Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

‘দ্য এক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ নিয়ে কেন এত বিতর্ক

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

আপডেট: ১৮:৩৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

প্রিন্ট:

‘দ্য এক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ নিয়ে কেন এত বিতর্ক

ঢাকা: মনমোহন সিং ছিলেন ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রীদের একজন। দেশটির অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচীর স্থপতি বলে মনে করা হয় তাকে। কিন্তু বলিউডে তার জীবন নিয়ে তৈরি এক ছবিকে ঘিরে চলছে তীব্র বিতর্ক।

সমালোচকরা বলছেন, সাধারণ নির্বাচনের আগে এই ছবি মুক্তির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে এবং এতে মিস্টার সিংকে খুবই ব্যাঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিবিসির সুধা জি তিলকের রিপোর্ট:

মনমোহন সিংকে নিয়ে তৈরি এই বায়োপিকের নাম `দ্য এক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার।` ছবিতে দেখা যায় তিনি জাঁকজমকপূর্ণ অফিস কক্ষে বসে আছেন। কংগ্রেসের তৎকালীন প্রধান সোনিয়া গান্ধী যখন তাকে কোন নির্দেশ দেন, তখন মনমোহন সিংকে যেন কিছুটা হতবুদ্ধি দেখায়।

মনমোহন সিং এর ব্যক্তিত্ব নিয়ে একধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেকেই মনে করেন তাকে বোঝা বেশ দুরূহ। সমালোচকরা বলছেন, এই ছবিটি হতে পারতো তার এই দুর্বোধ্য ব্যক্তিত্বের ওপর আলোকপাত করার একটা চেষ্টা। কিন্তু তার পরিবর্তে এটি আসলে তার ওপর আক্রমণের একটি চেষ্টায় পরিণত হয়েছে। একজন সমালোচকের মতে, এটি আসলে খুবই বাজে একটা `প্রপাগান্ডা ফিল্ম`।

এই ছবিতে মনমোহন সিং এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নামকরা বলিউড তারকা অনুপম খের। মনমোহন সিং, তার মতে, একজন জ্ঞানী রাজনীতিক- যাকে অনেকেই ভুল বোঝেন বা একেবারেই বুঝতে পারেন না। অনুপম খেরের মতে নির্মাতাদের চেষ্টা ছিল এই ছবির মাধ্যমে মনমোহন সিং-এর প্রতি মহাকাব্যিক শ্রদ্ধা নিবেদনের।

কিন্তু খুব কম সমালোচকই আসলে একমত হবেন যে এই ছবিতে মনমোহন সিং-এর সঙ্গে সুবিচার করা হয়েছে। ছবিটির চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে মূলত মিস্টার সিং এর মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বারু`র স্মৃতিকাহিনীর ওপর নির্ভর করে । মনমোহন সিং-এর বয়স এখন ৮৬। তিনি ২০০৪ সাল হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দুই দফায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এই সাবেক শিক্ষক এবং আমলা ছিলেন প্রচার বিমুখ এবং সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিতেন খুব কম।

মনমোহন সিং পড়াশোনা করেছেন কেমব্রিজ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। কাজ করেছেন জাতিসংঘ এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ছিলেন। এরপর কংগ্রেসের শাসনামলে অর্থমন্ত্রীও হয়েছেন।

তিনি সুবক্তা নন। রাজনৈতিক কলাকৌশলেও অতটা ভালো নন। তাকে আসলে কখনো কোন নির্বাচনে জিততে হয়নি। কারণ তিনি ছিলেন ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্য, যেখানে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয় না।

অনেকের মতে, মিস্টার সিং এর নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত বিরোধিতার মুখে পড়েছিল তার নিজের দল কংগ্রেসেই।

ছবিটির নাম যে `দ্য এক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার`, তার কারণ, মিস্টার সিং ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ পেয়েছিলেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী নিজে ঐ পদে যেতে অস্বীকৃতি জানানোর পর। যদিও সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বেই সেই নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হয়। ইটালিয়ান বংশোদ্ভূত সোনিয়া গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে সেটি নিয়ে তীব্র সমালোচনা হবে, এমন আশংকাতেই তিনি ঐ পদে যেতে আগ্রহী হননি।

