Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

নিরালা পুঞ্জির পাহাড়ি টিলা থেকে বিলীন হচ্ছে শত শত বৃক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ৫ ডিসেম্বর ২০২১

প্রিন্ট:

নিরালা পুঞ্জির পাহাড়ি টিলা থেকে বিলীন হচ্ছে শত শত বৃক্ষ

ছবি- বহুমাত্রিক.কম

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি টিলাভূমিতে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। খাসিয়াদের নিরালা পুঞ্জির টিলাগুলোতে প্রাকৃতিক বৃক্ষরাজি পূর্ণ গভীর অরণ্যে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তবে ওই পুঞ্জির খাসিয়া প্রধান (মন্ত্রী) বনবিভাগ থেকে ৩২৫ টি গাছ বিক্রির অনুমোদন নিলেও হাজারো গাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে। একে একে বৃহদ গাছগাছালি সাবাড় হওয়ায় বৃক্ষশুন্য হচ্ছে পাহাড়ি টিলাগুলো। ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সিন্ধুরখান ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি টিলায় নিরালা পুঞ্জিতে প্রায় ২৫০টি খাসিয়া পরিবারের বসবাস। সবচেয়ে দুর্গম এই পুঞ্জির পাহাড়ি টিলাগুলো প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো গাছগাছালিতে ভরপুর ছিল। জীববৈচিত্র্যের জন্য এলাকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নানা ধরণের বন্যপ্রাণী ও পাখির বসবাস স্থল হিসাবেও পরিচিত। খাসিয়ারাও বনের গাছগাছালিতে ডালপালা ছেটে যুগ যুগ ধরে পান চাষাবাদ করে আসছেন।

সম্প্রতি ওই পুঞ্জির প্রধান বনবিভাগের কাছ থেকে ৩২৫টি গাছ বিক্রির অনুমতি নিয়ে গাছগুলো বিক্রি করেছেন। আলপিন, গামার, বনাক, রঙ্গী, চাপালিশ, চিকরাশি, শিমুল, পিতরাজ, গর্জন, কড়ই, জাম, নেউর, মছকনসহ নানা প্রজাতির গাছ বিক্রির আবেদন করলে বনবিভাগ চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৩২৫টি গাছ বিক্রির অনুমোদন প্রদান করে। তবে এই অনুমোদন নেয়ার পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে গাছ কেটে ট্রাকযোগে পাহাড়ি সড়ক দিয়ে পরিবহন চলছে। ওই পুঞ্জিতে একাধিক পাহাড়ি টিলা থেকে শত শত গাছ নিধন হচ্ছে।

পুরাতন এসব গাছ নিধনের ফলে বৃক্ষ শুন্য হচ্ছে পাহাড়ি টিলা। এতে জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনছে। বন্যপ্রাণীর জন্যও প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে টিলা ধ্বসে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। খাসিয়াদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান পান চাষাবাদেও এর প্রভাব পড়বে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন।
দুর্গম পাহাড়ি এলাকার কারণে এখান থেকে সহ¯্রাধিকেরও বেশি গাছ নিধন করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় দু’জন খাসিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এখান থেকে গাছ কেটে ট্রাকে করে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এতে এক থেকে দেড় হাজারেরও বেশি গাছ কাটা হয়েছে। তারা আরও বলেন, এখানকার খাসিয়া মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেন না। তিনি বেশ প্রভাবশালী।

নিরালা পুঞ্জিতে গাছ কাটার বিষয়ে পুঞ্জির মন্ত্রী তাহেরা প্রতামের বাসায় গিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি অসুস্থ এবং কথা বলতে পারছেন না বলে জানান। তবে নিরালা পুঞ্জির সহকারী মন্ত্রী দাবী করে পুঞ্জি প্রধানের পক্ষে এলবিস প্রতাং বলেন, ২৫০ টি থেকে ৩শ’টি গাছ বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে কাটা হচ্ছে। গাছগুলো মন্ত্রীর বড়ভাই হ্যান্ডিসাসিং বিক্রি করেছেন বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার বন রেঞ্জের শ্রীমঙ্গলস্থ বনরেঞ্জ কর্মকর্তা দীন ইসলাম বলেন, নিরালা পুঞ্জিতে ৩২৫টি গাছের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আগামী বছরের ৫ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত গাছ কর্তনের মেয়াদ রয়েছে।
তবে শ্রীমঙ্গলস্থ সিলেট বিভাগীয় সহকারী বন সংরক্ষক মো. আবু বক্কর বলেন, তারা ৩২৫টি গাছের অনুমতি নিয়ে বেশি গাছ কাটছে এমন অভিযোগ আগে শুনা যায়নি। তবে বনবিভাগের লোকজনকে সেখানে পাঠিয়ে তদন্ত করবেন বলে জানান।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, গাছ পরিবেশের উপকারি অংশ। অনুমতি থাকলেও সরকারি নীতিমালা ও দিক নির্দেশনা মোতাবেক গাছ কাটতে হয়। এব্যাপারে নিজে সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer