Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নারী অপরাধীদের শোধরাতে ব্রিটেনের কারাগার ব্যর্থ হচ্ছে

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

নারী অপরাধীদের শোধরাতে ব্রিটেনের কারাগার ব্যর্থ হচ্ছে

ঢাকা : ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের কারাগারগুলোতে নারী বন্দীদের সংখ্যা ৫ শতাংশেরও কম। কিন্তু এরপরও পুরুষ অপরাধীদের তুলনায়, নারীদের পুনরায় অপরাধ করার সম্ভাবনা বেশি।

তাহলে নারী বন্দীদের শোধরানোর ক্ষেত্রে কারাগার কেন অকেজো প্রতিপন্ন হচ্ছে? আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই-বা কি চেষ্টা চলছে?

লিসার জীবন

একটি জালিয়াতির মামলায় ২০১১ সালে মাস তিনেক জেল খেটেছিলেন লিসা।মাস তিনেক শুনতে খুবই কম সময়। কিন্তু লিসার মনোজগৎ ও তার বাস্তব জীবনের উপর এর ভয়ংকর প্রভাব পড়েছিল।

কন্যাদের থেকে দূরে জেলে বসে বসে সে নিজের সক্ষমতা নিয়ে নানাবিধ দুশ্চিন্তায় জর্জরিত হয়েছে। এর ফলে একটা সময়ে তার মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে।জেলের সময়টাতে সে তার কন্যাদেরকে কারাগারে তাকে দেখতে আসতে বারণ করেছিল। কারণ সে চায়নি তিক্ত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে তার মেয়েরা যাক।

কিন্তু এরপরও লিসার শেষ রক্ষা হয়নি। জেল থেকে ছাড়া পাবার পরই যেন তার জীবনে প্রকৃত বিড়ম্বনার শুরু!

তাকে দেখা মাত্রই লোকেরা কানাঘুষা শুরু করতো। কি মুদী দোকান, কি পড়ার গলি বা কি তার মেয়েদের স্কুলের সামনে অপেক্ষারত অন্য শিশুদের অভিভাবকেরা। সবখানেই চলত এমন।এই অবস্থায় এমনকি স্কুল থেকে নিজের মেয়েদের আনতে যেতেও আতঙ্কিত থাকতেন লিসা।

এই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে লিসা বলছিলেন, "জেলখানায় থাকার চেয়েও এই পরিস্থিতি বিচ্ছিরি"।

উইমেন ইন চ্যারিটি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্য মত ২০১৭ সালে যত নারী কারাগারে গেছে তাদের শতকরা ৮৪ ভাগই মূলত সহিংস নয় এমন অপরাধে অভিযুক্ত। যেমন মামুলি চুরি বা অন্যের চুরির মাল-সামাল বিক্রি বাট্টা বা বন্দোবস্ত করা, কর পরিশোধ না করা— এই জাতীয় সব অপরাধ।

ছোটোখাটো অপরাধের কারণেই নারীরা স্বল্পমেয়াদী শাস্তি পায়। আর এ কারণেই নারীদের মধ্যে হয়তো পুনরায় অপরাধ করার প্রবণতা বেশি।

কিন্তু, দেশটির জাস্টিস মিনিস্ট্রির এক প্রতিবেদনে গত বছর জানা গেছে, স্বল্পমেয়াদে কারাভোগ করে যারা, তাদের মধ্যে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সব লিঙ্গের মানুষদের ক্ষেত্রেই পুনরায় অপরাধের প্রবণতা লক্ষণীয়।

তবে, কিছু ব্যাখ্যা দাবী করছে, বছর খানেকের কম সময় সাজা খাটে যে সব নারী অপরাধী তাদের ক্ষেত্রে পুনরায় অপরাধের প্রবণতাটা বেশি।নারী বন্দীদের নিয়ে আরেকটি ভয়ংকর তথ্যও বেরিয়ে এসেছে।

জানা যাচ্ছে, জেলখানায় নারী বন্দীরা পুরুষদের তুলনায় অন্তত দুইগুণ বেশি মানসিক স্বাস্থ্য সহযোগিতার প্রয়োজন অনুভব করেন।দি হাওয়ার্ড লিগের দেয়া তথ্য মতে, জেলখানায় প্রতি ৫ জন নারী বন্দীর মধ্যে একজন বন্দী নিজেকে শারীরিকভাবে আঘাত করে থাকে।