কিন্তু মানুষের ধারণা ছিল, প্রধানমন্ত্রী না হলেও কংগ্রেসের নেত্রী হিসেবে সোনিয়া গান্ধীই ছিলেন আসল ক্ষমতাধর। মানুষের এই বদ্ধমূল ধারণা কখনো মনমোহন সিং ভাঙ্গতে পারেননি।

সঞ্জয় বারু তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, দিল্লীতে তখন একধরনের দ্বৈত ব্যবস্থা চলছিল। সরকার চালাতেন মনমোহন সিং। আর দল চালাতেন সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এই ব্যবস্থা আর কাজ করেনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মিস্টার সিং-এর স্বাধীনতা খর্ব হতে থাকে।

ব্যক্তিগত সততার জন্য মনমোহন সিং-এর খ্যাতি ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে সরকারের বেশ কয়েকটি দুর্নীতির কেলেংকারি প্রকাশ পায়। ২০১৪ সালে বিজেপির কাছে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের জন্য এটিকে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। এই বায়োপিক যে একেবারে কিছুই হয়নি, তা নয়। ছবিটা অনেকটা ডকুমেন্টারী ধাঁচের এবং এটি দর্শকও টানছে বেশ।কিন্তু সমালোচকরা মোটেই খুশি নন। তারা এটিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছেন।

একজনের মতে, "এই ছবির নির্মাণ শৈলিতে শিল্পের কোন ছাপ নেই।" আরেক সমালোচক লিখেছেন, "মনমোহন সিংকে এই ছবিতে মেরুদন্ডহীন ক্রন্দনরত শিশুর মতে করে চিত্রিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার যেসব অর্জন তার কোন স্বীকৃতি এতে নেই। কেবল ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির বিষয়টি ছাড়া।"

কলামিস্ট ভির সাংভি লিখেছেন, কংগ্রেসবিরোধী প্রচারণার জন্য এই ছবি একটি সুবিধেজনক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আরেক সমালোচক শুভ্রা গুপ্তা একই মত জানিয়ে বলেছেন, নির্বাচন যখন সামনে, তখনই যে এই ছবিটি মুক্তি দেয়া হলো এটা কোন `এক্সিডেন্ট` নয়।

মনমোহন সিং ছিলেন ভারতের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী। তাই মনমোহন সিংকে এভাবে চিত্রিত করায় তারাও ক্ষুব্ধ। ভারতে রাজনীতিকদের নিয়ে বায়োপিক খুব কমই হয়। আর কেউ যদি সত্যি ঘটনা তুলেও ধরে, সেটা সহ্য করার ক্ষমতাও ভারতীয় রাজনীতিকদের কম। ১৯৭৫ সালে ভারতে কংগ্রেস সরকার যে জরুরী অবস্থা জারি করেছিল, তার সমালোচনা করে তৈরি একটি ছবি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

`দ্য এক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার` ছবিতে মনমোহন সিং এর মিডিয়া উপদেষ্টার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অক্ষয় খান্না। তিনি অবশ্য ছবিটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। "ভারতের মতো একটি রাজনীতি সচেতন দেশে আপনি যদি একটি অকৃত্রিম রাজনৈতিক ছবি বানান, যাতে সত্যিকারের মানুষ এবং সত্যিকারের ঘটনা থাকবে, তাহলে লোকে এতে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।’’

‘‘অনেক রকমের মতামত এখানে আসবে। সেটাই প্রত্যাশিত। যদি এটা না ঘটতো তাতেই আমি বরং হতাশ হতাম।" তাঁর মতে, "শেষ বিচারে এটি একটি ছবি মাত্র, কোন ভূমিকম্প বা সুনামি নয়। কাজেই এ নিয়ে এত বেশি বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।"-বিবিসি বাংলা

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer