ছবি: সংগৃহীত
হিমুর সকাল থেকেই জ্বর। বাথরুমে গিয়েও আশানুরূপ কিছু ফলোদয় হলো না । এদিকে পেটে ব্যাথা না থাকলেও তলপেটের বামপাশটা কেমন ভার ভার ঠেকছে আর মনে হচ্ছে অসাড় হয়ে আছে। সবাই বললেও বড় ডাক্তার না দেখিয়ে ও গেলো ঔষধের দোকানদার কাম ডাক্তার রন্জুর দোকানে।
দুঘন্টা বসে থাকার পর রন্জু এসে দোকানের ঝাঁপ খুলতে খুলতে বলল, এত সকালে যে, প্যাথেডিন ইন্ডিয়ানটা আছে? ৫০০ টাকা দাম পরত। দোকানদার আসবাবের ধুলা ঝাড়তে থাকলে হিমু ১০০০ টাকার দুইটা নোট রন্জুর হাতে ধরিয়ে দিতেই রন্জু চার এ্যাম্পুল প্যাথেডিন মোড়কের মধ্যে আর একটা ১০ এমএল ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ দিয়ে বলল, চেহারা এমতো ক্যান? আইতে ঘুম হয় নাই?
হিমু হলুদ পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল, ‘খুব জ্বর! সাতদিন ধরে দাস্ত হয় না।’ রঞ্জু হিমুকে বলল, ‘হাতির পুল গলিতে ডাঃ ইয়াসমিনের চেম্বার। যান না দেহান। ডাঃ ইয়াসমিন প্রথমটায় বলল ‘কিছুই না! ঔষধ খেলেই সেরে যাবে’।
পরে বলল ডাঃ ঈমন কল্যাণ কে একটু দেখান! ঔষধ লিখতে লিখতে বলল ইয়াসমিন। উনি ঢাকা মেডিকেলের শল্য বিভাগের আউটডোরে বসেন।
বাসায় বলে আসেনি হিমু। এদিকে আকাশ মামুর গুপিয়া অন্ধকার টংঘর এ ৪ এম্পুল প্যাথেডিন এর সুখ নিতেই খুব বাথরুম চাপল। রমনা পার্কে সকলের সামনে প্যান্ট খুলে হাগু করে ফেলল হিমু। একজন মহিলা তো এই দেখেই ওয়াক ওয়াক করে বমি করে দেয় আর কি!
মাথাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে হিমুর। হিমু ওর লাল, সবুজ, হলুদ, কালো রংয়ের গুয়ের উপর শুয়ে পড়ল। কারণ প্যাথেডিনের এবং ডাঃ ইয়াসমিনের ঐ ঔষধের প্রভাবে মনে হতে থাকলো রমনা পার্কের উপরে ভাসমান আকাশটা হাসপাতালেন ছাদ! আর চারিদিকে একটু ভিড় জমে যাওয়ায় অনেক কষ্টে উঠে পরল হিমু।
পাশের পুকুরে গোছল সেরে কাপড় চোপড় ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে ভেজা কাপড়েই হেঁটে চলে গেল ঢাকা মেডিকেল। ঈমন কল্যাণ ওর ভেজা হলুদ পাঞ্জাবি থেকে ছড়ানো বিষ্ঠার গন্ধটাকে তেমন আমলে না নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘টাকা কত আছে?’
হিমু চুপ করে থাকলে খস খস করে কাগজে কিছু লিখলেন, ঈমন কল্যাণ । স্ট্রেচার এসে ৩২ নং ওর্য়াড এ নিয়ে গেল হিমুকে। হাসপাতালের ভীতি সঞ্চারি ঔষধের গন্ধটাতে মনে হলো হিমুর, ও বেচেঁ উঠবে! আশেপাশের অন্যদের কথাগুলো দুর্বোধ্য পাথরের টুকরোর মতো চারপাশে ছড়িয়ে পরতে লাগল। কেমন এক ঘোরের মধ্যে হিমু ওকে আবিষ্কার করলো লাশ কাটা হিম ঘরে।
চোখ খুলতেই ডোমটা-ভয়ে চিৎকার করে উঠলে ফরেনসিক ডাক্তার বললেন , আরে এতো বেচেঁ আছে। এখনই আই সি ইউতে নাও! হিমুর খুব পানি পিপাসা পাচ্ছে। আই সি উইতে হিমু শুনতে পাচ্ছে বশীর চাচা বলছেন, ‘এই ছোকড়াটা আমাদের বহু জ্বালাইছে। আর আমাদের আই সি ইউতে রাখার টাকাও নাই’।
ওর শরীর থেকে লাইফ সার্পোটটা সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হিমু একটা হলুদ বেলুন হয়ে হাসপাতালের ছাদ ভেদ করে দূর আকাশে ভেসে যেতে থাকে।
বহুমাত্রিক.কম