারের এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে ২০২১ সাল নাগাদ দৈনিক প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ডিম এবং দৈনিক প্রায় ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদনের প্রয়োজন হবে। তার পেছনে বিনিয়োগ দরকার হবে প্রায় ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকা।

পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ও সফলতার পেছনের গল্পটি কষ্ট, সাধনা আর অসীম ত্যাগের। ২০০৭, ২০০৯ এবং ২০১১ সালে বার্ড ফ্লু’র ভয়াবহ সংক্রমণে এ শিল্পের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রায় ৫০ শতাংশ খামার বন্ধ হওয়ার পরও এ শিল্পের অগ্রগতি থেমে থাকেনি। এই পথচলা এত সহজ ছিলোনা। বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত শ্রম সাধনায় এসেছে সাফল্য, ঘটেছে নীরব বিপ্লব।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের তথ্য মতে, ডিম ও মুরগির মাংস রপ্তানি করে বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে এখাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা। আশার খবর হলো, দেশ এখন মুরগির ডিম ও মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এ শিল্প যে দেশের ডিম ও মাংসের শতভাগ চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি, কোন কোন সময় অতিরিক্ত উৎপাদন হচ্ছে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশীয় কোম্পানিগুলো।

পোল্টি শিল্পকে কেন্দ্র করে পরিচালনা, পরিচর্যা, বাজারজাতকরণ এবং খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রমের সুবাদে আরো ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারে ব্যবসা এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ক্ষুদ্র শিল্প বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করেছে পোল্ট্রি শিল্প। এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, প্রায় ১ লাখ প্রাণী চিকিৎসক, পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ, নিউট্রিশনিস্ট সরাসরি নিয়োজিত রয়েছেন। বেসরকারিভাবে এ শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ রয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা।

নতুন আশা নিয়ে সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০২১ সালের মধ্যে বছরে ১২০০ কোটি ডিম ও ১০০ কোটি ব্রয়লার উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছে এই শিল্পটি। বিভিন্ন সূত্রে জানা জানায়, ২০২১ সাল নাগাদ দেশে প্রতিদিন সাড়ে ৪ কোটি ডিম ও প্রায় ৪ হাজার টন মুরগির মাংসের প্রয়োজন হবে। এই চাহিদা পূরণ করতে এ খাতে কমপক্ষে ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন পড়বে। এই বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে সিঙ্গেল ডিজিটে ব্যাংক ঋণের সুদ, বীমার আওতায় পোলট্রি খাতকে নিয়ে আসা ও সরকারি সহায়তা দেয়ার সুপারিশ করেছে খাত সংশ্লিষ্টরা।

সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে এই সেক্টরে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা তথ্যে বলা হয়েছে, ২০২১ সাল নাগাদ পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়াবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ের মধ্যে ছোট-বড় ও মাঝারি আকারের পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৩ লাখ। আর তা হলে দেশের বৃহত্তর খাত হিসেবে পোল্ট্রি শিল্প আত্মপ্রকাশ করবে। পোল্ট্রি লিটার থেকে বছরে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।


লেখক: বিশ্লেষক ও উন্নয়ন গবেষক

[email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer