Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নিষিদ্ধ পলিথিন : পরিবেশবাদী ১২টি সংগঠনের লিগ্যাল নোটিশ

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৪৬, ৯ নভেম্বর ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

নিষিদ্ধ পলিথিন : পরিবেশবাদী ১২টি সংগঠনের লিগ্যাল নোটিশ

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

মৌলভীবাজার : পলিথিন শপিং ব্যাগ বর্জন করে দেশকে পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পলিথিন শপিং ব্যাগ ও প্লাস্টিক সামগ্রী বিরোধী কোন অভিযান না থাকায় হাট বাজারে সর্বত্র এখন নিষিদ্ধ পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে। সকল প্রকার ব্যবসা প্রতিষ্টানে পণ্য সামগ্রীর সাথে এই ব্যাগ ফ্রি দেয়া হচ্ছে। ফলে রাস্তাঘাট, নদী-নালা, ড্রেন ও মাটির গর্তে পলিথিনের আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে।

রাস্তাঘাট, নদী-নালা, ড্রেন ও মাটির গর্তে পলিথিন ও প্লাস্টিকের আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বন্ধ হচ্ছে ছড়া ও ড্রেনের মুখ। পরিবেশ হচ্ছে মারাত্মক দুষনীয়। ছোট বড় হাট বাজার থেকে পাড়া মহল্লার মুদি দোকান, সবজি, মাছ ও ফল ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার শুরু করেছে। পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক সামগ্রীর অবাধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সহ ১২ টি সংগঠন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সহজে পরিবহন করা যায় এবং দামে সস্তা থাকায় পলিথিনের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা না করেই ব্যাপকহারে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। পলিথিন শপিং ব্যাগের ক্ষতিকারক বিষয়সমূহ বিবেচনা করে ২০১৫ সনের ৬ সেপ্টেম্বর তারিখের রায়ের মাধ্যমে সরকারকে ২০০২ সনের ৮ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপনে সরকারী সিদ্ধান্তে সকল প্রকার পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত করণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। তবে এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আইন বাস্তবায়নে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত না হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো মৌলভীবাজারের সর্বত্র প্রকাশ্যে পলিথিন শপিং ব্যাগ থেকে শুরু করে সকল প্রকার প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার শুরু হয়েছে।

মৌলভীবাজারের উন্নয়ন গবেষক আহমদ সিরাজ ও প্রভাষক জমশেদ আলী বলেন বলেন, পরিবেশ আমাদের বড় উপাদান অথচ পলিথিন পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি সহজে পঁচে না অপচনশীল উপাদান হিসাবে প্রকৃতিতে রয়ে যায় এবং পরিবেশের মারাত্মক দূষণ ঘটাতে থাকে। পলিথিন মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, পয়নিস্কাশন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, মাছ-মাংস প্যাকেটজাত করে সংরক্ষণ করলে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়ে মাছ-মাংসে দ্রুত পচন ধরাতে সক্ষম।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সহ ১২টি সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া লিগ্যাল নোটিশ সূত্রে জানা যায়, পলিথিনের ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৬ক ধারার অধীনে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ২০০২ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ঢাকা শহরে এবং ২০০২ সালের ১ মার্চ থেকে সারা দেশে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, মজুদ, বিতরণ এবং ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে সাময়িকভাবে এর ব্যবহার হ্রাস পেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারীর অভাবে তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

উপরন্তু ১১ আগষ্ট, ২০০২ সালে মোড়ক হিসেবে ১০০ মাইক্রোনের উপরে পলিথিন শপিংব্যাগের ব্যবহার অনুমোদন দেয়ায় বিভিন্ন ধরনের পলিথিন ব্যাগের মধ্যে তফাৎ নির্ধারনে সাধারণ ক্রেতা ব্যর্থ হচ্ছে। এমন শিথিলতার সুযোগ নিয়ে বৈধ দাবি করে আবারও পলিথিন ব্যাগের অনিয়ন্ত্রিত উৎপাদন, বাজারজাত ও ব্যবহার শুরু হয়েছে। ইতোপূর্বে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশন (নং-৭১৫৩/২০১৪) মামলায় ২০১৫ সনের ৬ সেপ্টেম্বর তারিখের রায়ে মাধ্যমে সরকারকে ২০০২ সনের ৮ এপ্রিল তারিখের পলিথিনের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহণ বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার সংক্রান্ত গেজেট নোটিফিকেশ দৃঢ়ভাবে কার্যকর করার নির্দেশনা প্রদান করেন।

এ বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টের উক্ত নির্দেশনাও প্রতিপালন করা হয়নি। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার “পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক আইন, ২০১০” প্রণয়ন করে। এ আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী পণ্য সামগ্রীতে পাটজাত মোড়ক দ্বারা মোড়কজাতকরণ ব্যতীত বিক্রয়, বিতরন বা সরবরাহ বন্ধ থাকলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না।

পলিথিন শপিং ব্যাগ ছাড়াও অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। আইনী নিষেধাজ্ঞা ও বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, আমদানী, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, মজুদ, বিতরণ এবং ব্যবহার দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। ক্ষতিকর এ পলিথিন ব্যাগের অবাধ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, মজুদ, বিতরণ এবং ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব পালনে এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী ক্ষতিকর প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ও ক্রমবর্ধমান ব্যবহার নিয়ন্ত্রণেও যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ।

জনস্বার্থ ও পরিবেশ রক্ষায় অবিলম্বে পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, মজুদ, বিতরণ এবং ব্যবহার রোধে দেশের প্রচলিত আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বিকল্প ব্যবহার নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়ে এবং একই সাথে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী প্লাস্টিক সামগ্রীর অবাধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞাপন জারীর অনুরোধ জানিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এর সচিবগণ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সভাপতি, বাংলাদেশ প্লাষ্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক এসোসিয়েশন বরাবর নোটিশটি প্রেরণ করে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়ুথ), সেভ দি কোষ্টাল পিপলস্ (স্কোপ), বরিশাল রীচ টু আন রীচ (রান), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বেডস), ইনিশিয়েটিভ ফর রাইটভিউ (আইআরভি), এ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), সেল্ফ হেল্প এন্ড এ্যাডভান্সড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (শ্যাডো), ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট এফেয়ার্স (আইডিয়া) ও সেবা ফাউন্ডেশন এর পক্ষ হতে সুপ্রিম কোর্ট বিভাগের আইনজীবি সাঈদ আহমেদ কবীর গত ৬ নভেম্বর নোটিশ প্রদান করেন।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer