Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নানা আয়োজনে কবি-কথা সাহিত্যিক আবুল হাসনাতকে স্মরণ

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ২৯ অক্টোবর ২০২১

প্রিন্ট:

নানা আয়োজনে কবি-কথা সাহিত্যিক আবুল হাসনাতকে স্মরণ

ছবি-বেঙ্গল ফাউন্ডেশন

আলোচনা-সঙ্গীতায়োজনসহ নানা অনুষ্ঠানিকতায় স্মরণ করা হলো কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, চিত্র-সমালোচক এবং সাময়িকপত্র কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাতকে। আবুল হাসনাতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরে স্মরণানুষ্ঠানের শুরুতে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অদিতি মহসিন।

এরপর আবুল হাসনাতের জীবনের উপর নির্মিত একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র দেখানো হয়। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্মরণ আলোচনায় অংশ নেন-মতিউর রহমান, রামেন্দু মজুমদার, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সেলিনা হোসেন, তারিক সুজাত, ডা. সারওয়ার আলী এবং আবুল খায়ের লিটু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লুভা নাহিদ চৌধুরী।

মতিউর রহমান স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘হাসনাতের মৃত্যুর পর তাকে যেন আরও বেশি করে জানছি প্রতিনিয়ত। সেই বায়ান্নর আন্দোলন থেকেই একসাথে পাড়ি দিয়েছি বহু পথ।‘ বক্তব্য শেষে তিনি আবুল হাসনাতের ‘নষ্ট হয়ে যাচ্ছি’ কবিতা পাঠ করে শোনান।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন ‘ তরুণ লেখক সৃষ্টিতে, তাঁদের উৎসাহ দিতে দৈনিক সংবাদে কাজ করার দিনগুলি থেকেই আবুল হাসনাত ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। শিল্প বা সাহিত্য বিষয়ক যেকোন তথ্যের প্রয়োজনে আবুল হাসনাতের কাছ থেকে আমি সাহায্য পেয়েছি, পেয়েছি তাঁর দিকনির্দেশনা। দুই বাংলার নবীন ও প্রবীণ সকল সাহিত্যিকের সাথে তাঁর সখ্যতা উল্লেখযোগ্য।‘

রামেন্দু মজুমদার বলেন ’কালি ও কলম হারিয়ে যাবে না। যতই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক, আমরা নিশ্চয়ই হাসনাতের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলব’। তারিক সুজাত তাঁর বক্তব্যে বলেন ’ হাসনাত ভাই হঠাৎ চলে যাবেন, আমরা ভাবিনি। তিনি আরও বলেন, সাদামাটা হাসনাত ভাই কখনো নিজের কাজ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে গর্ব করতেন না। ছিলেন একান্ত নিভৃতচারী।

আবুল হাসানতকে তিনি কিংবদন্তি সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আজ যখন মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর উদযাপন করছি তখন আমাদের মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম কবিতা সংকলন তিনিই করেছিলেন’। এ সময় আবুল হাসনাত একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক না পাওয়ায় তারিক সুজাত বলেন, ‘এতটা অবহেলা তার প্রাপ্য নেই।‘ ডা. সারওয়ার আলী বলেছেন ‘হাসনাত ছিল আত্মপ্রচার বিমুখ মানুষ। তাই আমরা সকলে তাকে জেনেছি মৃত্যুর পরে। জেনেছি সে আমাদের কতভাবে ঋণী করে গেছে। হাসনাত ছিল শিল্প-সাহিত্যের জ্ঞানের ভাণ্ডার।‘

স্মরণানুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন ‘হাসনাতের কাছে আমার অনেক ঋণ। সংবাদে দীর্ঘদিন আমি গাছপাথর নামে লিখি, সেটা আবুল হাসনাতের জন্য হয়েছিল। আহসাব হাবীবের পর আমরা পাই আবুল হাসনাতকে, এমন সম্পাদক আমরা আর পাইনি। তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশে প্রয়োজন সাংস্কৃতিক জাগরণ। আবুল হাসনাত এই সাংস্কৃতিক জাগরণের কাজটিই করতেন। আজ দেশের দুঃসময়ে আবুল হাসনাতের বড় প্রয়োজন ছিল।‘

কবি হাসান আরিফ আবুল হাসনাতের কবিতা পাঠ করে শোনান।অনুষ্ঠানে আবুল হাসনাতকে নিয়ে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ‘আবুল হাসনাত স্মারক’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। 

সমাপনী বক্তব্যে আবুল হাসনাত এর সহধর্মিণী নাসিমুন আরা হক বলেন ‘হাসনাত বই অনেক ভালোবাসত, পড়তে ভালোবাসত। আর প্রিয় ছিল চিত্রকর্ম। পরিবার, দেশ, জাতির প্রতি হাসনাতের ছিল প্রচণ্ড ডেডিকেশন। সাহিত্য ছিল তার প্রাণের উৎস।‘ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

উল্লেখ্য, কালি ও কলমের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এর সম্পাদক আবুল হাসনাত, কবি-নাম মাহমুদ আল জামান,ছিলেন একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, চিত্র-সমালোচক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, প্রগতিচিন্তার নিরলস বাহক ও সর্বোপরি একজন সফল সম্পাদক।

আবুল হাসনাত তাঁর নানাবিধ কাজের মধ্য দিয়ে বাঙালির মনোগঠনের পরিচ্ছন্ন ভাবধারা, স্বরূপের অনুসন্ধান ও বহুত্ববাদী সংস্কৃতির ভাবনাচিন্তায় যে-মাত্রা সঞ্চার করেছিলেন তা এদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেছে। বিশেষত এদেশে শিল্পকলা বিষয়ে মানুষকে উৎসাহী এবং গ্রন্থপাঠে আগ্রহী ও পাঠরুচি তৈরিতে তাঁর ভমিকা অনস্বীকার্য। প্রায় এক বছর আগে ২০২০ সালের পহেলা নভেম্বর তিনি পরলোকগমন করেছেন।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer