Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নদীর ধারে ও সমুদ্র উপকূলে বৃক্ষরোপন

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ১০ নভেম্বর ২০১৯

আপডেট: ১৯:৪৭, ১০ নভেম্বর ২০১৯

প্রিন্ট:

নদীর ধারে ও সমুদ্র উপকূলে বৃক্ষরোপন

বৃক্ষ প্রাকৃতিক পরিবেশ তথা সুরক্ষা বেষ্টনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন মাটি সুরক্ষা করা যায় অপরদিকে বাতাস আটকানোর প্রধান বেষ্টনী হিসেবে কাজে লাগে। সেজন্য আমরা রাস্তার ধারে, পুকুরের ধারে, জলাশয়ের ধারে, নদীর কিনারে এমনকি সাগরের পাড়েও গাছ লাগাতে দেখি। কারণ বিভিন্ন সময়ে মৌসুমী প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দুর্বিপাকে বৃক্ষই আমাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে থাকে। কাজেই আমাদের জানমালের সুরক্ষার জন্য নদী বা সমুদ্রের উপকূলে প্রচুর গাছ লাগানোর কোন বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড়ের তা-বে ক্ষয়ক্ষতি নিম্নতম পর্যায়ে হওয়ার অন্যতম কারণ ছিলো বৃক্ষ।

আমরা কথায় কথা বলি ‘বৃক্ষ তোমার ফলে পরিচয়’। আসলে এখানে ফল একটি প্রতীকী শব্দ মাত্র। আর বৃক্ষের ফল বলতে আমরা যে স্বাভাবিক ফল অর্থাৎ আম, কাঁঠাল, জাম, জামরুল, কলা ইত্যাদিকেই শুধু বোঝানো হয়নি। এখানে বৃক্ষের দ্বারা কল্যাণময় কোন অবদানকেও স্বীকার করা হয়েছে। সেটা হতে পারে ওষুধি গুণের জন্য, হতে পারে কাষ্ঠল গুণের জন্য, হতে পারে প্রাকৃতিক সুরক্ষা বলয় সৃষ্টি করার জন্য, হতে পারে অক্সিজেনের ফ্যাক্টরি ইত্যাদি ইত্যাদি। সেগুলোকেও এখানে সুফল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এখন জলবায়ু পরিবর্তনের যুগ। আগের মতো এখন আর ষড়ঋতুর আবর্তন দেখা যায় না। শীতের সময় শীত না হয়ে এর ব্যাপ্তীকাল হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না হয়ে অন্যসময় বৃষ্টি হতে দেখা যায়। আগে দেখা যেতো বর্ষা মৌসুমে কয়েকটি বজ্রপাত ঘটছে। কিন্তু সেটারও একটা নিয়ম মেনে হতো । সেজন্য বজ্রপাতে তখন মৃত্যুর হারও কম ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর ব্যত্যয় লক্ষ্যণীয়। বছরের যেকোন সময়েই বৃষ্টিপাতের সাথে সাথে বজ্রপাত হতে দেখা যায় এবং বজ্রপাত হলেই সেখানে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। সেজন্য বজ্রপাতকে প্রাকৃতিকভাবেই নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উঁচু গাছ রোপনের চাহিদা তৈরী হয়েছে। সেই উঁচু গাছ হিসেবে তাল, নারিকেল, সুপারি, ঝাউ ইত্যাদি জাতের গাছ লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

আমাদের দেশের সুন্দরবন বাংলাদেশই শুধু নয়, এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ। সেখানে গাছগাছরা থাকার কারণেই বিভিন্ন সময়ে সামুদ্রিক সাইক্লোন, ঝড়, কিংবা নিম্নচাপ বাংলাদেশের উপকুলের ঐ অংশটাকে ক্ষতি করতে পারে না। সর্বশেষ ৯-১০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে সংঘটিত ‘বুলবুল’ নামের ঘুর্ণিঝড় খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, ঝালকাঠি, সাতক্ষীরা অঞ্চলে তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনি। অথচ ১৯৭০ সালের ঘুর্ণিঝড়ে প্রায় ১০ লক্ষ লোক, ১৯৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ে প্রায় দেড়লক্ষ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু ২০০৭ সালে সিডর, ২০০৯ সালে আইলাতেও ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছিল শুধুমাত্র সুন্দরবন বেষ্টনীর কারণে। এতে একটি বিষয় খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, গাছপালা শুধু অক্সিজেন দেয়, কাঠ দেয়, ফল দেয়, তাই নয়, তা দেয় গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সুরক্ষা। আর এই সুরক্ষার মাধ্যমে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে মানবকুলকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।

আমরা দেখি নদীর ভাঙ্গন রোধ, জলাশয়ের ভাঙ্গন রোধ, সমুদ্র কিনারের ভূমিক্ষয় ঠেকাতে গাছ লাগানো একটি কার্যকর ব্যবস্থা। কাজেই নদীর ধারে জলাশয়ের ধারে, সমুদ্র কিনারে প্রয়োজন অনুযায়ী স্থান উপযোগী গাছ লাগাতে হবে। কারণ সমুদ্র কিনারে লম্বা এবং শক্ত ধরনের গাছ লাগাতে হবে যা হতে হবে লবণাক্ত সহিঞ্চু। আবার নদী ও অন্যান্য জলাধারের পাড়ে দীর্ঘমূলী গাছ লাগাতে হবে। এভাবে গাছ লাগিয়ে আমাদের একদিকে প্রাকৃতিক সম্পদ নদ-নদী, খাল-বিল, সমুদ্র উপকুল সংরক্ষণ করতে হবে। অপরদিকে সেই গাছের মাধ্যেমেই প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। গাছের শিকড়ের শক্ত অবস্থানের কারণে মাটির সুরক্ষা হয়। বৃষ্টি, বন্যা কিংবা যেকোন ধরনের পানির প্রবাহ মাটির ক্ষয় করতে পারে না। সেই গাছের পাতাই আবার নির্মল অক্সিজেনের ভা-ার হিসেবে অবদান রাখে। আবার বাতাসও ফেরায়। কাজেই গাছের গুণের শেষ নেই এবং এর প্রাকৃতিক আর কোন বিকল্পও নেই। তাই আসুন সবাই গাছ লাগাই।

লেখক: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
email: [email protected]


বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer