Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

তাঁর উপস্থিতি উপেক্ষার সাধ্য কারো ছিল না

শেখ রোকন

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৪ জুলাই ২০২১

আপডেট: ২৩:০৪, ২৪ জুলাই ২০২১

প্রিন্ট:

তাঁর উপস্থিতি উপেক্ষার সাধ্য কারো ছিল না

-লেখক

গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, আমাদের প্রিয় `ফকির ভাই` ছিলেন মূর্তিমান ঝড়ের মতো। যে কোনও পর্যায়ের আসরে বা সভায় তিনি যেভাবে প্রবেশ করতে পারতেন, গমগমে কণ্ঠ, অট্টহাসি, কথার মাঝেই দুই লাইন গান দিয়ে আশপাশ উচ্চকিত করে তুলতে পারতেন; তার তুলনা হয় না। তাঁর উপস্থিতি উপেক্ষার সাধ্য কারো ছিল না।
 
ফকির আলমগীর স্বভাবে ঝড়ের মতো হলেও কিছু বিষয়ে তিনি ছিল অটল ও স্থির। যেমন একজীবন যেভাবে গণসঙ্গীতে স্থির থেকে গেলেন, তা আর ক`জন পেরেছে? দূর আফ্রিকার নেলসন মান্দেলা, লাতিন চে বা ক্যাস্ত্রো, মরুর বুকের ইয়াসির আরাফাত নিয়ে তার আবেগ ছিল চিরন্তন। তাদের নিয়ে গান রচনা ও পরিবেশন করেছেন, প্রায় আজীবন লিখে গেছেন। হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও সলিল চৌধুরীকেও `অদেখা গুরু` মান্য করতেন। হেমাঙ্গ বিশ্বাস নিয়ে তাঁর সম্পাদিত স্মারকগ্রন্থের নামটি `নদীময়`- `সুরমা নদীর গাংচিল`।
 
পছন্দের বিষয় ও ব্যক্তি নিয়ে ফকির আলমগীর গান বাঁধতে ও গাইতে পছন্দ করতেন। যেমন মান্দেলাকে নিয়ে তার `কালো কালো মানুষের দেশে` গানে কে মুগ্ধ হয়নি? `মান্দেলা দিবস` উপলক্ষে ফকির আলমগীরের লেখা ছিল অবধারিত। এবারও যখন সহকর্মীদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ফকির ভাই লেখা পাঠিয়েছেন কি-না, তখনই জানলাম তিনি হাসপাতালে। ভেবেছিলাম করোনা জয় করে ফিরে আসবেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, ফিরতে পারলেন না।
 
আজ মনে পড়ছে তাঁর সঙ্গে আড্ডার দিনগুলোর কথা। সমকালের পুরানো অফিস থেকে তার কার্যালয় ছিল হাঁটা পথের দূরত্বে। প্রায়শই নিজের নিবন্ধ বা সংবাদবিজ্ঞপ্তি নিয়ে চলে আসতেন। একগাল হেসে বলতেন, আড্ডা দিতে চলে আাসলাম! আর ফকির ভাইয়ের `আড্ডা` মানে মূলত উনিই বলবেন, অন্যরা শুনবে।
 
এই লেখার সঙ্গে যে ছবিটি ব্যবহার করছি, সেটা ২০১৯ সালের জানুয়ারির। মনে পড়ছে, সেদিন তিনি লেখা নয়, রাজনীতি নিয়ে এসেছিলেন। তখন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপ-নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হয়েছে। গায়ক সাফিন আহমেদ জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন; অভিনেত্রী কবরী সারওয়ার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন, এমন খবর মিডিয়ায় ভাসছে। সেটা দেখেই ফকির ভাই মনে করেছেন, তাহলে তিনি কেন নন? রাজনৈতিক অতীত ও সাংস্কৃতিক বর্তমান নিয়ে তিনি কম কিসে! এ বিষয়ে `মিডিয়ার হাওয়া` বুঝতে এসেছেন।
 
মূলত এসেছিলেন `ফরিদপুইরা বাইডি` আবু সাঈদ খানের কাছে। সাঈদ ভাইয়ের কক্ষের সেই আড্ডায় যোগ দেই মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু ভাই ও আমি।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগসূত্রে ফকির আলমগীর আমারও `বড় ভাই`। সেজন্য আমার প্রতি যেমন তার `দাবি` ছিল, তেমনই প্রশ্রয়ও দিতেন। সেদিন তাই কৌতুক করে বললাম- ফকির ভাই, রাজনীতি বাদ দিয়ে আপনি বরং নদী আন্দোলনে নেমে যান! তিনি তখন নদীর কথা বলতে শুরু করলেন। ফেসবুক যোগাযোগের কারণ রিভারাইন পিপল সম্পর্কেও জানতেন। বললেন, `তোমাগো জন্য গান বান্ধমু`। আমি বললাম, শৈশবের নদী নিয়ে বলুন, রেকর্ড করি। তিনি সানন্দে তার শৈশবের কুমার, আড়িয়াল খাঁ, পদ্মা নিয়ে বলেছিলেন।
 
গত রাত থেকে বেদনা ও শোকের বিষয় এই, খোদ ফকির ভাই-ই আর নেই। স্বভাবে নদীর মতো সহজ ও সরল এবং সর্বার্থে নদীর মতো কল্লোলিত মানুষটি কখনো থামতে পারেন, ভাবা যেতো না। অথচ তার সঙ্গে আর দেখা হবে না! যেখানেই থাকুন, ভালো থাকবেন ফকির ভাই!
 
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক। 
 
*সদ্য প্রয়াত গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক এই লেখাটি শেখ রোকেনের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer