টেস্ট ক্রিকেটটা এমনই। প্রতি সেশনেই বদলায় ম্যাচের রং। গতকাল কোনও উইকেট না হারিয়ে ১৪৫ রানে দিন শেষ করেছিল পাকিস্তান। সেই দলটাই প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ২৮৬ রানে! তাতে ৪৪ রানের লিড পেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।
লিডটা আরও বেশি হতে পারতো। ২৫৭ রান ৯ উইকেট তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে ২৯ রানে জুটি গড়ে ব্যবধান কমিয়েছেন ফাহিম আশরাফ ও শাহীন। ফাহিমকে ৩৮ রানে তাইজুল ক্যাচ বানালে আর বড় হয়নি এই জুটি।
পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে ধস আনতে বড় ভূমিকা ছিল বামহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের। একাই ৭ উইকেট নিয়েছেন। দুটি নেন এবাদত হোসেন, একটি নেন মেহেদী মিরাজ।পাকিস্তান চাপে পড়ে যায় প্রথম সেশনেই। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে ৫৮ রান যোগ করতে পারে তারা। বিনিময়ে ৪ উইকেট তুলে নেন স্পিনাররা।
শুরুতে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটির প্রতিরোধ ভেঙে দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ৫৮তম ওভারের পঞ্চম বলে উঠে লেগ বিফোরের আবেদন। আব্দুল্লাহ শফিক কাট করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেরি করে ফেলায় বল প্রথমে আঘাত হানে প্যাডে। ফলাফল আম্পায়ার আঙুল তুলতে দেরি করেননি। ১৬৬ বলে ৫২ রান করে ফেলা এই ওপেনারকে সঙ্গে সঙ্গে ফিরতে হয়েছে সাজঘরে। তাইজুলের আঘাতে ভেঙেছে ১৪৫ রানের ওপেনিং জুটি।
জুটি ভেঙে ফেলার পর স্বাভাবিকভাবে নড়বড়ে থাকেন নতুন ব্যাটসম্যান। পরের বলে এই নড়বড়ে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন আজহার আলী। লেগ বিফোরে সাজঘরে ফিরেছেন রানের খাতা খুলবার আগেই।
টানা দুই বলে দুই উইকেট পরে গেলে একপ্রান্ত আগলে খেলতে থাকেন আবিদ আলী। চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরিও তুলে ফেলেন তিনি। সঙ্গে অধিনায়ক বাবর আজম জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ৪৬ বলে ১০ রান করা বাবরকে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেছেন মিরাজ।
তাইজুলের ঘূর্ণিতে নতুন নামা ফাওয়াদ আলমও দাঁড়ানোর সুযোগ পাননি কোনও। মারাত্মক টার্ন করা বল ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। বল বামহাতি ফাওয়াদের গ্লাভসে লেগে জমা পড়ে লিটন দাসের হাতে! শুরুতে আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নিয়েই মিলেছে সাফল্য। ১৫ বল খেলে ফাওয়াদ সাজঘরে ফিরেছেন ৮ রানে।
সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলীকে আগেই ফেরানোর সুযোগ ছিল। ৮০তম ওভার চলছে তখন। তাইজুলের শেষ বলে ক্যাচ উঠেছিল। কিন্তু স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল সহজ সেই ক্যাচ নিতে পারলেন না। ফাঁক গলে বল বেরিয়ে যাওয়ায় হয়ে যায় চার! এই উইকেট নিতে পারলে তৃতীয় দিনের প্রথম সেশন আরও বেশি স্বস্তি নিয়ে শেষ করতে পারতো বাংলাদেশ। সেটি না হলেও লাঞ্চ ব্রেকের পর ঠিকই পাকিস্তান বিপদে পড়ে রিজওয়ানের লেগ বিফোরে। এবাদত হোসেনের গ্রুত গতির বল ব্যাটে ছোঁয়াতেই পারেননি তিনি। লেগ বিফোরের আবেদনে সরাসরি আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। পাকিস্তানের উইকেটকিপার ব্যাটার ফিরেছেন ৩৮ বলে ৫ রান করে।
আবিদ আলীর একার লড়াই থামে দ্বিতীয় সেশনে। তাইজুলের ৯৪তম ওভারে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে এই ওপেনার বিদায় নেন ১৩৩ রান করে। ২৮২ বল খেলা এই ব্যাটার রিভিউ নিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
আবিদের বিদায়ের পর বাকিরা আর চাপ কমাতে পারেনি। চার-ছয়ে হাসান আলী রান বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাইজুলের ঘূর্ণিতে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
পরের ব্যাটার ছিলেন বোলিং অলরাউন্ডার সাজিদ খান। পাকিস্তানের দুঃসময়ে ৫ রান করতে পেরেছেন। সাজিদকে বোল্ড করে নিজের নামের পাশে দ্বিতীয় উইকেট যোগ করেন পেসার এবাদত হোসেন। নুমান আলী অবশ্য ফাহিমের সঙ্গে ১৭ রানের জুটি গড়ে চাপ কমানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাইজুলের বলে নুমান এলবিডাব্লিউতে ফিরলে সেই সম্ভাবনারও ইতি ঘটে। ফাহিম-শাহীন কিছুক্ষণ প্রতিরোধ গড়লেও তারা অলআউট হয়ে যায় ২৮৬ রানে।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে ৩৩০ রানে গুটিয়ে দিয়ে গতকাল পাকিস্তান দুই সেশন পার করে দেয় কোনও উইকেট না হারিয়ে। বাংলাদেশের বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে সফরকারীরা দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল ১৪৫ রানে।