ঢাকা : পঞ্চাশ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে `মিস আমেরিকা` সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলেন একদল নারী। ব্রা খুলে হাতে নিয়ে মিছিলে শরিক হয়েছিলেন তারা। নারীবাদীরা তাদের ব্রা পুড়িয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন বলে এরপর যে কাহিনী দিকে দিকে পড়েছিল, তার শুরু এখান থেকেই।
ব্রা পোড়ানো নারীবাদীর যে কাল্পনিক ইমেজ বা ছবি এরপর জনমানসে তৈরি হলো, সেরকম ঘটনা কি বাস্তবেই ঘটেছিল?
একদল নারী সেদিন প্রতিবাদের অংশ হিসেবে অনেক কিছুই ছুঁড়ে ফেলেছিলেন- ঘর মোছার মপ, লিপস্টিক, হাই হীল জুতা। তাদের কাছে এসব ছিল নারীর পরাধীনতার প্রতীক। একটি `ফ্রিডম ট্র্যাশ ক্যান` বা `স্বাধীন ময়লার ঝুড়ি`তে তারা এসব ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারছিলেন।
সেই প্রতিবাদের সংগঠকদের একজন ছিলেন রবিন মর্গান। তারা পথচারীদেরও তাদের আন্দোলনে সামিল হওয়ার ডাক দিচ্ছিলেন।
"আমার মনে আছে এক তরুণী তার ব্রা খুলে ফেললো। শার্টের নীচ থেকে সে তার ব্রা খুলে বের করে আনলো তারপর সবার উল্লসিত চিৎকারের মধ্যে সেটি ছুঁড়ে ফেললো।"
সারা বিশ্বে সংবাদ শিরোণাম হলো সেই ঘটনা। নারীবাদীদের সেই প্রতিবাদ হয়ে গেল ইতিহাসের অংশ।এই বিক্ষোভে যারা যোগ দিয়েছিলেন, তারা এর আগেও নানা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। বিশেষ করে আমেরিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন কিংবা ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন। কিন্তু নারীর অধিকারের জন্য রাস্তায় নামা অনেকের জন্য ছিল সেই প্রথম।
"তখন আমরা তরুণ বিপ্লবী। মাত্র নারীবাদকে আবিস্কার করছি", বলছেন রবিন মর্গান। তারা বুঝতে পারছিলেন এটা এমন এক যুদ্ধ, যেটা তাদের নিজেদেরই করতে হবে।
"আমরা জানতাম যে ডানপন্থী পুরুষরা আমাদের মিত্র নয়। আর বামপন্থী পুরুষদের আমরা নিজেদের ভাই বলে গণ্য করলেও পরে যখন নিজেদের অধিকারের কথা বলতে শুরু করলাম তখন দেখলাম আসলে তা নয়। "
৫০ বছর পরেও যে সেদিনের সেই আন্দোলন এতটা ঢেউ তুলবে, সেটা তারা ভাবতে পারেননি।
সত্যিকারের নারীবাদী আন্দোলনের ঢেউ সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল বলে কোন কোন ইতিহাসবিদ বলে থাকেন।
"এটা শুনতে বেশ ভালো লাগলেও আসলে তা নয়। তারও আগে ন্যাশনাল অর্গেইজেশন ফর উইমেনের মতো নারীবাদী সংস্থা তার আগে থেকেই ছিল", বলছেন রবিন মর্গান।
কিন্তু সেদিনের প্রতিবাদের যে ছবিটা জনমানসে গেঁথে গিয়েছিল, তা হচ্ছে নারীবাদীরা তাদের ব্রা পুড়িয়ে ফেলছে! যেটি আসলে বাস্তবে ঘটেইনি।রবিন মর্গান বলছেন, কিছু মহিলা তাদের অন্তর্বাস খুলে `ফ্রিডম ট্র্যাশ ক্যানে` ছুঁড়ে ফেলেছিলেন সেটা সত্যি। কিন্তু তারা সেগুলো পোড়াননি।
আসলে একজন মহিলা সাংবাদিকের এক রিপোর্টের লাইন থেকে এই কল্পকাহিনীর শুরু।
"পুরুষরা তাদের ড্রাফট কার্ড পোড়াচ্ছে, এরপর কী? মেয়েরা কি তাদের ব্রা পোড়াবে", এই ছিল রিপোর্টের লাইন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা বলেছেন, তারা মনে করতে পারেন যে ট্র্যাশ ক্যানটিতে আগুন দেয়া হয়েছিল, কিন্তু সাথে সাথেই সেই আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।
রবিন মর্গান অবশ্য দৃঢ়তার সঙ্গেই বলছেন, ব্রা পোড়ানোর কোন ঘটনাই ঘটেনি।"এটা একটা কল্পকাহিনী। আমরা বহু বছর ধরে এটিকে খন্ডনের চেষ্টা করছি।
১৯৬৮ সালে `মিস আমেরিকা` সুন্দরী প্রতিযোগিতায় কেবল বিশেষ ধরণের নারীর সৌন্দর্যকেই বিবেচনায় নেয়া হতো।
`প্রতিযোগীদের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে, তাদের শ্বেতাঙ্গ হতে হবে` এই নিয়ম অবশ্য ততদিনে পাল্টেছে। কিন্তু মিস আমেরিকা প্রতিযোগিতায় তখনো পর্যন্ত কোন অশ্বেতাঙ্গ নারী জিততে পারেননি।
"১৯২১ সালে এই প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর একজন কৃষ্ণাঙ্গও কোনদিন এর ফাইন্যালে পৌঁছায়নি", ট্র্যাশ ক্যান বিক্ষোভের একটি প্রেস রিলিজে এভাবেই এই আন্দোলনের কথা তুলে ধরা হয়েছিল। "কখনো কোন পুয়ের্তোরিকান, আলাস্কান, হাওয়াইয়ান বা মেক্সিকান আমেরিকান এতে জেতেনি। এমনকি একজন সত্যিকারের মিস আমেরিকান, অর্থাৎ ইন্ডিয়ান আমেরিকানও নয়।"
বিবিসি বাংলা