-প্রতীকী
ঢাকা : সাম্প্রতিক দশকে পারিবারিক অশান্তি-কলহ, উদ্বেগজনক হারে বিবাহ বিচ্ছেদের আধিক্যে অনাথ শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানী ঢাকা সহ বিভাগীয় বা জেলা শহরগুলোতেও বেড়েছে পথশিশুর সংখ্যা। প্রত্যেক পথশিশুর জীবনেই থাকে বেদনাবিদূর এক অধ্যায়। তাদের অব্যক্ত সেসব ট্রাজেডি কেউ জানতেও চায় না।
সাংবাদিক, কবি ও প্রাবন্ধিক আসাদুল হক খোকন কথা বলেছেন এক পথশিশুর সঙ্গে। তার অনিশ্চিত জীবনের গল্প আমাদের অশ্রু ভারাক্রান্ত করলেও সে স্বপ্ন দেখে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। সেই কথপোকথনের চুম্বকাংশ থাকছে পাঠকের জন্য-
স্যার, আমার চাকরি নাই!
নাম কি?
নাম হইল গিয়া আতিকুল। বুলেট বইলা ডাকে।
বুলেট তো রাইফেলে থাকে। তাই না?
বুলেট নামটা আমি নিজেই দিয়া নিছি।
বয়স কত?
আমার মা-রে জিগাইছিলাম, হেয় কইলো মনে হয় ১০ এর উপরে যাইবো মনে হয়।
বাবার নাম?
আতাহার
মা?
আকলিমা
বাড়ি কোথায়?
খেয়াঘাট, বকসিগঞ্জ, জামালপুর।
পড়াশোনা করছো?
পড়াশোনা করছি অল্প । ১ মাস মাদ্রাসায় ..এতিমখানার মতোই। পড়াশোনা আমার ভালো লাগলে না স্যার। একদিন মাদ্রাসায় যাইতে দেরি হইয়া গেছিল বইলা আমাকে বেত দিয়া ৪-৫ বারি দিছিল এক হুজুর। আর বলছিলো - ক’ !আরো দেরি কইরা আসবি?
হুজুররা অনেক খাচ্চর, মাও বাপ তুইলাও বকা দেয় অনেক সময়! আর বেতের বাড়ি তো দিবই। প্রতিদিন মাইর দেয়। মাইর না দিলে নাকি হেগোর আত চুলকায়! তখন থিকা আমার ইস্কুল মাদ্রাসার উপর রাগ হইয়া গেছে। পড়াশোনা আর করব না।
ভাই বোন কে কি করে?
২ ভাই, বড় ভাই পিয়ন, মা গার্মেন্টস এ কাজ করে। ৭০০০ টাকা বেতন।
বাবা- জুয়া খেলে। গাজা, মদ খায়। মাকে ছাইড়া দিছে। আমাগো ত্যাজ্য কইরা দিছে।
দোকান ছিলো। সেইটা জুয়া খেইলা বিক্রি করে দিয়েছে।
আমার বাপ স্যার খুব খারাপ মানুষ। একদিন আমার নানার সাথে মারামারি লাগছে। আমার বাপে দাও নিয়া নানারে দৌড়ানি দিছে। দৌড়াইয়া লুঙ্গি খুইলা ন্যাংটা হইয়া গেছে গা, তাও থামে নাই। আর আমার সামনে আমার মায়েরে অনেক মারছে। আমারেও কয়ডা থাপর দিছে গালের মধ্যে। আমি অনেক ব্যাথা পাইছিলাম। এহনও মনে আছে।
এখন কার সাথে থাক?
ফকিরাপুল, ১ নম্বর গলি, কাবিলার বিল্ডিংয়ের পাশে থাকি। ৪০০০ টাকা ভাড়া। ১টা রুম। ..আমি, মা আর ভাই থাকি।
এর আগে কি করতে?
একটা পেরেসে এ হেলপার এর কাজ করেছি। ২১০০ টাকা বেতন দিতো। সব টাকা বড় ভাইয়ের হাতে দিয়া দিছি। একদিন খালি ১০০ টাকা রাইখা দিছিলাম। ভাই কইলো যে ১০০ টাকা দিয়া তুই কি করবি? ৫০ -৬০ টাকা নিয়া তুই জুস টুস খা গা। জামা কাপড় সব মা কিনা দেয়। আর চাকরি করমু না স্যার।
তাইলে স্কুলে ভর্তি হবে?
লেখাপড়া করার কোন ইচ্ছা নাই। না পইড়াও তো মেলা বড়লোক হওন যায়। পরধান মন্ত্রী খালেদা জিয়ায় তো মেট্রিক পাশ দেয় নাই হুনছি।
বাড়িতে গিয়ে কি করবে?
বাসায় বইসা সারাদিন কার্টুন দেখমু। এইখান থিকা ব্যাগ ট্যাগ গুছাইমু। কাইল সকাল ৭ বাজে উইঠা জামালপুরের ট্রেনে উইঠা বাড়িতে যামু। নানার বাড়ি যামু। বাপে দেখলে মাইর দিতে পারে তার লাইগা নানার বাড়ি থাকমু। আমার বাপে স্যার মহা বদ। কয় কি, আবার যুদি তোরে এলাকায় দেখি- গলা টিপ্পা মাইরা বিলের মইধ্যে হান্দাইয়ে দিমু।
তুমি নাকি বিড়ি টিরি খাও?
ওইখানে গিয়া ভালো হওনের চেষ্টা করমু। বিড়ি সিকারেট খাওন বাদ দিমু। মাইনষের দুই একটা ভালো কাজ কইরা দিয়া টাকা নিমু।
তাইলে চাকরি যে গেলো, এখন উপায় কি?
জীবনে একটা বড়লোক হওনের ইচ্ছা আছিল। কিন্তু চাকরিটা চইলা যাওনে সেই ইচ্ছা মনে হয় পুরণ হইলো না। তাও কওন যায় না, কত লোকে তো শুনি নামই লেখতে পারে না। তাও কুটি কুটি ট্যাকা বানাইছে। পাজেরো গাড়ি লইয়া ঘুরে.... আল্লায় চাইলে অবশ্যই একদিন বড়লোক হইমু!
এইডা কুনো কডিন কাজ না...!!!!!!!
বহুমাত্রিক.কম