ছবি- বহুমাত্রিক.কম
শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের একটি টিলায় অগ্নিকান্ডে প্রায় দেড় একরেরও বেশি বন পুড়ে ভষ্মিভূত হয়। ওই এলাকায় বন্যপ্রাণির বিচরণ থাকায় অগ্নিকান্ডের পরপরই অন্যত্র পালাতে শুরু করে প্রাণিরা। নিরাপদ আবাসের খোঁজে প্রাণিদের প্রাণপণ ছুঁটে যাওয়ার দৃশ্য হৃদয় স্পর্শ করে। বহুমাত্রিক.কম এর ধারণ করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্রিয় আবাসস্থলে আকষ্মিক আগুনের লেলিহান শিখায় প্রাণিরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দৌঁড়ে পালাচ্ছে।
এদিকে, লাউয়াছড়ার বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘হীড বাংলাদেশ’-এর কার্যালয়ের পেছনের (বাঘমারা বন ক্যাম্পে) বনে দু’টি টিলার বেশ কিছু অংশ আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। এতে ছোট-বড় লতা-গুল্ম ও গাছ পুড়ে গেছে।
বনবিভাগের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় বনায়নের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা গাছের ফাঁকে ফাঁকে বন্যপ্রাণীর খাবার তৈরি হয় এমন সব খাবার জাতীয় গাছ রোপণের জন্য শ্রমিকরা সেখানে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে দু’সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্য বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মীর্জা মেহেদী সরওয়ার ও বন মামলা পরিচালক জুলহাস উদ্দিন। তাদের দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে সপ্তাহ খানেক আগে উদ্যানের ফুলবাড়ি চা বাগান মুখেও অল্প পরিমাণ বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
লাউয়াছড়া বনের টিলায় আগুন লাগার বিষয়ে স্থানীয়ভাবে দু’টি বিষয়কে দায়ী করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখানে পাশেই টিলা দখলে নিয়ে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি লেবু বাগান করেছেন। পাশের টিলাটিও দখলে নিতে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিতে পারেন। অন্যভাবেও বনবিভাগের লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এর পরিকল্পনায় বনের টিলায় আগুন লাগতে পারে। তিনবছর পূর্বেও ওই বিট কর্মকর্তা লাউয়াছড়ার বন্যপ্রাণী এলাকার কালাছড়া বিটের দায়িত্বে থাকাকালীন সেখানে কয়েক একর টিলা আগুনে পুড়িয়ে দেন। সে সময়ে ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়।
পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া সবুজ বন
মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সৈয়দ মহসিন পারভেজ বলেন, বন্যপ্রাণী বিচরনকৃত এলাকায় যেভাবেই আগুন লাগুক না কেন এটি জীববৈচিত্র্যের জন্য অপুরনীয় ক্ষতি। ভবিষ্যতে যেন এধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে বনবিভাগকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে বিষয়টি জানা যাবে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সেখানে বনায়নের জন্য আমাদের কিছু শ্রমিকরাও কর্মরত ছিলেন। তবে অনাকাঙ্খিতভাবে আগুন লেগে ঘন্টাখানেক সময় পর্যন্ত চলে গেলেও প্রকৃতভাবে কারা দায়ী তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আসার পর জানা যাবে। সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বহুমাত্রিক.কম