টানা ১০০ দিন পরে ফের কুয়াকাটা পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠবে। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য অবলোকনের সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায়। করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুয়াকাটা পহেলা জুলাই থেকে হোটেল-মোটেল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এ তথ্য জানিয়েছে।
সরকারিভাবে আগেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সারা দেশে সব ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হয়েছে। কোথাও কোথাও এখনও চালু হচ্ছে। কিন্তু কুয়াকাটায় ২৩ মার্চ থেকে পুরো তিন মাসেরও বেশি সময় হোটেল-মোটেলসহ সব দোকানপাট লকডাউনে রয়েছে।
এরই মধ্যে হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনদিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
পর্যটক ব্যবস্থাপনা যেন করোনা প্রতিরোধক হয় কর্মীদের তা রপ্ত করানো, হোটেলের বাইরে ও ভিতরে জীবাণুমুক্ত করা, গাড়ি পার্কিং অঞ্চলসহ যানবাহন জীবাণুমুক্ত করা, সিকিউরিটিদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করা, দর্শনার্থীদের অনুপ্রবেশ পয়েন্টে এবং সহায়ক কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, দর্শনার্থীদের জন্য জীবাণুমুক্ত চেম্বার ও হাত-মুখ ধোয়ার জন্য সাবান ব্যবহারের সুযোগ থাকা, ফ্রন্ট ডেক্সসহ লাগেজ জীবাণুমুক্ত করা। কর্মচারিদের মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস নিশ্চিত করা। চেকিংয়ের আগে নিবন্ধিত দর্শনার্থীর তাপমাত্রা লিপিবদ্ধ করা, হোটেল ব্যবস্থাপককে অবশ্যই ডেস্ক, লবি, আসবাবপত্র, সাধারণ স্থান, করিডোর, সিঁড়ি, রেলিং, দরজাসহ সব টয়লেটে স্যানেটাইজার নিশ্চিত করা। এছাড়া বয়, আয়া, কর্মচারিদের আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করা।এভাবে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হোটেল-মোটেল প্রস্তুতের কাজ চলছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, `একজন পর্যটক গাড়িসহ এলে প্রথমে নির্দিষ্ট পোশাকে হোটেল কর্মীরা গেস্টকে গাড়িসহ মালামাল, শরীর, জীবাণুনাশক স্প্রে করে নিবে। হাত-পা ওয়াশ করানোর ব্যবস্থা করবে। হোটেলে আলাদা স্যান্ডেল রাখা হবে। দর্শনার্থীর কক্ষ আগে থেকেই স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে ব্যবহার উপযোগী করা হবে। নির্দিষ্ট ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তিরা একই কক্ষে অবস্থান করবেন।`
তিনি আরো বলেন, `এছাড়া পর্যটন এলাকার ভ্যান, অটো, মোটরসাইকেলসহ যানবাহন ব্যবহারের আগে জীবাণুনাশক স্প্রে করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। যানবাহনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করবে। বিচের বেঞ্চিতে অবস্থানকালেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এসব বিষয় এরই মধ্যে হোটেল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।`
করোনাকালীন হোটেল-মোটেল ব্যবস্থাপনার ওপর করোনাকালীন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর এসওপি এই প্রশিক্ষণ করার ফলে কুয়াকাটায় পর্যটক-দর্শনার্থীরা নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারবে বলে হোটেল-মোটেল অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষের দাবি।
তারা জানান, পর্যায়ক্রমে তারা খাবার হোটেলমালিক-কর্মচারী এবং ভ্যান-অটো, মোটরসাইকেল চালকদের নিয়েও করোনাকালীন প্রতিরোধক সভা সেমিনার করেছে। করোনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই কুয়াকাটায় পর্যটকের জন্য পহেলা জুলাই থেকে হোটেল-মোটেল খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
কুয়াকাটায় প্রায় ১২০টির মতো হোটেল-মোটেল রয়েছে। যার মধ্যে ৭০টি এই অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত। করোনাকালীন লোকসান পোষানো মুশকিল কিন্তু ফের যেন করোনা প্রতিরোধে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেল চালু করতে পারে এমন প্রস্তুতি চলছে। এ নিয়ে কুয়াকাটার ব্যবসায়ীমহল আশার আলো দেখছেন।
অপরদিকে, কুয়াকাটায় বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার রয়েছে কমপক্ষে ২০০ জন। এদের অধিকাংশের অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী মহল তাঁদের কাছ থেকে এখনই পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। কুয়াকাটায় আসা পর্যটক দর্শনার্থীর ছবি তুলে জীবন-জীবিকা চালানো এই মানুষগুলো কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।