হাওয়ার্ড লীগের প্রধান নির্বাহী ফ্রান্সিস ক্রুক বলেছেন, জেল-জীবন সবার জন্যই একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা। কিন্তু নারীদের জন্য এটি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ভয়ংকর।

নারীদের ক্ষেত্রে এমনকি মাত্র কয়েক সপ্তাহ জেল খাটার পর দেখা যায়, সে তার চাকরী, তার গৃহ এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে সে তার সন্তানদের উপরে অধিকারও হারায়।

জাস্টিস সেক্রেটারি ডেভিড গাউক গত জুনে বলেছেন, সকল বন্দীদের মধ্যে মূলত নারী বন্দীদের অবস্থাই সবচে বেশি নাজুক।তিনি আরো মনে করেন, মামুলি অপরাধের জন্য নারীদেরকে জেলে পুরে দেয়া কোনও প্রকৃত সমাধান নয়।

দেশটির সরকার কমিউনিটি সার্ভিসের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে নারীদেরকে জেলে পাঠানো থেকে দূরে রাখার একটা ব্যবস্থা করার কথা ভাবছে। আর এ জন্য দুই বছরে ৫০ লাখ পাউন্ডের মত খরচ ধরা হয়েছে।মি. ক্রুক এর ভাষায়, "কারাগার কোনও কাজে আসে না"।

নারী বন্দীদের নিয়ে আরও জানা যাচ্ছে, তাদের অন্তত ৬০ ভাগ আসলে বাড়িতে নিপীড়নের শিকার।ইয়াসমিন আখতার নামে এশিয়ান একজন কারাভোগকারী অভিজ্ঞতা থেকে জানাচ্ছিলেন, তিনি যখন জেলে ছিলেন পরিবারের লোকেরা বলেছে তিনি বাইরে কাজে গেছেন।কারণ তার পরিবার এই কলঙ্কের দায় নিতে চায়নি।

মিজ. আখতার কাজ করেন বার্মিংহামে প্রবেশন সার্ভিসে। মূলত নারী বন্দীদের বিভিন্ন সহযোগিতা করেন তিনি।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানাচ্ছিলেন যে, কারাগারে যে কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা ছিল সেটি তাকে মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে বেশ সাহায্য করেছে।ম্যারি-ক্লেয়ার ও`ব্রাইয়েন ১৪ মাস জেল খেটেছিলেন। বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালিয়ে একজনকে হত্যার দায়ে তিনি শাস্তি পেয়েছিলেন।

৩৭ বছর বয়স্কা ও`ব্রাইয়েন বলছিলেন, অনেকের সহযোগিতায় তিনি ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিলেন। কিন্তু বহু নারীর ভাগ্যেই তা জোটে না।জেল থেকে বেরিয়ে তিনি নিউ লিফ নামে একটি সাপোর্ট প্রতিষ্ঠান খুলেছেন।

জেলের সাবেক কয়েদীদের সহায়তায় এটি কাজ করে। বন্দীরা মুক্ত হয়ে সমাজে ফিরলে তাদেরকে কর্মসংস্থানে সাহায্য করে এই প্রতিষ্ঠান।

মিনিস্ট্রি অফ জাস্টিস বলছে, নারীদের কমিউনিটি প্রভিশানের উপরেই তারা অধিক জোর দিতে আগ্রহী। তবে, এজন্য অর্থায়ন একটা জরুরী বিষয়।

উইমেন ইন প্রিজন-এর প্রধান নির্বাহী কেট প্যারাডিন বলছিলেন, যে পরিমাণ অর্থায়ন এখন তাদের আছে তা যৎসামান্য মাত্র।

যদি এই খাতে টাকার পরিমাণ না বাড়ে তাহলে হয়তো অসুবিধাজনক এবং নাজুক অবস্থানে থাকা নারী ও তাদের পরিবারের জন্য প্রকৃতার্থেই মুস্কিল হবে বলেও তিনি মনে করেন।

যদি এই নারী বন্দীদের জীবনে বদল আনা না যায় তাহলো হয়তো দিন শেষে এই সমাজ একটা ভঙ্গুর ব্যবস্থাতেই পরিণত হবে।

বিবিসি বাংলা 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer